অভিরূপ দাস: একে বিবাহবার্ষিকী। তায় আবার প্রিয়তমর জন্মদিন। জোড়া সেলিব্রেশনের জাঁকজমকই ছিল আলাদা। চোখধাঁধানো সাজে সেজেছিলেন দম্পতি রাজেশ্বরী এবং অলোক কুমার। নিমন্ত্রিতদের তালিকাও লম্বা। গুনে গুনে মোট পঞ্চান্ন জন। কিন্তু এ কী! বিনা উপহারেই নেমন্তন্ন খেতে চলে এসেছেন সকলে। নিমন্ত্রিতরা আসলে অবলা প্রাণী, সারমেয়।
পঞ্চান্ন জনকে খাইয়ে রাজেশ্বরী বললেন, “ওরা আবার কী উপহার দেবে! ওদেরকে খাইয়ে আমার যে আনন্দ হয়েছে তার চেয়ে বড় উপহার আর কিছু হয় না।” খয়েরি, বাদামী রঙের টমি, রিকো, লুসিরাও বেজায় খুশি। চিকেন লেগপিস পাতে পড়তেই ল্যাজ নেড়ে আহ্লাদে আটখানা! ধোঁয়া ওঠা ভাত, সোনামুগ ডাল, সয়াবিনের তরকারি, কষা মাংস। মেনুতে কোনওরকম ত্রুটি ছিল না।
[আরও পড়ুন: ‘দেখামাত্র গুলি করার নির্দেশ দিন’, অশান্তির জেরে মুখ্যমন্ত্রীকে বার্তা রাহুল সিনহার ]
এই বছরই বিয়ের ২০ বছর পূরণ হল রাজেশ্বরী এবং অলোক কুমারের। সে উপলক্ষেই এই নেমন্তন্ন। ঢাকুরিয়ার বাবুবাগানের রাজেশ্বরী কর্মসূত্রে বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা। সারমেয়দের জন্য বরাবরই তার মনকেমন করে। ভিনরাজ্যেও কাজের ফাঁকে যখনই সময় পান কিছু না কিছু উপহার নিয়ে যান ডগ শেল্টারে। রাজেশ্বরীর কথায়, “বিয়ের ২০ বছর পূর্তিতে নেমন্তন্ন করব। তবে শুধু কুকুরদের। এমন একটা আইডিয়া এসেছিল। অলোককে বলতেই ও রাজি হয়ে গেল।” কলকাতায় এসে তিতাস মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পশুপ্রেমী তিতাস নিজে ‘ডগ শেল্টার’ চালান। ফেলে দেওয়া পশুপাখিদের জন্য পেল্লায় আশ্রয় শিবির রয়েছে তাঁর। সেই মতোই কথা পাকা।
তিতাস জানিয়েছেন, “আজকাল চিড়িয়াখানায় পশুপাখিকে দত্তক নেওয়ার চল শুরু হয়েছে। আগের থেকে মানুষের সচেতনতাও অনেক বেড়েছে।” পাশাপাশি তিনি এও জানান যে, “অনেকেই বাড়ির পোষ্যটা বুড়ো হয়ে গেলে তাকে রাস্তায় ফেলে দেন। আমরা এমন পোষ্যকে কুড়িয়ে নিয়ে আসি। এমন করে করেই আমার ডগ শেল্টারে এখন অগুনতি কুকুর। আমাদের একার পক্ষে তাদের খরচ চালানোটা বেশ কষ্টসাধ্য। রাজেশ্বরীদির প্রস্তাবটা আসতেই তাই লুফে নিই।” ঠাকুরপুকুরে তিতাসের ডগ শেল্টারই ছিল অনুষ্ঠানের ভেন্যু। ডিসেম্বরের দুপুরে সেখানেই গ্র্যান্ড লাঞ্চের আয়োজন। একপাল কুকুর জমিয়ে খেল কষা মাংস। থাবা তুলে আশীর্বাদ করল দম্পতিকে। এমন আজব নেমন্তন্নবাড়ি দেখে অবাক প্রতিবেশীরা।
[আরও পড়ুন: বাড়ছে CAA বিরোধী আন্দোলনের ঝাঁজ, ফের সংযত হওয়ার বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর ]