ছবি: প্রতীকী
অভিরূপ দাস: চিকিৎসা করে রোগীকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেই মারা গিয়েছেন। রাজ্যে কোভিড (Covid-19) আক্রান্ত হয়ে এমন মৃত চিকিৎসকের সংখ্যা ৬৪। সেই আবহে রোগীর পরিবারের হাতে চূড়ান্ত নিগৃহীত হলেন এক চিকিৎসক। রোগীকে সুপরামর্শ দিতে গেয়ে পেলেন খুনের হুমকি। ভীত সন্ত্রস্ত বাঘাযতীন স্টেট জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মেডিক্যাল অফিসার ডা. অনিকেত মুখোপাধ্যায় গোটা ঘটনা জানিয়েছেন হাসপাতালের সুপার সুব্রত রায়কে।
তাঁর কথায়, আমি গোটা ঘটনা মোবাইলে রেকর্ডিং করে রাখছিলাম। ওরা আমার মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। কোনওরকমে পুলিশ সেটি উদ্ধার করে। গত ১৫ নভেম্বরের ঘটনা। ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ জরুরি বিভাগে ডিউটি করছিলেন ডা. মুখোপাধ্যায়। আচমকাই তলপেটে খুব ব্যথা নিয়ে এক ব্যক্তি জরুরি বিভাগে আসেন। হাসপাতালের ফর্মে লেখা তাঁর নাম সুরজিত ঘোষ। বিদ্যাসাগর কলোনি এলাকায় বাড়ি তাঁর। অসুস্থ ওই ব্যক্তির সঙ্গে আরও জনা দশেক লোক ছিল। জরুরি বিভাগে উপস্থিত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, প্রত্যেকেই মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন। ওই অবস্থায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে প্রবেশ করা নিয়ে বলতে গেলেই শুরু হয় প্রাথমিক বচসা। অসুস্থ ব্যক্তির রক্তচাপ ক্রমশ নামছিল। চিন্তিত ডা. মুখোপাধ্যায় রোগীর কেস হিস্ট্রি জানতে চান। সঙ্গে থাকা এক ব্যক্তি জানান ক’দিন আগেই অসুস্থ ব্যক্তি কোভিড পজিটিভ হয়েছিলেন। ডা. মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “তখনই আমার সন্দেহ হয়। কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন এমন অনেকেই পরবর্তীকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। হার্টে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে এই ভাইরাস। এই ব্যক্তিরও স্যাচুরেশন নামছিল দ্রুত। তড়িঘড়ি প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ওনাকে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের আইসিইউতে রেফার করি।”
এরপরেই ঘটে যায় ভয়ংকর ঘটনা। আচমকাই রোগীর এক আত্মীয় তাঁর কলার চেপে ধরেন। হুমকি দেন, “কোভিডের ভয় পেয়ে তুই রোগীকে বের করে দিচ্ছিস। এখনই খুন করে ফেলব।” অভিযোগ রোগীর আত্মীয়রা তুলকালাম শুরু করের জরুরি বিভাগে। এমনকি টানা হ্যাঁচড়ায় অন্য এক মহিলা রোগীও আঘাত পান। ডা. মুখোপাধ্যায়ের কথায়, আমি বারবার হাতজোড় করে ওদের বলি রোগীকে বাঁচাতে হলে দ্রুত ন্যাশনালে নিয়ে যান। ওনারা অশ্রাব্য গালিগালাজ করছিলেন। কোনওরকমে নিরাপত্তারক্ষীরা দৌড়ে এসে চিকিৎসককে রক্ষা করেন। করোনা আবহে যেখানে নিজের জীবন বিপন্ন করে চিকিৎসা করছেন ডাক্তাররা সেখানে এমন ঘটনা শিউরে ওঠার মতোই। খুনের হুমকিতে ভীত ওই চিকিৎসক হাসপাতালের সুপার ডা. সুব্রত রায়কে লিখিতভাবে জানিয়েছেন এই ঘটনা। সুপার জানিয়েছেন সিসিটিভি দেখে অভিযুক্তদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ চিকিৎসকদের সংগঠন প্রোটেক্ট দ্য ওয়্যারিয়র্স। সংগঠনের সদস্য জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. অনির্বাণ দলুই জানিয়েছেন, ডাক্তাররা জীবন বিপন্ন করে কাজ করছেন। অবিলম্বে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি আটকাতে প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তর থেকে কড়া বার্তা দেওয়া জরুরি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.