৮ আশ্বিন  ১৪৩০  মঙ্গলবার ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ 

READ IN APP

Advertisement

উত্তরবঙ্গে উধাও ১৬ প্রজাতির নদীয়ালি মাছ! গবেষণায় উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য

Published by: Kishore Ghosh |    Posted: April 19, 2022 3:11 pm|    Updated: April 20, 2022 2:15 pm

Study Says, 16 species of river fish disappear in North Bengal! | Sangbad Pratidin

বিশ্বজোতি ভট্টাচার্য: (প্রথম পর্ব) উত্তরের রূপালি শস্য ‘বোরোলি’ মাছ (Boroli Fish) বিলুপ্তির পথে! কৃত্রিম প্রজনন সম্ভব না হলে সুস্বাদু ওই জলজ প্রাণী অচিরে ইতিহাসে জায়গা নেবে এমনই শঙ্কা মৎস্য দপ্তরের কর্তাদের। ইতিমধ্যে বিলুপ্ত হয়েছে অন্তত ষোলোটি প্রজাতির নদীয়ালি মাছ। পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকের অনুসন্ধানে জানা গিয়েছে, উত্তরের নদীগুলো থেকে আরও অন্তত তেইশ প্রজাতির সুস্বাদু মাছ বিলুপ্তির পথে। বিরল প্রজাতির কিছু মাছ প্রযুক্তির সাহায্যে রক্ষা করা যায় কি না , সেটা নিয়েই এখন চলছে বিস্তর গবেষণা।

তিন দশক আগের নদীয়ালি মাছ বোরোলি ছিল উত্তরের ‘আইডেনটিটি’। কোচবিহারের রাজ দরবারের গল্প-গাথায় জানা যায়, মহারানি ইন্দিরাদেবী যখন কলকাতা অথবা মুম্বইয়ে থাকতেন, তার জন্য বিমানে বোরোলি মাছ পাঠানো হত। শুধুই কি রাজদরবার! হাল আমলে রাজ্যের প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু ওই মাছের স্বাদে মুগ্ধ ছিলেন। উত্তরবঙ্গ সফরে এলে তাঁর মেনুতে রাখা হত বোরোলি। কয়েক বছরে তিস্তা, তোর্সা, জলঢাকা নদী থেকে ওই মাছ যে উধাও হতে বসেছে প্রতিদিনের অভিজ্ঞতায় তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন মৎস্যজীবীরা।

[আরও পড়ুন: ছিঃ! ৫ বছরের মেয়ের গোপনাঙ্গে হাত দিয়ে যৌন চাহিদা মেটাল বাবা! তারপর…]

তিস্তাপাড়ের দোমহানি এলাকার হেমেন দাস, নুবাস দাস জানান, পনেরো-কুড়ি বছর আগেও রাতে নৌকায় ভেসে অন্তত ত্রিশ কেজি মাছ ধরেছেন। এখন দিনরাত খেটে তিন কেজি মাছও মেলে না। বিপদ বুঝে বোরোলি প্রজাতির মাছের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য কোচবিহারে পুকুরে পরীক্ষামূলক চাষ শুরু হলেও বাণিজ্যিক সাফল্য এখনও মেলেনি। কোচবিহার জেলা মৎস্য আধিকারিক সম্পদ মাঝি বলেন, “প্রজননে সাফল্য না মেলা পর্যন্ত বোরোলি মাছ রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে,এটা বলা যাবে না। এখন তোর্সা নদী থেকে চারা সংগ্রহ করে পুকুরে চাষ হচ্ছে।”

তবে শুধু বোরোলি নয়, মৎস্য গবেষকরা জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে মহানন্দা, রায়ডাক, সংকোশ, আত্রেয়ী, টাঙন, কালজানি, করলা, ধরলা, নাগর নদী থেকে হারিয়েছে পাবদা, চিতল-সহ ষোলো প্রজাতির মাছ। বিলুপ্তির পথে তিনকাটা, কালবোস সহ ২৩ প্রজাতির মাছ। নদীগুলো যে ক্রমশ মাছ শূন্য হতে বসেছে, সেটা সারা ভারত মৎস্যজীবী ও মৎস্য শ্রমিক সংগঠনের সাম্প্রতিক সমীক্ষাতেও স্পষ্ট। সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শিবেন পৈত জানান, নদীতে মাছ কমে যাওয়ায় নিরুপায় হয়ে তিস্তা, তোর্সা, জলঢাকা ও রায়ডাক নদীপাড়ের ২০ হাজার মৎস্যজীবী গত পনেরো বছরে মাছ ধরার পেশা ছেড়ে কেরল, দিল্লি, উত্তর প্রদেশে দিনমজুরের কাজে চলে গিয়েছে। অন্যদিকে বাজারে বিরল হতে বসায় অত্যাধিক দামের কারণে উত্তরের মৎস্য রসিক বাঙালি নদীয়ালি মাছের স্বাদ ভুলতে বসেছেন। বাধ্য হয়ে স্থানীয় পুকুরে চাষ করা অথবা অন্ধ্রপ্রদেশ ও বিহারের মাছের উপর নির্ভরশীল হয়েছে।

[আরও পড়ুন: ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব সরাসরি গয়নার বাজারে, আকাশছোঁয়া সোনা-রুপোর দাম]

কেন এমন পরিস্থিতি? পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন জলপাইগুড়ি কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের মৎস্য গবেষক ইন্দ্রনীল ঘোষ অনুসন্ধান করে জানিয়েছেন, ক্রমশ জনসংখ্যা বৃদ্ধি হওয়ায় নদীর বাস্তুতন্ত্রের দফারফা হয়েছে। প্রতিটি প্রজাতির মাছের নিজস্ব ঘরানার বাসস্থান রয়েছে। যেমন, বোরোলি বেশি পাথুরে ও বালিযুক্ত পরিবেশে থাকে না। দিনে গভীর ঠান্ডা জলে এবং সূর্যাস্তের পর হাল্কা স্বচ্ছ জলে বসবাস করে। খট্টিপুটি জলজ উদ্ভিদের শিঁকড়ের ধারে বসবাস করে। শীলন মাছ স্রোতে গা ভাসিয়ে বাঁচে। ইন্দ্রনীলবাবু বলেন, “উত্তরের প্রতিটি নদী নাব্যতা হারিয়েছে। কমেছে জলের স্রোত। দূষণ বেড়ে চলায় জলজ উদ্ভিদ, শ্যাওলা নষ্ট হয়েছে। বেড়েছে জলের অম্লতা। সব মিলিয়ে বসবাস উপযোগী পরিবেশ নষ্ট হওয়ায় নদীয়ালি মাছের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়েছে।”

Sangbad Pratidin News App: খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে লাইক করুন ফেসবুকে ও ফলো করুন টুইটারে