ছবি: প্রতীকী
অর্ণচ আইচ: কলকাতা টু কালিয়াচকের ‘চোরাই মোবাইল হাব’। সেখান থেকে উত্তরবঙ্গ আবার কখনও বাংলাদেশ। এই রুটে পাচার হচ্ছে দামী মোবাইল। সৌজন্যে বানজারা গ্যাং (Banzara Gang)। পরিবারের মহিলা ও বাচ্চাদের সাহায্য নিয়ে কলকাতা, হাওড়া, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন জায়গা থেকে মোবাইল ও ল্যাপটপ চুরি করছে তারা। পুজোর আগে হানা দিয়ে হাওড়া, উলুবেড়িয়া, পাঁচলা ও ধূলাগড়ে আলাদাভাবে হানা দিয়ে বানজারা গ্যাংয়ের পাঁচজন মাথাকে গ্রেপ্তার করলেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হল ৫০টি মোবাইল। ধৃতরা হল গৌতম চিনিমার, সাদ্দাম মাল, কেশর দাস, সৌরভ দাস, দীনেশ দাস। গোয়েন্দাদের সন্দেহ, ল্যাপটপও চুরি করেছে তারা। তাদের জেরা করে ল্যাপটপও উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। পুজোর সময়ও এই বানজারা গ্যাং থেকে পুলিশ কলকতাবাসীকে সতর্ক করছে।
পুলিশ জানিয়েছে, কলকাতার (Kolkata) বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চুরি যাচ্ছে ল্যাপটপ ও মোবাইল। বহু অভিযোগ পুলিশের কাছে দায়েরও হয়েছে। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই তদন্ত করে লালবাজারের গোয়েন্দারা জানতে পারেন যে, চুরির আগে এলাকায় শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের সঙ্গে নিয়ে মহিলাদের দেখা গিয়েছিল। ভিক্ষা চাওয়ার নাম করে তারা ঘোরাঘুরি করছিল এলাকায়। জানা গিয়েছে, সকাল বা দুপুরে কোনও বাড়ির দরজা খোলা থাকলেই ভিতরে ঢুকে মোবাইল বা ল্যাপটপ নিয়ে পালায় তারা।
গোয়েন্দারা জেনেছেন, চুরির জন্য পরিবারের পুরুষরা মহিলা ও শিশুদের রীতিমতো প্রশিক্ষণ দেয়। হাতে ধরে তাদের চুরি শেখানো হয়। এমনকী, যদি ধরা পড়ে যায়, কীভাবে কান্নাকাটি করে পালাবে, শেখানো হয় সেই রাস্তাও। যে শিশুদের চুরির জন্য ব্যবহার করা হয়, অনেক সময় তাদের ‘ভাড়া’ দেয় মা-বাবারা। শিশুটি ক’টি মোবাইল বা ল্যাপটপ চুরি করছে, তার ভিত্তিতে কমিশন দেওয়া হয় তার মা-বাবাকে। এর আগেও শিয়ালদহ ও বালিগঞ্জ থেকে ধরা পড়েছে বানজারা গ্যাং। গোয়েন্দারা খবর পান যে, কলকাতার আশপাশের জেলা ও অঞ্চলেও হানা দিচ্ছে তারা। উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়ার বিভিন্ন জায়গায় ডেরাও বেঁধেছে তারা। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক টিম একইসঙ্গে শুক্রবার রাতে হাওড়ার বিভিন্ন জায়গা ও ধূলাগড়ে তল্লাশি চালায়। ঝুপড়ির ভিতর বাক্স-পেটরা ও জামাকাপড়ের মধ্যেই লুকানো ছিল দামী মোবাইল। এরকম ৫০টি মোবাইল গোয়েন্দারা উদ্ধার করেন।
জানা গিয়েছে, মালদহের কালিয়াচকে রয়েছে চোরাই মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ কেনাবেচার গোপন ‘হাব’। কলকাতা থেকে বাসে করে মালদহে পৌঁছে যেত তারা। কালিয়াচকের নেমে এক-তৃতীয়াংশ দামে মোবাইলগুলি বিক্রি করে ফের ফিরে আসত নিজেদের ডেরায়। সেই চোরাই মোবাইল কখনও চোরাপথে বাংলাদেশ, আবার কখনও উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা বা ঝাড়খণ্ডেও পাচার হয়। আবার মেদিনীপুরে চন্দ্রকোনা রোড ও খড়্গপুরের কাছেও এদের ডেরার সন্ধান মিলেছে। ঘন ঘন ডেরা পালটানোর ফলে তাদের ধরাও পুলিশের পক্ষে মুশকিল হয়ে যায়। পুলিশ জেনেছে, বানজারা গ্যাংয়ের বাকিরা কলকাতা ও আশপাশের জেলায় পরিবার নিয়েই গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তার করে আরও মোবাইল ও ল্যাপটপ উদ্ধারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.