সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ১৫৫ বছর আগে ঠিক আজকের দিনেই জন্ম নিয়েছিলেন। পরে তৎকালীন সময়ের প্রথিতযশা বাঙালি কবি, শিক্ষাবিদ, সমাজসেবী হিসেবে যথেষ্ট সুনামও অর্জন করেছিলেন। সংস্কৃতে হয়েছিলেন দেশের প্রথম স্নাতক। বিট্রিশ শাসিত ভারতে জাঁকিয়ে বসা পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণার জেরে জুটিয়ে ছিলেন নারীবাদী তকমা। তবে শত প্রতিকূলতার মধ্যেও নিজের রাস্তা থেকে সরে আসেননি সেসময়ের জনপ্রিয় মহিলা সাহিত্যিক কামিনী রায়। আমৃত্যু সাহিত্য, সমাজসেবা ও মহিলাদের উন্নয়নে নিজের জীবন অতিবাহিত করেছেন। সময়ের পাকেচক্রে আর বিস্মৃতির কালো অন্ধকারে হারিয়েছিল সেই মহীয়সী মহিলার স্মৃতি। কিন্তু, ১৫৫ তম জন্মদিনে বিশেষ ডুডুল ফিচারে গুগল তাঁকে সম্মান জানতেই ফের প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছেন তিনি। অনেক নেটিজেনই বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন তাঁর জীবন সংক্রান্ত তথ্য। কর্মকাণ্ডের বিবরণ।
[আরও পড়ুন: ৭ দশক বাদে নতুন নজির, সাহিত্যে দেওয়া হল জোড়া নোবেল]
১৮৬৪ সালের ১২ অক্টোবর অবিভক্ত বঙ্গের বরিশাল জেলার বাসণ্ডা গ্রামে একটি মধ্যবিত্ত শিক্ষিত পরিবারে জন্ম হয় কামিনীদেবীর। বাবা ছিলেন তৎকালীন সময়ের বিখ্যাত লেখক ও ব্রাহ্মসমাজের সক্রিয় সদস্য চণ্ডীচরণ সেন। আর তাঁর বাবা নিমচাঁদ সেন ছিলেন ভাবুক ও ধার্মিক প্রকৃতির লোক। ছোট থেকেই তিনিই কামিনীদেবীকে বিভিন্ন শ্লোক ও আবৃত্তি করে শোনাতেন। যা অনেকটা প্রভাবিত করেছিল ওই মহীয়সীর শিশুমন। বাড়িতে কোনও অতিথি এলে কামিনীকেই ঠাকুর্দার শেখানো শ্লোক পাঠ করে শোনাতে হত। আস্তে আস্তে তাই সংস্কৃত ও বাংলা সাহিত্যের প্রতি আলাদা একটি ভালবাসা তৈরি হয়েছিল তাঁর।
কিন্তু, তখন মেয়েদের পড়াশোনা করাকে একটি নিন্দনীয় কাজ বলে গণ্য হত। সমাজের মাতব্বরদের ধারণা ছিল, লেখাপড়া শিখলেই প্রেম করতে শুরু করবে মেয়েরা। তাই তাদের পড়াশোনার কথা ভাবতেই দেওয়া হত না। এর মাঝেই কামিনীর বাবা ও মায়ের চেষ্টায় মাত্র চার বছর বয়সেই শিক্ষায় হাতেখড়ি হয় তাঁর। ১৪ বছর বয়সে মাইনর পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। দু’বছর পরে প্রবেশিকা পরীক্ষাতেও প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। প্রথম ভাষা সংস্কৃত আর দ্বিতীয় ভাষা ছিল বাংলা। মাত্র ১৮ বছর বয়সে এফ. এ. পরীক্ষায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সংস্কৃত ভাষায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। সংস্কৃতে অনার্স নিয়ে বি. এ. পরীক্ষাতেও উত্তীর্ণ হন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মহিলা গ্র্যাজুয়েট তিনিই ছিলেন। তারপরও অবশ্য তাঁকে চাকরি করতে দেননি বাবা চণ্ডীচরণ। মেয়েকে বলেছিলেন, ‘চাকরি নয় জ্ঞান বৃদ্ধির জন্যই আমি তোমাকে পড়াশোনা করিয়েছি।’
[আরও পড়ুন: জিও-র কল চার্জে সুদিন ভোডাফোন- এয়ারটেলের, দর বাড়ছে শেয়ারের]
বাবার এই একটা কথাই পরের জীবনটা বদলে দিয়েছিল কামিনীর। শিক্ষার মাধ্যমে জ্ঞান বাড়িয়ে তা সমাজের উন্নতির জন্য ব্যবহার করাই জীবনের ব্রত বানিয়ে ছিলেন। কিন্তু, এর মাঝেই তাঁর কবিতার এক গুণগ্রাহী কেদারনাথ রায় বিয়ে করার প্রস্তাব দেন। তাঁকে বিয়ে করে ১৮৯৪ সালে কামিনী সেন থেকে রায় হন তিনি। পরের ১৪ বছরে সংসার করতেই ব্যস্ত ছিলেন। এসময়ে মাত্র একটি কবিতার বই প্রকাশ হয়েছিল তাঁর। কিন্তু, ১৯০০ সালে আচমকা তাঁর এক সন্তানের মৃত্যু হয়। ১৯০৮ সালে মারা যান তাঁর স্বামীও। আর ১৯২০ সালে মৃত্যু তাঁর বাকি দুই ছেলেমেয়ের। পরপর আসা এই আঘাতগুলি চূর্ণবিচূর্ণ করে দিয়েছিল কবির হৃদয়। শোকে মূহ্যমান হয়ে কিছুদিন কাটানোর পর আচমকা পুরনো জীবনে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। হাতে তুলে নেন কলম। রবীন্দ্রনাথের সমসাময়িক এই মহিলা কবির প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘আলো ও ছায়া’। এটির প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হয় ১৮৯৯ সালে এবং অষ্টম সংস্করণ বের হয় ১৯২৫-এ। তাঁর লেখা বাকি বইগুলি হল নির্ম্মাল্য, পৌরাণিকী, অম্বা, গুঞ্জন, ধর্ম্মপুত্র, শ্রাদ্ধিকী, অশোক স্মৃতি, মাল্য ও নির্ম্মাল্য, অশোক সঙ্গীত, সিতিমা, ঠাকুরমার চিঠি, দীপ ও ধূপ, জীবন পথে ও ড: যামিনী রায়ের জীবনী। এর মধ্যে কবিতা ছাড়া অনুবাদ গল্প এবং স্মৃতিকথাও রয়েছে।