গৌতম ব্রহ্ম: টিভিতে, খবরের কাগজে সবকিছুতেই নোভেল করোনা ভাইরাস নিয়ে খবর। সর্বত্র আতঙ্ক। ভয় পেয়ে গিয়েছিল আট বছরের শিশু। চিকিৎসক বাবাকে প্রশ্ন করেছিল, “বাবা, করোনা কি আমাদের মেরে ফেলবে?” হাসপাতাল থেকে ফিরে চমকে গিয়েছিলেন চণ্ডীগড় পিজি হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. রবীন্দ্র খাইওয়াল। ছেলের চোখমুখে যে প্রবল ত্রাসের ছাপ! শিশুমনের আতঙ্ক কাটাতে তখনই করোনা নিয়ে কমিকস তৈরির সিদ্ধান্ত নেন ডা. খাইওয়াল। সঙ্গী হন স্ত্রী সুমন মোর। সুমন পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক-বিজ্ঞানী। এবং দু’জনে মিলে মাত্র বাহাত্তর ঘণ্টায় তৈরি করে ফেলেছেন ২২ পাতার করোনা কমিকস ‘kids vaayu and corona.’ স্ক্রিপ্টের সঙ্গে মানানসই ভাবে অ্যানিমেশন চরিত্র খাড়া করা হয়েছে, যাতে সাহায্য করেন দুই পড়ুয়া-শিল্পী।
ডা. খাইওয়াল জানান, “শনিবার কাজ শেষ হয়েছে। কয়েক জনকে কমিকসটি শেয়ার করেছিলাম। খবর পায় ভারত সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অধীন ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল’। সংস্থার অধিকর্তা ডা. সুদীপ সিং যোগাযোগ করেন আমার সঙ্গে। বইটি সরকারি উদ্যোগে প্রকাশ করার ইচ্ছাপ্রকাশ করেন। আমরা সম্মতি জানাই।” সোমবার বইটির ডিজিটাল এডিশন প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। ইতিমধ্যে সেই করোনা-কমিকস বিভিন্ন বোর্ডের মারফত স্কুলগুলিতে পাঠিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ায় করোনা কমিকস ইতিমধ্যেই ভাইরাল।
বুধবার ফোনে ধরা হল রবীন্দ্রকে। ডাক্তারবাবুর প্রতিক্রিয়া, “করোনা-আতঙ্ক কার্যত গণ হিস্টিরিয়ার চেহারা নিয়েছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিশুরা। সতর্কতা ভাল, কিন্তু আতঙ্ক তো মানসিক স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক!” জানালেন, তাঁর ছেলে এখন দিনরাত বাবা-মায়ের লেখা কমিকস পড়ছে। বন্ধুদেরও পড়াচ্ছে। কমিকসের নায়ক ‘বায়ু’ ইতিমধ্যেই শিশুদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ডা. খাইওয়াল জানালেন, “পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে বায়ু দূষণ নিয়ে একটি অ্যানিমেশন প্রকল্পে কাজ করছিলাম। তার জন্যই বায়ু চরিত্রটি নির্মাণ করা হয়েছিল। সেই ‘সুপার হিরো’-কেই করোনা মোকাবিলার ম্যাসকট হিসাবে ব্যবহার করেছি। এখনও পর্যন্ত ডিজিটাল দুনিয়াতেই আটকে রয়েছে ‘kids vaayu and corona’।” ডা. খাইওয়াল জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, কমিকস কয়েক দিনের মধ্যেই পনেরোটি ভাষায় অনূদিত হবে। ভবিষ্যতে বই আকারেও প্রকাশিত হবে।”
করোনা ভাইরাস অবশ্য রোমানীয় সাহিত্যে আগেই জায়গা করে নিয়েছে। সেই ‘করোনাভাইরাস’ অবশ্য নিজেই ছিল মুখোশধারী। তাছাড়া ১৯৮১ সালে ‘দ্য আর্থ অফ দ্য ডার্কনেস’-এ, ২০০৮ সালে সিলভিয়া বাউনির ‘এন্ড অফ ডে’স-২০২০’ ভাইরাস আক্রমণকে প্রতিপাদ্য করেই লেখা হয়েছিল। সেই তালিকায় এবার জুড়ে গেল ভারতীয় দম্পতির নাম।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.