সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শনিবার সন্ধ্যায় নাগাল্যান্ডের (Nagaland) মন জেলার ওটিং গ্রামে সেনার প্যারা স্পেশ্যাল ফোর্সের গুলিতে ঝাঁজরা হন ১৪ জন নিরীহ গ্রামবাসী। মর্মান্তিক ঘটনায় তোলপাড় গোটা দেশ। সোমবার বিষয়টি নিয়ে সংসদে শোরগোল ফেলে দেন বিরোধীরা। যা নিয়ে মঙ্গলবারও উত্তপ্ত ছিল সংসদ। এর মধ্যেই সেদিনের ঘটনায় সেনার গুলিতে আহত এক গ্রামবাসী অভিযোগ করলেন, তাঁদের গাড়িকে থামতে বলেনি সেনা, বরং সরাসরি গুলি ছোঁড়া হয়। অভিযোগকারীর বক্তব্য, এলোপাথাড়ি গুলি ধেয়ে আসছিল তাঁদের দিকে। সেদিন রাতে মৃত গ্রামবাসীদের পোশাক পরিবর্তনের চেষ্টা হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
নাগাল্যান্ডে গুলি কাণ্ডের রাতে সেনার গুলিতে আহত হন বছর বাইশের যুবক শেইওয়াং। তিনি সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, “সেনা আমাদের থামতে বলেনি। এলোপাথাড়ি গুলি ছুটে আসছিল।” শেইওয়াং-এর এই বক্তব্যের পর সেনার দিকে অভিযোগ আঙুল উঠছে। এই সঙ্গে নাগাল্যান্ডে গুলি কাণ্ডে নতুন করে রহস্য ঘনাচ্ছে।
এদিকে শনিবার রাতে সেনার অতর্কিত গুলিতে মৃত্যু হয়েছিল সোমওয়াং নামে এক গ্রামবাসীর। সোমওয়াংয়ের এক আত্মীয় জানিয়েছেন, রাতে গুলির আওয়াজ শুনে তিনি ঘটনাস্থলে পৌঁছান। সেই সময় দেখেন, সোমওয়াংয়ের দেহ অর্ধনগ্ন অবস্থায় পড়ে রয়েছে। অন্য মৃতদের পোশাকও বদলে ফেলার চেষ্টা হয়েছে।
মর্মান্তিক ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় বাসিন্দা কিপওয়াং কোনাক। একটি সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন, “যখন গুলির শব্দ পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান, দেখেন একটি পিকআপ ভ্যান এলাকা ছেড়ে যাচ্ছে। ওই গাড়িটির পিছনে ধাওয়া করলে তাঁরা দেখেন আরও তিনটি গাড়িতে অসম রাইফেলসের সেনা রয়েছে।” সোমওয়াংয়ের আত্মীয়ের সঙ্গে একমত কোনাক জানিয়েছেন, “ওরা (সেনা) মৃতের পোশাক বদলানোর চেষ্টা করে সেদিন।” কোনাক প্রশ্ন তুলেছেন, “যদি এই ঘটনা ভুল করেই ঘটিয়ে ফেলে থাকে অসম রাইফেলসের জওয়ানরা, তবে মৃতদের পোশাক বদলে ফেলার চেষ্টা হল কেন!”
ওটিং গ্রামে গুলি কাণ্ডের ঘটনাস্থলে পৌঁছেছিলেন আরও এক স্থানীয় মনফি। তিনি মৃতদেহের ভিডিও রেকর্ডিং করেন। তাঁর কথায়, “আমরা যখন ওই জায়গায় পৌঁছাই, দেখি সেনার একটি পিকআপ ভ্যান দাঁড়িয়ে রয়েছে। তার মধ্যে মৃতদেহগুলিকে তোলা হয়েছে। ওই দৃশ্য দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়ি।”
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার নাগাল্যান্ডের ঘটনা নিয়ে নাগা আর্মির তরফে বিবৃতি জারি করা হয়েছে পিপলস রিপাবলিক অফ নাগাল্যান্ডের লেটারহেডে। এই পিপলস রিপাবলিক অফ নাগাল্যান্ড (Republic of Nagaland) আসলে এনএসসিএনের তৈরি নির্বাসিত সরকার। যারা দেশের বাইরে থেকে ভারত সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। বিচ্ছিন্নতাবাদী এই সংগঠন তথা ভারতীয় সেনার সমান্তরাল নাগা আর্মির হুঁশিয়ারি, ”যেদিনই হোক, নিরীহ নাগরিকদের এই মৃত্যুর বদলা নেওয়া হবে। আমাদের আশা আমাদের জনগণ বুঝতে পারছে, কবে, কখন কীভাবে পদক্ষেপ করতে হবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.