স্টাফ রিপোর্টার, হাওড়া: পরিজনের মৃত্যুর খবর পেয়ে ততক্ষণে হাসপাতালে মালা-খাট নিয়ে পৌঁছে গিয়েছেন রোগীর আত্মীয়রা। হাসপাতালের মোল ওয়ার্ডে তখন কান্নার রোল। এ কাঁদে তো ও কাঁদে। কিন্তু এ কী? দিব্যি বেডের উপর শুয়ে আয়েশ করে মধ্যাহ্নভোজ সারছেন সেই ‘মৃত’ রোগী। এই দৃশ্য দেখে তো চক্ষু ছানাবড়া আত্মীয়দের। তাহলে হাসপাতাল থেকে যে মৃত্যুর খবর এল। এমনই অদ্ভূত কাণ্ড ঘটেছে হাওড়ার জেলা হাসপাতালে। জীবন্ত ব্যক্তিকে ডেথ সার্টিফিকেট দিল হাসপাতাল৷ তা নিয়ে বুধবার চাঞ্চল্য ছড়াল হাওড়া হাসপাতালে৷ এদিন রোগীর আত্মীয়রা যখন মালা-খাট নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে হাসপাতালে পৌঁছন তখন দেখেন তাঁদের বাড়ির লোক দিব্যি হাসপাতালের ভিতরে বেডে বসে আছেন৷ বিষয়টি দেখে হতবাক রোগীর আত্মীয়রা হাওড়া হাসপাতাল ও হাওড়া থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন৷
বুধবার সকালে হাওড়ার মধুসূদন পালচৌধুরি লেনের বাসিন্দা প্রদীপ মাজির কাছে স্থানীয় ব্যাঁটরা থানা থেকে একটি ফোন আসে৷ সেই ফোনে জানানো হয়, তাঁদের আত্মীয় জয়নারায়ণ পাণ্ডে (৫০) এদিন সকালে মারা গিয়েছেন৷ গত ১৬ মে জয়নারায়ণবাবু শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন৷ তিনি মেল মেডিসিন ওয়ার্ডের ৭২ নম্বর বেডে ভর্তি ছিলেন৷ এই মৃত্যুসংবাদ শুনে জয়নারায়ণবাবুর বাড়ির লোকেরা হাওড়া হাসপাতালে গিয়ে পৌঁছন৷ এর পর হাসপাতালের মেল মেডিসিন ওয়ার্ডে গিয়ে তাঁর আত্মীয়রা দেখেন বেঁচে আছেন জয়নারায়ণবাবু৷ জয়নারায়ণ পাণ্ডে যখন হাসপাতালের ভিতরে বসে রয়েছেন, তখন তাঁর নামে ডেথ সার্টিফিকেট তৈরি করে ফেলেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ৷ তাঁর আত্মীয়রা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানোর সঙ্গে সঙ্গে তারা ডেথ সার্টিফিকেটটি ছিঁড়ে ফেলে৷ এই ঘটনার পরই হাওড়া হাসপাতালে বিক্ষোভ দেখান জয়নারায়ণবাবুর আত্মীয়রা৷ উত্তেজনা ছড়ায় হাসপাতালে৷
কিন্তু কীভাবে ঘটল এই ঘটনা? জানা গিয়েছে, জয়নারায়ণ পাণ্ডের মঙ্গলবারই ছুটি হয়ে যায়৷ বুধবার সকালে তাঁর বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল৷ বাড়ি ফেরার জন্য মেল মেডিসিন ওয়ার্ডে বসে ছিলেন তিনি৷ কিন্তু বাড়ি ফেরার ইচ্ছা ছিল না তাঁর। তখন ওয়ার্ডের মেঝেয় এক অজ্ঞাতপরিচয় অচৈতন্য ব্যক্তিকে শুইয়ে রাখা হয়েছিল। জয়নারায়ণ ওই অসুস্থ ব্যক্তিকে নিজের বেডে শুইয়ে দিব্যি হাসপাতালের অন্যত্র ঘুরে বেড়াতে থাকেন। কিন্তু মঙ্গলবার ওই রোগীর মৃত্যু হয়। যেহেতু ৭২ নম্বর বেডে তিনি শুয়ে ছিলেন তাই ভুল করে জয়নারায়ণকে মৃত ভেবে বসে কর্তৃপক্ষ। তার পরেই এত বিপত্তি।
হাসপাতালের সুপার বলেন, এই ভুলটি নার্সরা করেছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে৷ তবে কার ভুলে এই ঘটনা ঘটেছে তা তদন্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন সুপার৷ জানা গিয়েছে, জয়নারায়ণবাবুর পরিবারে কেউ নেই৷ আত্মীয়স্বজনরাই তাঁকে দেখাশোনা করেন৷ তিনিও মধুসূদন পালচৌধুরি লেনেই থাকেন৷ জয়নারায়ণবাবুর আত্মীয় প্রদীপ মাজি বলেন, এদিনের ঘটনায় তাঁরা হতচকিত হয়ে পড়েন৷ এই ঘটনার জন্য হাওড়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে হাওড়া থানায় তাঁরা অভিযোগ দায়ের করেছেন৷ পুরো ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশও৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.