Advertisement
Advertisement

Breaking News

Bidhan Chandra Roy

বিধানচন্দ্র রায় ও কল্যাণীর ‘প্রেম’, মিথ ও মিথ্যের নেপথ্য কাহিনি

চাঁদমারি হল্ট স্টেশন থেকে কল্যাণী।

Busting the myth of BC Roy's love with Kalyani | Sangbad Pratidin
Published by: Kishore Ghosh
  • Posted:June 29, 2023 6:25 pm
  • Updated:June 30, 2023 8:06 pm

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কল্যাণী কে হয় ডা. বিধানচন্দ্র রায়ের (Bidhan Chandra Roy) ? কল্যাণী কি কিংবদন্তি চিকিৎসক নীলরতন সরকারের মেয়ে? একদা যাঁর প্রেমে পড়েছিলেন মহান বাঙালি চিকিৎসক তথা পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী। যদিও ‘ভিলেন’ বাবার কারণে ভেঙে যায় সম্পর্ক। এবং হলি-বলি-টলি ছবির নায়কের মতোই একদা ক্ষুদে মার্কিন উপনিবেশ ‘রুজভেল্টে নগরে’র নাম ‘কল্যাণী’ রাখেন বিধান রায়, ঠিক যেন দাগা খাওয়া প্রেমিক।

এই গল্প প্রচলিত। এই কাহিনি সত্যের মতো। সত্য নয়। ইতিহাস মিথের জন্ম দেয়, বহু মিথ মিথ্যের জনক। যেমন, বিধান রায়কে নিয়ে বঙ্গভূমিতে ছড়িয়ে সত্যি-মিথ্যের ককটেল হাজার কাহিনি। তা যেমন তাঁর ধন্বন্তরী চিকিৎসা নিয়ে, তেমনই প্রেম নিয়ে। একথা সত্যি যে তিনি কিংবদন্তি চিকিৎসক ছিলেন। পরাধীন ভারতে, রবীন্দ্রনাথের নোবেল প্রাপ্তির বছর দুই আগে, সেই ১৯১১ সালে ইংল্যান্ডে অর্জন করেন এমআরসিপি এবং এফআরসিএস ডিগ্রি। আসল কথা তিনি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তথা ডিগ্রির চেয়েও বড় চিকিৎসক ছিলেন। সেই মানুষটাই বাংলার দ্বিতীয় এবং অন্যতম সফল মুখ্যমন্ত্রী। একদা কলকাতার মহানাগরিকও। অর্থাৎ এক জীবনে অতিরিক্ত সফল মানুষ। এমন মানুষ কালে কালে মিথ হয়ে উঠবেন, একই কারণে মিথ্যের ফাঁদে পড়বেন, তাও স্বাভাবিক। প্রশ্ন হল, তাহলে সত্যিটা কী? কল্যাণী কে?

Advertisement

[আরও পড়ুন: ‘আপনার পিঠে কি ব্যথা?’ কেনেডিকে একনজর দেখেই রোগনির্ণয় করেছিলেন বিধান রায়!]

উত্তর পেতে ডাক্তার নীলরতন সরকারের পরিবার সম্পর্কে খানিক জানতে হবে। যেহেতু গল্পবাজ বাঙালির কাহিনিতে কল্যাণীর পিতা এনআরএস। এই নীলরতন সরকারের সত্যিকারের স্ত্রী ছিলেন নির্মলা দেবী। নীলরতন-নির্মলার পাঁচ মেয়ে এবং এক ছেলে। একমাত্র পুত্রসন্তানের নাম অরুণ প্রকাশ সরকার। পাঁচ মেয়েরা হলেন নলিনী বসু, অরুন্ধতী চট্টোপাধ্যায়, শান্তা সেন, মীরা সেন এবং কমলা চট্টোপাধ্যায় (বিয়ের পর পদবী বদলায়)। এদের স্বামীরা হলেন যথাক্রমে ডা. ডি এন বসু, কেদারনাথ চট্টোপাধ্যায়, ভি এন সেন, সুশীল কুমার সেন, অশোক চট্টোপাধ্যায়। প্রত্যেকেই সেকালে সুপ্রতিষ্ঠিত। প্রশ্ন হল, এর মধ্যে কল্যাণী কোথায়?

Advertisement

তিনি কি নীলরতন-নির্মালার সন্তান নন! তবে কি নীলরতনের দ্বিতীয়পক্ষ বলেও কিছু ছিল! ট্রেনে-বাসে, চায়ের দোকানে, হোয়াটসঅ্যাপ ইউনিভার্সিটিতে ভবিষ্যতে এই গল্পও ছড়াতে পারে। যদিও প্রকৃতি সত্য হল কল্যাণী নামে নীলরতন সরকারের কোনও সন্তানই ছিল না। মেয়ে থাকলে তবে না তাঁর সঙ্গে বিধানচন্দ্রের প্রেম, তবে না প্রেমে বাধা দেওয়ার প্রশ্ন, প্রেম ভাঙা, সেই ভাঙা স্মৃতিতে ‘রুজভেল্ট নগর’-এর কল্যাণী হওয়া। আদতে সবটাই সৃষ্টিশীল বাঙালির কল্পনার জোর।

তবে ‘রুজভেল্ট নগর’ থেকে কল্যাণী হয়ে ওঠার একটা গল্প আছে। তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলেছে। সেই সূত্রেই কলকাতা থেকে প্রায় পঞ্চাশ কিলোমিটার দূরে মার্কিন সেনা ঘাঁটি ‘রুজভেল্ট নগর’ গড়ে উঠেছিল। যার অংশ ছিল বিমান ঘাঁটি, সেনানিবাস, সেনা হাসপাতাল ইত্যাদি। কাছেই ‘চাঁদমারি হল্ট’ স্টেশন। মনে করা হয়, গঙ্গার ধারের নদিয়া জেলার ৪৫টি গ্রাম নিয়ে গড়ে উঠেছিল এই নগরী। যার পরিকল্পনা করেন স্বয়ং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট।

[আরও পড়ুন:  যেন সাক্ষাৎ ধন্বন্তরী! বিধানচন্দ্র রায়ের জন্মদিনেই দেশজুড়ে পালিত হয় ‘ডক্টরস ডে’]

কিন্তু ইতিহাস থমকায় না। গড়িয়ে চলে। অতএব, হিটলারের জার্মানির আত্মসমর্পণে মারণ যুদ্ধের আগুন নিভতে শুরু করে। ভারত থেকে বিদায় নেয় মার্কিন সেনাও। এর পর থেকে পরিত্যক্ত হয়েই পড়েছিল ওই মার্কিন সেনা ঘাঁটি। জঙ্গলে ঢেকে গিয়েছিল রুজভেল্ট নগরী। পঞ্চাশের দশকে দূরদর্শী মুখ্যমন্ত্রী বিধান রায় ঠিক করেন প্রাণ ফেরাবেন মৃত নগরীর। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, শিল্প যোগাযোগ সবে সেরা হবে সেই শহর।

যেমন কথা, তেমন কাজ। ১৯৫১ সালে রাজ্যের নতুন আধুনিক শহরের শিলান্যাস করেন তৎকালীন রাজ্যপাল কৈলাশনাথ কাটজু। ১৯৫৪ সাল। ‘চাঁদমারি হল্ট’ স্টেশনের নতুন নাম হয় ‘কল্যাণী’। এরপর কবে যেন গোটা শহরটাই কল্যাণী হয়ে গেল! সেই সঙ্গে গজালো কিংবদন্তি চিকিৎসক তথা দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রশাসককে নিয়ে আশ্চর্য প্রেম কাহিনি। যা আজও সত্যির মতো এক মিথ্যে হয়ে বাঙালির ঘরে ঘরে ঘুরছে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ