নব্যেন্দু হাজরা: বর্ষশেষের আগে জঙ্গি নিশানায় কলকাতা। দিল্লি, বেঙ্গালুরুর মতো যে কোনও দিন কলকাতাতেও হামলা চালানো হতে পারে বলে হুমকি দিয়েছে আল কায়দা। কিন্তু এসবের মাঝেও কার্যত অরক্ষিত পাতাল। ঢিলেঢালা নিরাপত্তা হাওড়া-শিয়ালদহ স্টেশনে। যা দেখে রীতিমতো আতঙ্কিত শহরবাসী। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ যাত্রী এই দুই স্টেশন এবং পাতালপথে যাতায়াত করে। কিন্তু সেখানকার নিরাপত্তার বহর ভাবাচ্ছে রেল কর্তাদের। মুখে স্বীকার না করলেও রেলের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আধিকারিকরাই জানাচ্ছেন, যখন-তখন বড়সড় নাশকতার ঘটনা ঘটলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। যদিও লালবাজারের তরফে জানানো হয়েছে, বষশেষ এবং বর্ষবরণের দিন মানুষের নিরাপত্তার কথা ভেবে সমস্ত রকম বন্দোবস্ত করা হয়েছে। পুলিশের সংখ্যা প্রচুর বাড়ানো হয়েছে।
[বর্ষবরণের রাতে উদ্দাম নাচ-গান বন্ধ বিধাননগরে]
সাধারণ মানুষের সুবিধার কথা ভেবে, বর্ষশেষের দিন প্রায় মাঝরাত পর্যন্ত মেট্রো চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। দমদম এবং কবি সুভাষ স্টেশন থেকে শেষ মেট্রো ছাড়বে রাত সওয়া ১২টায়। ৩১ ডিসেম্বর লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড় জমে পার্ক স্ট্রিট এবং এসপ্ল্যানেড চত্বরে। উৎসবশেষে তাঁরা যাতে ভালভাবে বাড়ি ফিরতে পারেন, সেকারণেই এই বিশেষ ব্যবস্থা। কিন্তু তারই মধ্যে ভাবাচ্ছে জঙ্গি সংগঠনের এই হুমকি। মেট্রোর নিরাপত্তার দায়িত্বে প্রশিক্ষিত কমান্ডো বাহিনী থাকলেও স্টেশনে ঢোকার পথ কার্যত অরক্ষিত। দীর্ঘদিন ধরেই নিরাপত্তায় জোর দেওয়ার নামে সাজিয়ে রাখা ব্যাগেজ স্ক্যানারে শুধু ধুলো আর মাকড়সার জাল। কারণ তা কাজ করে না দীর্ঘদিন। ২৩টা স্টেশনেই এক চিত্র। বার বার টেন্ডার করেও স্ক্যানার সারানোর লোক পাওয়া যাচ্ছে না। তাই প্ল্যাটফর্মে ঢোকার মুখে সেগুলি কোথাও কভারে ঢাকা। কোথাও তাতে হেলান দিয়ে গল্পে মশগুল কর্মীরাই। বেশ কিছু স্টেশনে তো ডোর ফ্রেম মেটাল ডিটেক্টর (ডিএফএমডি) খারাপ অবস্থায় পড়ে আছে। ফলে যে কেউ ব্যাগ নিয়ে ঢুকে পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা। বর্ষবরণের মুখেও কার্যত অরক্ষিত মেট্রো। অন্যান্য রবিবার ১১০টি মেট্রো চালালেও বর্ষশেষের দিন ১৭২ ট্রিপ ট্রেন চালানো হবে। সকাল ৯টা ৫০ থেকে শুরু হবে পরিষেবা। ১০-১৫ মিনিটের ব্যবধানে ট্রেন চলবে। রাত ৯টা ৫৫ থেকে সওয়া ১২টা পর্যন্ত ট্রেন পাওয়া যাবে ২০ মিনিট অন্তর।
[মাদক পাচারকারীদের নজরে এবার শহরের ‘রুফটপ পার্টি’]
অতিরিক্ত সরকারি বাস চালানোরও পরিকল্পনা করেছে পরিবহণ দফতর। মাঝ রাত পর্যন্ত বাস এবং মিনিবাস থাকবে। তবে এসবের মাঝেও দুশ্চিন্তা ভর করছে। আল কায়দার এই হুমকি। শুধু কলকাতা নয়, দিল্লি ও বেঙ্গালুরু-সহ দেশের বড় শহরগুলিতে সন্ত্রাসের চক্রান্ত করছে জিহাদিরা। মঙ্গলবার রাতে প্রকাশ্যে আসা ভারতে আল কায়দার সেকেন্ড-ইন-কমান্ড উসামা মেহমুদ একটি ভিডিও সাক্ষাৎকারে এমনই ইঙ্গিত করেছে। এরপরেই নড়েচড়ে বসেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। নিউ ইয়ার ইভের অনুষ্ঠানের সুযোগে জঙ্গিরা যাতে কোথাও নাশকতা চালাতে না পারে, তার জন্য রাজ্যগুলিকে অতিরিক্ত সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। জঙ্গি নেতার হুমকি, “কলকাতা, দিল্লি, বেঙ্গালুরুতে হামলা হলেই ভারতের চৈতন্য ফিরবে এবং কাশ্মীরে তাদের মুঠো আলগা হবে।”