শম্পালী মৌলিক: কলকাতা নাট্যজগতে ইন্দ্রপতন। প্রয়াত নাট্যব্যক্তিত্ব ঊষা গঙ্গোপাধ্যায়। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। বৃহস্পতিবার ভোরে নিজের বাসভবনে ঘুমের মধ্যেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বর্ষীয়ান নাট্যকর্মী। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নাট্যজগতে।
১৯৪৫ সালে রাজস্থানে জন্মগ্রহণ করলেও ঊষা গঙ্গোপাধ্যয়ের সঙ্গে কলকাতার যোগাযোগ ছিল নিবিড়। তাঁর পরিবার আদতে উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা। প্রথম জীবনে তিনি ভারতনাট্যমের চর্চা করতেন। পরে যোগ দেন নাটকে। কলকাতার শ্রীশিক্ষায়তনে তাঁর পড়াশোনা। ১৯৭০ সালে মঞ্চস্থ হয় তাঁর প্রথম নাটক ‘মিট্টি কি গাড়ি’। তখন তিনি কলামন্দিরের শিল্পী ছিলেন। নাটকে তিনি বসন্তসেনার ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। এরপর মঞ্চে যাত্রা শুরু হয় তাঁর। সাতের দশকে কলকাতার থিয়েটারে কাজ শুরু করেন এই নাট্যব্যক্তিত্ব। মূলত হিন্দি নাটকের জন্যই তিনি জনপ্রিয়। বাংলাতেও তাঁর অসজস্র গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে। ‘রঙ্গকর্মী’ নাট্যদল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি। এবছর ‘রঙ্গকর্মী’র ৪০ বছর পূর্ণ হল।
ঊষা গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘রঙ্গকর্মী’ প্রযোজিত বিখ্যাত নাটক হল ‘কোর্ট মার্শাল’, ‘রুদালি’, ‘অন্তর্যাত্রা’, ‘মহাভোজ’ ইত্যাদি। ১৯৮৪ সালে মনু ভাণ্ডারির উপন্যাস অবলম্বনে তিনি বানান ‘মহাভোজ’, ১৯৯২ সালে মহাশ্বেতা দেবীর গল্পকে নাট্যরূপ দেন তিনি। মঞ্চস্থ হয় ‘রুদালি’। বের্টোল্ড ব্রেশটের ‘মাদার কারেজ’ অনুসরণে তিনি ‘হিম্মত মাই’ নাটক পরিচালনা করেছিলেন। কাশীনাথ সিংয়ের ‘কাশী কা আসি’র উপর ভিত্তি করে ২০০৩ সালে তিনি ‘কাশীনামা’ নাটক মঞ্চস্থ করেন। তিনি নিজেও একটি সম্পূর্ণ নাটক লিখেছিলেন। নাম ‘খোঁজ’।
অভিনয়ের পাশাপাশি নাটক নির্দেশনাও করতেন তিনি। নাটকের জন্য একাধিক পুরস্কার পেয়েছিলেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সংগীত নাটক অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড। নাট্য পরিচালক হিসেবে এই সম্মান পেয়েছিলেন এই নাট্যব্যক্তিত্ব। ‘গুড়িয়া ঘর’ নাটকের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে সেরা অভিনেত্রীর সম্মানে ভূষিত করে। এই নাটকটি পরিচালনা করেছিলেন তৃপ্তি মিত্র। এছাড়া দেশ বিদেশের অনেক নাট্য উৎসবে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। তাঁর প্রয়াণে শোকের ছায়া সাংস্কৃতিকমহলে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.