সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কৃষ্ণা নদীর তীরে সমস্ত বেআইনি নির্মাণ ভেঙে ফেলা হবে বলে গত সপ্তাহে ঘোষণা করেছিলেন অন্ধ্রপ্রদেশের নবনির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী জগনমোহন রেড্ডি। তখন বোঝা যায়নি আসল লক্ষ্যটা কী! এবার অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার ২০টি বাড়ির মালিককে নোটিস পাঠাতেই ছবিটা স্পষ্ট হয়ে গেল। কারণ, ওই ২০টি বাড়ির মধ্যে একটির বাসিন্দা রাজ্যের সদ্য প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডু ও তাঁর পরিবার।
[আরও পড়ুন- প্রাচীন পদ্ধতিতে জল সংরক্ষণই বাঁচিয়ে রেখেছে এই গ্রামের বাসিন্দাদের]
কৃষ্ণা নদীর তীরে ছবির মতো প্রাকৃতিক শোভা। তার পাশেই অবস্থিত চন্দ্রবাবুর বিলাসবহুল বাংলো। রাজ্য প্রশাসন হায়দরাবাদ থেকে সরে বিজয়ওয়াড়া চলে যাওয়ার পর গত চার বছর ধরেই এখানে থাকেন চন্দ্রবাবু। শুক্রবার সেই বাংলোর দেওয়ালে নোটিস সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছে। ছয় একর জুড়ে বিস্তৃত বাংলোর একতলায় বহু কংক্রিটের নির্মাণ হয়েছে। আছে একটি সুইমিং পুল, হেলিপ্যাড। দোতলায় থাকার জায়গা। আছে দশটি অস্থায়ী ছাউনি। সরকারের বক্তব্য, কোনও অনুমোদন ছাড়া কৃষ্ণা নদীর অববাহিকার একশো মিটারের মধ্যে তা বানানো হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে চন্দ্রবাবুকে জবাব দিতে হবে। না হলে বাংলো খালি করতে হবে। নোটিস জারি হয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশ ক্যাপিটাল রিজিয়ন ডেভেলপমেন্ট অথরিটির তরফে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, চন্দ্রবাবু নায়ডুর আট কোটির ভবন ‘প্রজা বেদিকা’ কয়েকদিন আগেই ভেঙে ফেলেছে রাজ্য প্রশাসন। প্রশাসনিক আধিকারিকদের বৈঠকে অমরাবতীর এই বাড়িটি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন জগনমোহন। তারপর মঙ্গলবার রাত থেকেই ভাঙার কাজ শুরু করে দেয় রাজ্য প্রশাসন। জনতার সঙ্গে দেখা করা, সাংবাদিক বৈঠক ও অবসর সময়ে কাজের জন্য ওই ভবনটি বানিয়েছিলেন চন্দ্রবাবু। তেলুগু দেশম পার্টি ক্ষমতায় থাকার সময় নায়ডুর বাড়ির পাশে ‘প্রজা বেদিকা’ তৈরি করেছিল। রাজ্যের নতুন সরকারকে চিঠি লিখে চন্দ্রবাবু আর্জি জানিয়েছিলেন এই বাড়িতে তাঁকে থাকতে দেওয়া হোক। আর ‘প্রজা বেদিকা’কে বিরোধী নেতার বাসভবন হিসেবে ঘোষণা করা হোক।
[আরও পড়ুন- গণধর্ষণের প্রতিবাদ, শাস্তিস্বরূপ মা-মেয়ের মাথা মুড়িয়ে গোটা গ্রাম ঘোরাল অভিযুক্ত]
অভিযোগ, তাঁর সেই আবেদনে সাড়া দেয়নি রাজ্য প্রশাসন। ‘প্রজা বেদিকা’ ভাঙা শুরু হতেই তেলুগু দেশম পার্টির নেতারা নতুন সরকারের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ‘প্রজা বেদিকা’ ভাঙার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা হয়। যুক্তি ছিল, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করা হচ্ছে। কিন্তু, আদালতে উল্টে বিপত্তি ঘটেছে। আদালত জানিয়ে দেয়, নির্মাণটিই বেআইনি। তাই তা ভেঙে ফেলায় কোনও সমস্যা নেই। পাশাপাশি, বাড়িটি তৈরির খরচ চন্দ্রবাবু ও তৎকালীন পুরমন্ত্রী পি নারায়ণার কাছ থেকে আদায় করার বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেবে বলে আদালত জানিয়েছে। জগনকে কটাক্ষ করে চন্দ্রবাবু বলেছিলেন, এমন অনেক মূর্তি আছে যেগুলির কোনও অনুমতিই নেই। শুধু তাই নয়, বেআইনি জমির উপর তৈরি করা হয়েছে সেই মূর্তিগুলি। সে ব্যাপারে কি কোনও ব্যবস্থা নেবে রাজ্য সরকার? তাঁর ইঙ্গিত ছিল জগনের প্রয়াত পিতা তথা রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওয়াই এস রাজশেখর রেড্ডির মূর্তির দিকে। কিন্তু, তাতে কান না দিয়ে জগন বুঝিয়ে দিয়েছেন, রাজনৈতিক ‘বদলা’র রাস্তা থেকে তিনি আপাতত সরছেন না!