Advertisement
Advertisement

Breaking News

Dunki review

রক্তস্নাত বলিউডকে জীবনের গল্প শোনাল ‘ডাঙ্কি’, কেমন হল শাহরুখের নতুন ছবি?

হিরানির অন্য ছবির মতো এখানেও রয়েছে হাসি-কান্নার রোলার কোস্টার।

Film review of Shah Rukh Khan starrer movie Dunki। Sangbad Pratidin
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:December 21, 2023 6:54 pm
  • Updated:December 21, 2023 9:15 pm

বিশ্বদীপ দে: বছরটা কেটে গেল প্রায়। আর এই বছর বলিউডে একের পর এক ব্লকবাস্টারের জন্ম হয়েছে। বছরের শুরুটা যদি ‘পাঠান’ দিয়ে হয়ে থাকে তাহলে একেবারে শেষে এসে ‘অ্যানিম্যাল’ বক্স অফিসে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। আর এই সব বাণিজ্যসফল ছবির তালিকা করতে বসলে একটা বিষয় মোটামুটি কমন পড়ে যায়। তা হল ‘ওভার দ্য টপ’ অ্যাকশন। এবং ভায়োলেন্স। এই বাজারে রাজকুমার হিরানি হাজির করেছেন ‘ডাঙ্কি’। এই ছবিতেও রক্ত আছে। ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ কিছু নেই তেমনও নয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যা রয়েছে, তা হল গল্প। আবেগ ও সম্পর্কের খতিয়ান। বলিউড একসময় এমন ছবি প্রচুর বানিয়েছে। কিন্তু বদলাতে থাকা ট্রেন্ড অন্যদিকে বাঁক নিয়েছে। শাহরুখ খানের মতো মহাতারকাকে নিয়ে হিরানি (পরিচালক হিসেবে তিনিও মহাতারকা) ফিরেছেন গল্পে। কেমন হল পাঁচ বছর ধরে বানানো তাঁর ছবি ‘ডাঙ্কি’?

সেই ‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’ থেকে আমরা জানি রাজকুমার হিরানির (Rajkumar Hirani) ছবিতে নায়কই সর্বেসর্বা হন না। নায়িকা কিংবা অন্যান্য চরিত্রাভিনেতাদেরও স্পেস দেওয়া হয়। গুরুত্ব দেওয়া হয় চিত্রনাট্য ও গল্পের গতিকে। আর এভাবেই হাসি-কান্নার একটা রোলার কোস্টারের মধ্যে দিয়ে গল্প এগিয়ে চলে। এই ছবিও তার ব্যতিক্রম নয়। ‘ডাঙ্কি’র (Dunki) ট্রেলার ও টিজার কিংবা গান বিরাট কিছু জনপ্রিয় হয়নি। বরং ডিসেম্বরের গোড়ায় মুক্তি পাওয়া ‘অ্যানিম্যাল’কে ঘিরে বিতর্ক-প্রশংসার ঝড়ে কখন যেন চুপি চুপি এই ছবি মুক্তির তারিখ এগিয়ে এসেছে। তবে মুক্তির কয়েক দিন আগে থেকে একটা হইহই যে শুরু হয়েছে সেটা সত্যি। কিন্তু তা কখনওই শাহরুখের আগের ছবি ‘জওয়ানে’র ধারেকাছেও আসে না। এই পরিস্থিতিতে ছবি দেখতে বসে বোঝা যায়, হিরানি ইচ্ছে করেই ট্রেলার-টিজারে সেভাবে গল্পের আভাসের বেশি কিছু দেননি। পুরো গল্পটাই তিনি রেখে দিয়েছেন ছবির জন্য।

Advertisement
Dunki Public Review: Twitter user live streams first 50 mins
ডাঙ্কি (ফাইল চিত্র)

[আরও পড়ুন: ‘চা-জল খাওয়ানো হয়’, বিচারপতি সিনহার স্বামীর ‘হেনস্তা’র অভিযোগ ওড়াল CID]

মনু, বল্লি ও বুগ্গু পাঞ্জাবের ছোট্ট জনপদ লাল্টুতে থাকে। আর স্বপ্ন দেখে একদিন পরিবারের পাশে দাঁড়াবে। অভাব দূর করবে। এদেশে থেকে নয়। লন্ডনে গিয়ে। কেন লন্ডন? আসলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধাক্কায় প্রথম বিশ্বের অন্য বহু দেশের মতোই ব্রিটেনের অবস্থাও হয়েছিল তথৈবচ। সেই পরিস্থিতিতে সেখানে কর্মী বা শ্রমিক হিসেবে যাওয়ার সুযোগ ছিল প্রবল ভাবে। ফলে ভারত থেকে, বলা যায় পাঞ্জাব থেকে বহু মানুষ সেখানে গিয়েছিলেন। কিন্তু ১৯৬২ সাল থেকে পরিস্থিতি বদলে যায়। কমে যায় সেখানে গিয়ে কাজ পাওয়ার সুযোগ। সহজে ভিসা পাওয়ায় বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু স্বপ্নটা রয়ে যায়। বহু সাধারণ মানুষের মতো সেটা লালন করছিল মনুরাও। কিন্তু সেই স্বপ্ন কীভাবে পূরণ হবে? এই ছেলেমেয়েদের কেউই সেভাবে পড়াশোনা জানে না। ইংরেজি তো জানেই না। শেষ পর্যন্ত এদের সেখানে পৌঁছে দেওয়া প্রতিজ্ঞা করে হরদয়াল সুখদেব সিং ধিঁলো ওরফে হার্ডি। তাদের দলে ভিড়ে যায় সুখী। এই চরিত্রটিকে বড় যত্নে বুনেছেন হিরানি। স্বল্প উপস্থিতিতেই অসাধারণ অভিনয় করেছেন ভিকি কৌশল। কী করে এই চরিত্ররা লন্ডন পৌঁছয়, সবাই পৌঁছতে পারে কিনা, পৌঁছনোর পরে কী হয় গল্পের পরবর্তী অংশে তা ধীরে ধীরে উন্মোচিত হয়। সেই সঙ্গে জাগতে থাকে নানা প্রশ্ন। মানুষ নিজের শিকড়কে উপেক্ষা করে বিদেশ বিভুঁইয়ে যায় পরিবারের পাশে দাঁড়াতে। কিন্তু সেই আত্মত্যাগের ফলে সে কি সত্যিই সব পায়? ভালো থাকে? এই মৌলিক প্রশ্নটা কিন্তু ছবির গভীরে ছড়িয়ে রয়েছে। ভাবায় শাহরুখের সংলাপ, ”বড় দুঃখের সামনে ছোট দুঃখকে কম মনে হয়।”

Advertisement
ফাইল চিত্র

রাজকুমার হিরানির ছবির যে নিজস্ব চরিত্র, তা এই ছবিতেও ছড়িয়ে রয়েছে। শাহরুখকে (Shah Rukh Khan) দেখে সিটি-হাততালি পড়েছে। পাশাপাশি কমেডি দৃশ্যেও হল ফেটে পড়েছে হাসিতে। আর সেই দৃশ্যের কোনওটায় বুগ্গু, কোনওটায় বল্লি কিংবা তাদের ইংরেজি শিক্ষক গীতু গুলাটির দিকেই ফোকাস করেছে ক্যামেরা। তবে শাহরুখকে তাঁর প্রাপ্য স্পেসটা ঠিকই দিয়েছেন পরিচালক। অনুরাগ কাশ্যপ একবার এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, শাহরুখের মতো তারকাদের ছবিতে নেওয়া মানেই পরিচালককে তাঁর ভক্তকুলকেও ‘কেটার’ করতে হবে। হিরানি সেকথা মাথায় রেখে তেমন দৃশ্যও রেখেছেন। কিন্তু তা গোটা ছবির দৈর্ঘ্যের তুলনায় নগণ্যই। তবুও গোটা চিত্রনাট্য হার্ডিকে ঘিরেই পাক খেয়েছে। আর শাহরুখও ‘পাঠান’ কিংবা ‘জওয়ান’ ছবির ‘বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম’ অবতার ছেড়ে সেই ‘ভিন্টেজ’ অভিনয়ে ফিরেছেন। আবেগের দৃশ্য কিংবা রোম্যান্টিক মুহূর্তে মাত করেছেন তিনি। বিশেষ করে ছবির একেবারে শেষে তাঁর অভিনয় অপূর্ব। বুগ্গু চরিত্রে বিক্রম কোচার দারুণ কমেডি করেছেন। অনিল গ্রোভারও মন্দ নন। বরং বোমান ইরানির গুলাটি চরিত্রটিতে খামতি রয়েছে। বাকি চরিত্রদের ফোটাতে গিয়ে তাঁর চরিত্রটিকে ততটা যত্ন করতে পারেননি পরিচালক। শাহরুখের বিপরীতে তাপসী কোথাও চমৎকার, কোথাও খানিক নিষ্প্রভ। বরং ‘মনমর্জিয়া’য় একই রকম পাঞ্জাবি যুবতীর চরিত্রে তিনি যেন আরও সাবলীল ছিলেন।

Dunki
ফাইল চিত্র

[আরও পড়ুন: ‘চিকিৎসাতেও উন্নতি নেই’, আদালতে দাবি পার্থর আইনজীবীর]

এই ছবির সম্পাদনা, ক্যামেরা সবই হিরানির বাকি ছবির মতো দর্শককে ঘড়ি বা মোবাইলে সময় দেখতে দেয় না। গানগুলির প্রয়োগ, বিশেষ করে সোনু নিগমের গানটি, সুপ্রযুক্ত। হিরানি হাসাতে পারেন, কাঁদাতেও। সেই মুহূর্তগুলির নির্মাণে সাহায্য করে গান ও আবহসঙ্গীত। কিন্তু এত কিছুর পাশাপাশি গল্পের বয়নে কিছু ‘কিন্তু’ রয়ে যায়। ‘ডাঙ্কি মেরে’ দেশের পর দেশ পেরিয়ে লন্ডনে পৌঁছনোর জার্নিটা আরও কিছুটা জায়গা পেতে পারত। ছবির প্রথমার্ধের গতি কিছুটা ক্ষুণ্ণ হয় দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে। আবার শেষে এসে সামলে নেয় চিত্রনাট্য। কিন্তু এই ‘খুঁত’ সামলেও একটা কথা বলাই যায়। আর একটা ‘মুন্নাভাই’ কিংবা ‘থ্রি ইডিয়টস’ হয়তো হয়নি। তবু হিরানি বলিউডে এক ঝলক অন্য বাতাস এনে দিলেন। এই রক্তস্নাত টিনসেল টাউনকে জীবনের গল্প শোনাতে তাঁর মতো পরিচালকেরই প্রয়োজন ছিল।

Dunki
ফাইল চিত্র

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ