Advertisement
Advertisement
Ice cube

দাম বেড়েছে আইস কিউবের, শরবতে মাছ-মাংসের বরফ-যোগ!

যাবতীয় বিধিনিষেধ অগ্রাহ্য করে শরবত, পানীয়তে অবাধে মেশানো হচ্ছে বাণিজ্যিক বরফ।

Ice cube price hiked due to summer

প্রতীকী ছবি

Published by: Suchinta Pal Chowdhury
  • Posted:April 22, 2024 2:01 pm
  • Updated:April 22, 2024 5:51 pm

নব্যেন্দু হাজরা: সূয্যিমামা তখন মাঝআকাশে। তাপমাত্রার পারদ বিয়াল্লিশ ছুঁই ছুঁই। এসপ্ল‌্যানেড চত্বর ফাঁকা হলেও সেখানকার লস্যি-শরবতের দোকানে গলা ভেজানোর হুড়োহুড়ি। গ্লাস তিরিশ থেকে শুরু, একেবারে আশি পর্যন্ত। বরফের চাঁই গুঁড়ো করে চলছে শরবত ঠান্ডা করার প্রক্রিয়া। সেখানকারই এক ব‌্যবসায়ী জানালেন, এই গরমে বরফের (Ice Cube) বিরাট চাহিদা। দামও কিছুটা বেড়েছে। তাছাড়া শুধু তো আর শরবত নয়, এই বরফে তো মাছ-মাংসও সতেজ রাখা হচ্ছে। দিয়ে কুলিয়ে উঠতে পারছে না বরফকলগুলো।

জ্বালা ধরানো গরমের সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে শহরের রাস্তায় বেড়েছে শরবত, লস্যি, লেবুজল বিক্রি। ঠা-ঠা রোদে দাঁড়িয়ে তাতেই গলা ভেজাচ্ছেন হাজার হাজার পথচারী। কিন্তু যার গুণে ওই পানীয় ঠান্ডা হচ্ছে, তা যে বিষ। যাবতীয় বিধিনিষেধ অগ্রাহ্য করে শরবত, পানীয়তে অবাধে মেশানো হচ্ছে বাণিজ্যিক বরফ। খাওয়ার যোগ্য বরফের কিউব (খণ্ড) ব্যবহার না করে মাছ, মাংস ও মৃতদেহ সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত বরফেই ঠান্ডা করা হচ্ছে শরবত। চড়া রোদে যা খেয়ে তৃষ্ণা মেটাচ্ছেন বাচ্চা থেকে প্রৌঢ় সকলেই।

Advertisement

[আরও পড়ুন: জঙ্গি নজরে অভিষেক! বিস্ফোরক তথ্য কলকাতা পুলিশের হাতে]

কথা হচ্ছিল এসপ্ল‌্যানেড চত্বরের এক শরবত বিক্রেতার সঙ্গে। তাঁর কথায়, শহরের রাস্তার শরবৎ বা লেবুজলের দোকানে ব‌্যবহৃত বরফের একটা বড় অংশই  আসে  রাজাবাজারের বরফকল থেকে। মাছবাজারেও সেখান থেকেই যায় এই বাণিজ্যিক বরফ। আইস কিউবের দাম এই বরফের তুলনায় অনেকটাই বেশি। তাই সাধারণত রাস্তার ধারের লস্যি, শরবতের দোকানগুলো বরফের চাঁই কেনার দিকেই ঝোঁকেন।

Advertisement

শনিবার বিকেলেও গণেশচন্দ্র অ‌্যাভিনিউয়ের ফুটপাথে বরফ কেনার জন‌্য ব‌্যবসায়ীদের ভিড় নজরে এসেছিল। একটু ফাঁকা হতেই কথা জমেছিল ওই বরফবিক্রেতার সঙ্গে। জানা গিয়েছে, তাঁর এখানে একাধিক বরফকল থেকে বরফের চাঁই আসে। ভোর থেকে যা কিনতে রীতিমতো লাইন পড়ে যায়। পাওয়া যায় বরফের কিউবও। সেগুলো যায় স্থানীয় বারগুলোতে। হাজার হাজার কেজি বরফ খুচরো শরবৎ বিক্রেতারা নিয়ে যান। তাঁর কথায়, বরফের দাম বেড়েছে। বিশেষ করে আইস কিউবের। এক কেজি আইস কিউবের দাম ২০ টাকা। সেখানে এক কেজি বাণিজ্যিক বরফের দাম ৬ টাকা পড়ে। ১২০ কেজির বরফের চাঁইয়ের দাম পড়ে ৮০০ টাকা। দামের যেহেতু এত হেরফের তাই মাছ-মাংস সতেজ রাখা থেকে শুরু করে শরবৎ সবকিছুর জন‌্যই এই বরফই নেন ব‌্যবসায়ীরা।

[আরও পড়ুন: ‘রায়ে খুশি নই’, হাই কোর্টের নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছে SSC]

শহর ঘুরে দেখা যায় এসপ্ল‌্যানেড, পার্ক স্ট্রিট থেকে শ‌্যামবাজার, গিরিশ পার্ক, যাদবপুর, গড়িয়াহাট সর্বত্রই রাস্তার ধারের শরবৎ-লস্যির দোকানে বাণিজ্যিক বরফই ব‌্যবহার হচ্ছে। তবে তা যে বেআইনি তা মানতে নারাজ এইসব দোকানদাররা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বরফ পরিস্রুত পানীয় জল দিয়ে তৈরি হয় না। তাই দামও কম। চাঁদনি চত্বরের এক দোকানদার জানান, একটি বাণিজ্যিক বরফের ছোট চাঁই কিনতে খরচ হয় চারশো টাকা। প্রায় ৬০ কেজি ওজন থাকে। তা থেকে প্রায় পাঁচশো গ্লাস লস্যি তৈরি হয়। তাই এই বরফই কিনি। বেশিরভাগ দোকানই তাই কেনে।

চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, নোংরা ও খারাপ জল থেকে তৈরি বাণিজ্যিক বরফ দেওয়া লস্যি খেলে যক্ষ্মা ও কলেরার মতো জলবাহিত রোগের আশঙ্কা তৈরি হয়। তাছাড়াও অন‌্যান‌্য অসুখেরও সম্ভাবনা থাকে। এবিষয়ে প্রশাসনের নজর দেওয়া উচিত। মাঝেমধ্যে পুরসভা অভিযান চালায় ঠিকই, কিন্তু দু-একদিন। তার পর আবার যে কে সেই। শুধু রাস্তার শরবতই নয়। আখের রসেও মাছ-মাংস সংরক্ষণে ব‌্যবহার করা এই বাণিজ্যিক বরফ দেওয়া হয়। আর না জেনেই আমরা সেই রসেই গলা ভিজিয়ে তেষ্টা মেটাই। কী বলছে প্রশাসন? স্বাস্থ‌্য দপ্তরের খাদ‌্য সুরক্ষা শাখার এক আধিকারিক জানান, এবিষয়ে নজরদারির জন‌্য পুরসভার পাশাপাশি আমাদেরও বিশেষ টিম রয়েছে। শহর এবং জেলাতে তারা অভিযানও চালায়। অনেকক্ষেত্রেই বহু দোকানদারকে ধরে তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব‌্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ