গৌতম ব্রহ্ম: পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। তবু, নিরুপায় হয়ে অনুমতি দিয়েছিলেন নোভেল করোনা আক্রান্ত বৃদ্ধ ইতালীয় দম্পতি। তাঁদের উপর এইডস, সোয়াইন ফ্লু ও ম্যালেরিয়া প্রতিরোধক ওষুধ একযোগে প্রয়োগের। তাতেই বাজিমাৎ। সত্তর ছুঁইছুই বৃদ্ধ ও তাঁর স্ত্রী মারণ ভাইরাসকে রুখে দিয়ে ক্রমশ সুস্থ হয়ে উঠছেন। অন্তত জয়পুরের চিকিৎসকরা তেমনই দাবি করেছেন। আর তাতেই আশায় বুক বেঁধেছে বাংলা তথা ভারতীয় চিকিৎসকমহল। তাঁদের বক্তব্য, চিনের চিকিৎসকরাও এডসের ওষুধ ব্যবহার করে আংশিক সাফল্য পেয়েছেন। এবার জয়পুরের ডাক্তারবাবুরাও পেলেন। এবার পুরোদস্তুর একটা ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হোক। তাহলে অনেকটাই স্বস্তি মিলবে।
লোপিনাভির, রিটোনাভির, অসিলট্যামিভির, ক্লোরোকুইন। প্রথম দু’টি এডসের মোকাবিলায় সেকেন্ড লাইন ড্রাগ হিসাবে ব্যবহার করা হয়। অসিলট্যামিভির ব্যবহার করা হয় সোয়াইন ফ্লুর ওষুধ হিসাবে। ক্লোরোকুইন ম্যালেরিয়ায়। কমিউনিটি মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. সঙ্ঘমিত্রা ঘোষ জানিয়েছেন, এই চার ওষুধের ‘কম্বিনেশন’ বাঁচিয়ে দিয়েছে ইতালীয় দম্পতিকে। কিন্তু এটাই করোনার অমোঘ ওষুধ, এটা বলার মতো সময় আসেনি। আরও অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা-গবেষণা প্রয়োজন। তবে যেহেতু করোনার কোনও নির্দিষ্ট ওষুধ নেই এবং এটি প্রাণঘাতী তাই জয়পুরের তথ্যটি একটা বড় আশার আলো। তবে এই ওষুধ আইসিইউতে থাকা রোগীদের উপরই প্রয়োগ করা উচিত।
জয়পুরের চিকিৎসকদের দাবিকে মান্যতা দিয়েছে আইসিএমআর। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন এই খবর দিয়ে জানিয়েছেন, ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ’ (আইসিএমআর)-এর অনুমোদনের ভিত্তিতে করোনা আক্রান্তদের শরীরে লোপিনাভির ও রিটোনাভির সংমিশ্রণ প্রয়োগ হয়েছে। জরুরিকালীন ভিত্তিতেই এই সংমিশ্রণ প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। চিন ইতিমধ্যেই এই ওষুধের প্রয়োগ করেছে। তবে, এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। তাই রোগীর সম্মতির ভিত্তিতেই লোপিনাভির ও রিটোনাভির সংমিশ্রণ প্রয়োগ করা যেতে পারে। এমনটাই মনে করছেন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. অরিন্দম বিশ্বাস।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের এক শীর্ষ আধিকারিকের কথায়, ‘জয়পুরে ৬৯ বছরের বৃদ্ধ ও তাঁর স্ত্রীর শরীরে করোনার জীবাণু মিলেছিল। তাঁদের আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। ক্রমশ সেরে উঠছেন দুজনেই। জ্বর নেই। শ্বাস নিতে অক্সিজেনের প্রয়োজনও আর পড়ছে না। আগামী আট-ন’ দিনের মধ্যেই তাঁরা সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যাবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাও জানিয়ে দিয়েছে, শীঘ্রই এই ওষুধগুলি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সামনে আনা হবে।
ইতিমধ্যে ১২৪টি দেশে ছড়িয়ে গিয়েছে Covid-19। ৩২টি দেশে করোনা আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে। করোনাকে বিশ্বব্যাপী মহামারী বলে ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা WHO। বিজ্ঞানী ও ভাইরোলজিস্টদের দাবি, অ্যান্টি ভাইরাল ওষুধের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ফল মিলেছে। এইচআইভি এবং ইবোলার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধও প্রয়োগ করা হচ্ছে। তাতে ভাল ফল মিলেছে বলেও দাবি। জয়পুরের ডাক্তারবাবুরা এডসের সঙ্গে সোয়াইন ফ্লু এবং ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধও মিশিয়েছেন। তাতে আগের চেয়ে ভাল সাড়া মিলেছে বলে দাবি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.