স্টাফ রিপোর্টার: নিউটাউনে ঝাঁ চকচকে অফিস। সেখানে খান দশেক কম্পিউটার, ল্যাপটপ। গোটা কয়েক মোবাইল। আর তা দিয়েই জার্মানি, সুইডেন, কানাডা এবং ইন্দোনেশিয়ার হাজার হাজার মানুষকে প্রতারিত করত সে। নাম রিচা পিপালওয়া। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। সুন্দরী, ইংরাজিতে তুখোড়। আর তা দিয়েই মানুষকে প্রলুব্ধ করে ফোন মারফত তাদের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা হাতিয়ে নিত সে এবং তার টিম। একাধিক অভিযোগ পাওয়ার পরই দিন কয়েক আগে নিউটাউন থেকেই মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের জেরা করতেই সোমবার কলকাতায় এল জার্মান পুলিশ।
জার্মানি, সুইডেন, কানাডা, ইন্দোনেশিয়ার মতো চার দেশে কোটি কোটি টাকা আর্থিক প্রতারণা চালিয়ে যাওয়া পাঁচ মূল অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে তারা। প্রায় এক বছর ধরে নিউটাউনে বসে এই জালিয়াতি চক্র চালাচ্ছে আন্তর্জাতিক সাইবার অপরাধীরা। যার ‘মাস্টারমাইন্ড’ এই রিচা। শহরে বসেই প্রতারণার ফাঁদ পেতেছিল সে। সিআইডি সূত্রে খবর, দিনে প্রায় ৭৫ হাজার থেকে এক লক্ষ টাকা রোজগার করত পাঁচজনের এই টিম। তবে এই সাইবার প্রতারণা চক্রের সঙ্গে দেশ-বিদেশের আর কার কার যোগাযোগ রয়েছে, সে বিষয়টিই সিআইডির কাছে জানতে চাইবেন জার্মান গোয়েন্দারা। দেখা হবে উদ্ধার হওয়া কাগজপত্রও।
নিউটাউন থেকে ধরা পড়া আন্তর্জাতিক সাইবার জালিয়াতি চক্র সম্পর্কে সিআইডির কাছ থেকে বিস্তারিত খোঁজ নেবেন জার্মান পুলিশের কর্তারা। এই কাণ্ডে ধৃত পাঁচজনকে আদালতের নির্দেশ নিয়ে জেলে গিয়ে জেরা করতে চায় জার্মান পুলিশ। প্রত্যেকেই আছে দমদম সেন্ট্রাল জেলে। এদিন দুপুর ১২টা নাগাদ জার্মান পুলিশের দলটি প্রথমে ভবানীভবনে যায়। সেখানে বসে নিজেরা বৈঠক করে সিআইডির গোয়েন্দা কর্তাদের সঙ্গে। তারপর তারা নিউটাউন থানায় গিয়ে সেখানকার আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
উল্লেখ্য, গত জুন মাসে জার্মান পুলিশ সিআইডিকে জানায় যে, নিউটাউনে বসে জালিয়াতি চক্র চালাচ্ছে আন্তর্জাতিক সাইবার অপরাধীরা। শুধুমাত্র জার্মানি নয়, এই চক্রের ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব খোয়াচ্ছেন সুইডেন ও ইন্দোনেশিয়ার বাসিন্দারাও। জার্মান পুলিশের কাছ থেকে এই খবর পেয়ে জোরদার তদন্তে নামেন সিআইডির গোয়েন্দা কর্তারা। আন্তর্জাতিক এই সাইবার অপরাধে মূল শিকড় রয়েছে নিউটাউনেই। এই কাণ্ডের তদন্ত শুরু করেন সিআইডির সাইবার সেল।
তদন্তে নেমে নিউটাউন থেকেই পাঁচজন আন্তর্জাতিক সাইবার অপরাধীকে গ্রেফতার করেন সিআইডির গোয়েন্দারা। ধৃতদের জেরা করে গোয়েন্দারা তাজ্জব বনে যান। নিউটাউনে বসে ‘মাইক্রোসফট’ নামে একটি সংস্থা খুলেছিল অপরাধীরা। এই সংস্থায় নিয়োগ করা হয়েছিল সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের। এই সংস্থার নাম করে জার্মানি, সুইডেন ও ইন্দোনেশিয়ার বাসিন্দাদের ফোন করা হত। ফোনে বলা হত, আমরা কম্পিউটার সারানোর দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার। এমনকী, কম্পিউটারের যাবতীয় তথ্য নিয়ে সাধারণ মানুষকে ব্ল্যাকমেলিং করে মোটা টাকা আদায়ও করত তারা। শুধু তাই নয়, জার্মানি, সুইডেন ও ইন্দোনেশিয়ার বহু ব্যক্তির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের যাবতীয় তথ্য জেনে নিত আন্তর্জাতিক জালিয়াতরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.