৪ আশ্বিন  ১৪৩০  শুক্রবার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ 

READ IN APP

Advertisement

‘পয়সা ছিল না, পেপারে মুখ ঢেকে লোকাল ট্রেনেই যাতায়াত করতেন’, তাপসের স্মৃতিচারণায় বন্ধুরা

Published by: Sandipta Bhanja |    Posted: February 18, 2020 7:07 pm|    Updated: February 18, 2020 7:07 pm

Tapas Paul used to rides on local train during his struggling period

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: তখন তিনি খ্যাতনামা অভিনেতা। কাঁচা গোফ, সৌম্যদর্শন অভিনেতা বাঙালি সিনেদর্শকদের মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন। ‘দাদার কীর্তি’তে সহজ-সরল মুক্তঝরা হাসি আর অভিনয়েই নজর কেড়েছিলেন। আট থেকে আশি তখন ভাল করে চেনেন কে তাপস পাল! আটের দশকের শুরু। সিনেমা করেও সেরকম পারিশ্রমিক পেতেন না। অতঃপর স্টারসুলভ জীবনযাপন করারও কোনও উপায় ছিল না। গাড়ি নয়, কেরিয়ারের গোড়ার দিকে লোকাল ট্রেনে করে আসতেন কলকাতায়। শুটিং শেষে বেশিরভাগ দিন চন্দননগরে ফিরতেনও সেভাবেই। সেসময়ে ‘তারকা’ পরিচিতিও তৈরি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু, হাতে তো টাকা নেই। অগত্যা লোকাল ট্রেনই ভরসা। তবে তাতেও সমস্যা। পাছে আশেপাশের লোকজন চিনে ফেলেন! তাই খবরের কাগজে মুখ ঢেকে যাতায়াত করতেন তাপস পাল।

রাজনীতির ময়দানে একটা বেফাঁস মন্তব্যই বোধহয় তাঁর জীবনের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল! যার জন্য বহুবার চন্দননগরে তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের কাছে ক্ষমাও চেয়েছিলেন। বন্ধুর অকাল প্রয়াণে তাপস পালের সেসব অজানা কথাগুলোই আজ উঠে এল স্মৃতিচারণায়। ‘দাদার কীর্তি’ তাপস পালকে ইন্ডাস্ট্রিতে জায়গা করে দিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু সেখান থেকে সেরকম টাকা আসেনি তাঁর কাছে। আর তাই পরের বেশ কয়েকটা ছবির শুটিংয়ের সময় চন্দননগরের বাড়ি থেকেই যাতায়াত করতে হত তাঁকে। কারণ, কলকাতায় তখনও পাকাপাকিভাবে থাকতে শুরু করেননি তাপস পাল। নেপথ্যে, আর্থিক অস্বচ্ছল্যতাই দায়ী।

[আরও পড়ুন: ‘বাঁশি’ ছবি দিয়েই ইন্ডাস্ট্রিতে ফিরতে চেয়েছিলেন, শুটিং অসম্পূর্ণ রেখেই চলে গেলেন ‘সাহেব’ ]

প্রথমজীবনে দুর্গাপুরের লাউদোহা গ্রামের প্রাথমিক স্কুলে পড়তেন। বস্তা নিয়ে স্কুলে আসতেন। এরপর চন্দননগরে চলে আসেন। তাঁর শৈশবের বন্ধুদের কাছ থেকেই জানা যায় যে সেসময়ে ভোর সাড়ে ৩টেয় চন্দননগর স্টেশন থেকে লোকাল ধরে কলকাতায় আসতেন। আর রাতের শেষ ট্রেনে চন্দননগরের বাড়িতে ফিরতেন। ভূমিপুত্রের প্রয়াণে তাই সকাল থেকেই তাপস পালের চন্দননগরের বাসভবনের কাছে ভীড় জমিয়েছেন অসংখ্য মানুষ। সকলেই চাইছেন এই বাড়ি থেকেই যখন ‘তাপস পাল’ হয়ে ওঠা, তখন একবারটি তাঁর মরদেহ নিয়ে আসা হোক এই পাড়ায়। এই বাড়িতে। বেসরকারী অর্থলগ্নী সংস্থায় তাঁর নাম জড়ানোর পর থেকেই একাধিকবার বিতর্কের শিকার হয়েছেন। তাই কেমন যেন একটা কুঁকড়ে গিয়েছিলেন পরের দিকে। বন্ধুদের অনেক সময়ে দুঃখপ্রকাশ করে বলতেনও সেসব কথা। শেষজীবনে তিনি যে বেশ মনোকষ্টের মধ্য দিয়েই গিয়েছেন, সেকথাও জানা গিয়েছে অভিনেতার বাল্যবন্ধুদের কাছ থেকে।

প্রয়াত অভিনেতা সাংসদ তাপস পালের পৈতৃক বাড়ি চন্দননগরের ধারাপাড়ায়। শৈশব থেকে কৈশোর এই বাড়িতেই কেটেছে তাপস পালের। বাবা গজেন্দ্র চন্দ্র পাল ছিলেন এলাকার খ্যাতনামা ডাক্তার। যিনি সবসময়ই দরিদ্রদের পাশে থেকেছেন। বর্তমানে এই পৈতৃক বাড়িতে পরিবারের কেউই থাকেন না। আজকে সেই জনমানবশূণ্য পৈতৃক বাড়িতেও কেমন যেন বিষাদের ছায়া। ভূমিপুত্র তাপস পালের মৃত্যুতে গোটা চন্দননগরজুড়ে বিষাদের সুর। অভিনেতাকে নিয়ে বিভিন্ন সময়ে চন্দননগরে নানা বিতর্ক দেখা দিলেও আজকের এই শোকের দিনে সমস্ত কিছু ভুলে চন্দননগরবাসী তাদের ঘরের ছেলের প্রয়াণে শোকে মূহ্যমান।

[আরও পড়ুন: ‘চলে গেল আমার প্রথম অভিনেতা’, তাপস পালের মৃত্যুতে শোকবিহ্বল মাধুরী দীক্ষিত]

Sangbad Pratidin News App: খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে লাইক করুন ফেসবুকে ও ফলো করুন টুইটারে