Advertisement
Advertisement

Breaking News

Leaps and Bounds

‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস’-এর ফাইল ডাউনলোড বিতর্ক, কেন সরানো হল না ইডি আধিকারিককে? প্রশ্ন হাই কোর্টের

কী বলল আদালত?

'Leaps and Bounds' File Download issue, High Court Questions on Role of ED Officer | Sangbad Pratidin
Published by: Tiyasha Sarkar
  • Posted:August 30, 2023 9:03 am
  • Updated:August 30, 2023 9:03 am

স্টাফ রিপোর্টার: ‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস’-এ তল্লাশি চালানোর সময় ওই সংস্থারই কম্পিউটারে স্রেফ ‘ব‌্যক্তিগত কাজে’ ১৬টি ফাইল ডাউনলোড করায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) অফিসারের ভূমিকা নিয়ে এবার প্রশ্ন তুলল কলকাতা হাই কোর্ট। ওই অফিসারকে এখনও কেন সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী দলে (সিট) রাখা হয়েছে, মঙ্গলবার ভরা এজলাসে তা জানতে চান বিচারপতি অমৃতা সিনহা। এই ধরনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার তদন্তে ‘এত ঢিলেঢালা মনোভাব’ নিয়েও ইডির ভূমিকাকে এদিন বিচারপতি কার্যত কাঠগড়ায় দাঁড় করান।

প্রসঙ্গত, ওই ১৬টি ফাইল ডাউনলোড করা নিয়ে লিপস অ‌্যান্ড বাউন্ডসের তরফে ইতিমধ্যেই লালবাজারে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইডির তরফে লালবাজারে চিঠি পাঠানো হলেও ইডির ব‌্যাখ‌্যায় সন্তুষ্ট নন পুলিশকর্তারা। এই আবহে আদালতের প্রশ্নবাণে ইডির অস্বস্তি আরও বাড়ল। এদিন বিচারপতি প্রশ্ন তোলেন, ইডি-রই দাবি অনুযায়ী সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ‌্যায় এখনও লিপস অ‌্যান্ড বাউন্ডস-এর সিইও পদে থাকা সত্ত্বেও তদন্ত-পর্বে তাঁকে এখনও সমন পাঠানো হয়নি কেন? এই সংক্রান্ত অন‌্য একটি মামলার প্রসঙ্গ টেনে ইডির আইনজীবী পালটা সাফাই পেশ করার চেষ্টা করলেও বিচারপতি তা কার্যত খারিজ করে দেন। লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের সিইও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তদন্ত কতদূর এগিয়েছে জানতে চেয়ে এদিন রিপোর্ট তলব করেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা। আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানির আগে ইডির তরফে ওই রিপোর্ট জমা দিতে হবে।

Advertisement

[আরও পড়ুন: ক্যাম্পাসে গেলেই নানাভাবে হেনস্তা! আতঙ্কে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করলেন রবীন্দ্রভারতীর উপাচার্য]

নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তের অগ্রগতি দেখে দৃশ‌্যতই বিরক্ত বিচারপতি অমৃতা সিনহা এদিন ইডির পাশাপাশি সিবিআইকেও নিশানা করেন। তাঁর কথায়, ‘‘সিবিআই এবং ইডির রিপোর্টের ধরন একই। সব পুরনো তথ্য! শুধুমাত্র পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় একটু হুড়োহুড়ি হল, তারপর আবার ঘুমিয়ে পড়লেন? এমন তদন্ত করলেন যার কোনও ফল সামনে এল না! আপনারা নিচ থেকে তদন্ত শুরু করে উপরে উঠছেন। উপর থেকে তদন্ত শুরু করতে আপনাদের কে বাধা দিচ্ছে? আপনাদের তদন্তে আদৌ কি কোনও অগ্রগতি রয়েছে?’’ এদিকে প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে গঠিত বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)-এর হাতে পুর-নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তভার বহাল রাখলেও আদালতের নজরদারিতেই তদন্ত চলবে বলে এদিন বিচারপতি জানিয়ে দেন। তদন্তকারী আধিকারিক সুনীল সিং রাওয়াতকে পুর-নিয়োগ দুর্নীতির বিশেষ তদন্তকারী দলে (সিট) অন্তর্ভুক্তির নির্দেশও দিয়েছে আদালত।

Advertisement

নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত কোন পথে এগোচ্ছে তা জানাতে মঙ্গলবার আদালতে রিপোর্ট জমা দেয় ইডি। সেই রিপোর্টে ‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস সংস্থা’য় তল্লাশির উল্লেখ রয়েছে। ইডির আইনজীবী জানান, ‘‘নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় জেলবন্দি সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের সংস্থার সঙ্গে এই সংস্থাটির লেনদেনের প্রমাণ মিলেছে। সেই সূত্র ধরেই গত সপ্তাহে ইডি ওই সংস্থার দপ্তরে তল্লাশি অভিযান চালায়। লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস থেকে কিছু নথি উদ্ধার হয়েছে।’’ রাজ্যের তরফে ওই সংস্থায় তল্লাশিতে কারচুপির অভিযোগ তোলা হয়। তার প্রেক্ষিতে ইডির আইনজীবী জানান, ‘‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসে তল্লাশির সময় একজন তদন্তকারী আধিকারিক সেখানকার কম্পিউটারে কিছু ব্যক্তিগত বিষয় ইন্টারনেটে অনুসন্ধান করেছিলেন। ওই আধিকারিকের মেয়ে হাওড়ার একটি প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পেয়েছে। সেখানকার হস্টেলের বিষয়েই অনুসন্ধান করছিলেন তিনি। যাদবপুরের বিষয়ের পরে তিনি একটু চিন্তায়। এর পরই ইডির আইনজীবীকে বিচারপতি প্রশ্ন করেন, এই ধরনের আধিকারিক এখনও কেন ‘সিট’-এ রয়েছেন? এখনও তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়নি কেন? বিচারপতির কথায়, ‘‘ইন্টারনেটের জন্য কমপিউটার কেন দরকার, এখন তো ফোনেই সব আছে!’’ তদন্ত নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করে তাঁর আরও মন্তব‌্য, ‘‘যাঁরা যোগ্য প্রার্থী তাঁরা অবসরের আগে চাকরি পাবেন কি না সন্দেহ রয়েছে।’’

[আরও পড়ুন: ‘এটাই ইন্ডিয়ার দম’, গ্যাসের দাম কমার কৃতিত্ব বিরোধী জোটকে দিচ্ছেন মমতা, এক সুর খাড়গেরও]

আদালতে জমা পড়া ইডির রিপোর্টের সূত্র ধরেই এরপর বিচারপতি অমৃতা সিনহা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ‌্যায়ের প্রসঙ্গ টানেন। তিনি জানতে চান, ‘‘ইডির রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে যে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় একজন সাংসদ এবং এখনও লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের সিইও আছেন। তাঁর বিরুদ্ধে কী তদন্ত করেছেন? কেন সমন পাঠানো হয়নি?’’ জবাবে ইডির আইনজীবী বলেন, অন্য এজলাসে রক্ষাকবচ চেয়ে অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের এই সংক্রান্ত মামলা বিচারাধীন রয়েছে। আগামী ৫ সেপ্টেম্বর সেই মামলার রায়দানের কথা থাকায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ‌্যায়কে সমন পাঠানো হয়নি। কিন্তু সেই যুক্তি মানতে নারাজ বিচারপতি পালটা প্রশ্ন করেন, ‘‘আদালত কড়া পদক্ষেপ নিতে বারণ করেছে, ঠিক আছে। কড়া পদক্ষেপ মানে কী, আদালত কি তদন্তে বাধা দিয়েছে ? তাহলে কেন তদন্ত করছেন না?’’ এদিন আদালতে সিবিআইয়ের তরফেও রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়। তদন্ত সংস্থার আইনজীবী দাবি করেন, ‘‘আমরা তদন্ত চালাচ্ছি, আরও কিছু নাম আমরা রিপোর্টে দিয়েছি। আরও ৯৬ জনের নাম আছে, যাঁরা টেট পাস করেননি, কিন্তু চাকরি পেয়েছিলেন। এছাড়াও ৭১ জন প্রথমে টেট পাস করেননি, কিন্তু পরে পাস করেছিলেন।’’ এই রিপোর্টে দৃশ‌্যতই অসন্তুষ্ট বিচারপতি জানতে চান, ‘‘তদন্তে নতুন অগ্রগতি কোথায়? নিয়োগ দুর্নীতির টাকা কোথায় গেল? দুর্নীতির মাথায় কে?’’ সিবিআইয়ের তরফে অবশ‌্য এসবের কোনও সদুত্তর মেলেনি। সিবিআই ও ইডির ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বিচারপতির আরও মন্তব্য, ‘‘এত বড় দুর্নীতি কারও একার মস্তিষ্কপ্রসূত হতে পারে না। মানিক ভট্টাচার্য তো একা এই দুর্নীতি করেননি। তিনি ছাড়াও আরও ব্যক্তি আছে।’’ এঁদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি সিনহা। উত্তরে সিবিআইয়ের তরফে জানানো হয়, এটা একটা ঠান্ডা মাথায় করা দুর্নীতি। জাল ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়েছিল। শুধুমাত্র ২৬৪ জন তো বেআইনিভাবে নিযুক্ত হননি। আরও অনেকে আছেন। ইডির তরফে প্রাথমিকে ২০৬৯ জনের নিয়োগ অবৈধ বলে দাবি করা হয়। এদিন সেই তালিকাও তলব করেন বিচারপতি।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ