সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: গত এক দশকে বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতির কারণে ভাটা পড়েছে মোদি ম্যাজিকে। এই বিষয় আগেই বুঝে গিয়েছে আরএসএস (RSS)। সেই কারণে মোদির বদলে ‘শ্রীরাম’কেই বেশি ভরসা করছে সংঘ পরিবার। ইতিমধ্যেই মিলেছে সেই ইঙ্গিত। এবার কি নিজেদের উগ্র হিন্দুত্বের পথেও বদল করতে চাইছে হেডগেওয়াড় ভবন? নাগপুরের সদর দপ্তরে কানে এসেছিল এই ফিসফাস। শুক্রবার সংঘ প্রধান মোহন ভাগবতের কথায় সিলমোহর লাগল তাতেই। অসমের এক কর্মসূচি থেকে এদিন তিনি বলেন, “সবার ধর্মই এক। তা হল মানবধর্ম। এটাই সনাতন ধর্ম।”
এদিন একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিতে অসম গিয়েছিলেন ভাগবত। যেখানে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন ধর্মীয় নেতা। সেখানেই ভাগবত যা বললেন, তা শোনার পর বিস্মিত অনেকেই। তিনি বলেছেন, “আমাদের দেশে ভিন্ন পথ রয়েছে। কিন্তু আমরা সবাই একটি পরম্পরাই মেনে চলেছি। আমাদের উচিত, বিভিন্ন সমাজকে একত্র করে সামনে আসা সমস্যার সমাধান করা।” রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ভাগবতের এই কথাতেই স্পষ্ট আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে তাদের প্রাথমিক রণকৌশলের ছাপ। পাঁচ বছর আগের নির্বাচনের ফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে গোবলয়ে ২২৬টি আসনের মধ্যে ২০৪টিতেই জিতেছিল এনডিএ। সঙ্গে মহারাষ্ট্রের ৪৮টির মধ্যে ৪১টি। এই রাজ্যগুলিতে ব্যবধান নতুন করে আর বাড়ার নেই, উল্টে কমে গেলেও যেতে পারে। তাহলে কোন পথে আসবে বিকল্প? এই বিকল্পের খোঁজেই পূর্ব ভারত, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দাক্ষিণাত্যে নজর দিচ্ছে আরএসএস।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আট রাজ্যে ২৫টির মধ্যে ১৭টিতে জিতেছিল এনডিএ (NDA)। এবার বাংলা ও ওড়িশায় ফল ভাল করার দিকে নজর দিচ্ছে সংঘ। বিহার (৩৯/৪০) ও ঝাড়খণ্ডেও (১২/১৪) মার্জিন বাড়ানোর সম্ভাবনা নেই। যা রয়েছে দাক্ষিণাত্যে। দক্ষিণের পাঁচ রাজ্যের ১২৯টি আসনে আগেরবার সেভাবে প্রভাব ফেলতে পারেনি বিজেপি। কেরল (২০) ও অন্ধ্রপ্রদেশে (২৫) খাতা পর্যন্ত খুলতে পারেনি গেরুয়া শিবির। এই রাজ্যগুলিতে ভাল ফল করতে গেলে যে উগ্র হিন্দুত্ববাদ কাজে আসবে না, তা বুঝতে পেরেই এভাবে অবস্থান বদল করছেন সংঘ প্রধান। মণিপুর হিংসার জেরে, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দাক্ষিণাত্যে শিক্ষিতের হার বেশি হওয়ায় ভোটারদের মন পেতে যে হিন্দুত্ববাদের সুর কিছুটা খাদে নামাতে হবেই, তা বুঝতে পেরেই এভাবে সর্বধর্মের বার্তা দিচ্ছেন ভাগবত, এমনটাই বিশ্লেষণ বিশেষজ্ঞদের।
সুর বদল করার পরই রাজ্যে আসছেন ভাগবত। সেখানে নতুন করে কী বার্তা দেন তিনি, সে দিকে নজর থাকবে। গত সপ্তাহে স্বামী বিবেকানন্দের বক্তব্য বিকৃত করায় বিজেপি সভাপতি তথা ছোট থেকে আরএসএস মতাদর্শে বিশ্বাসী ড. সুকান্ত মজুমদারকেই বা কী বার্তা দেন, সেদিকেও লক্ষ্য থাকবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.