অর্ণব আইচ: এসপ্ল্যানেড থেকে চাঁদনি চক স্টেশনের দিকে যাওয়ার সময় হঠাৎই থেমে গেল মেট্রোর রেক। কয়েক মিনিটের মধ্যে নিভে গেল ট্রেনের আলো। টিমটিম করে জ্বলতে থাকা এমারজেন্সি আলোয় ছায়ার মতো কয়েকটি মানুষের চলাফেরা। গম্ভীর গলায় একজন বলে উঠল, ‘আমরা মেট্রোর দখল নিয়েছি। কেউ নড়াচড়া করলেই গুলি করে উড়িয়ে দেব। প্রত্যেক যাত্রী মাথা নিচু করে বসুন।’
রবিবার রাত এগারোটার পর এসপ্ল্যানেড স্টেশন থেকে প্রায় ৭০ জন যাত্রী নিয়ে ছেড়েছিল ট্রেনটি। স্টেশন ছেড়ে এগোতেই কলকাতা মেট্রোয় ‘জঙ্গি হামলা’। এর পর প্রায় চার ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস নাটক। প্রায় অন্ধকার মেট্রো রেলে জঙ্গিদের সঙ্গে কমান্ডোদের গুলির লড়াই। কলকাতা পুলিশ ও ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড(এনএসজি)-র কমান্ডোরা যখন জঙ্গিদের নিকেশ করে যাত্রী-সহ মেট্রোর রেকটি নিরাপদে চাঁদনি চক স্টেশনে নিয়ে এলেন, তখন সময় রাত প্রায় তিনটে।
[সরস্বতী পুজোর কেনাকাটা নিয়ে বিবাদে ২ পাড়ার সংঘর্ষ, এন্টালিতে ধুন্ধুমার]
আসল গুলির লড়াই না হলেও অনেকটা আসলের মতোই। হঠাৎ কলকাতার মেট্রো রেলে জঙ্গি হানা হলে কীভাবে যাত্রীদের উদ্ধার করা যেতে পারে, তা নিয়েই রবিবার রাতে চলল কমান্ডোদের মহড়া। মেট্রোর সূত্র জানিয়েছে, যাতে যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি না হয়, তার জন্যই রবিবার রাতে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরই পুলিশ এই মহড়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এনএসজি ও লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথমে কয়েকজন কর্তা ছাড়া কাউকে মহড়ার বিষয়টি জানানো হয়নি। ‘জঙ্গি’রা ট্রেনের দখল নিয়ে আলো নিভিয়ে দেওয়ার পর ডাক পড়ে কলকাতা পুলিশ ও এনএসজি কমান্ডোদের। মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষকে পুলিশ লাইনের বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দিতে বলে। লাইন দিয়ে হেঁটে ট্রেনের কাছে পৌঁছন কমান্ডোরা। জঙ্গিরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাতে কমান্ডোরা ভিতরে না ঢুকতে পারেন।
[ধীরে ধীরে চড়ছে পারদ, পশ্চিমী ঝঞ্ঝায় ভোল বদলাচ্ছে আবহাওয়া]
এর মধ্যেই দুই কামরার মধ্যে দিয়ে কমান্ডোরা ভিতরে ঢুকতে শুরু করেন। শুরু হয় গুলির লড়াই। কমান্ডোদের নজর ছিল, নকল গুলির লড়াইয়েও ‘বুলেট’ যেন কোনও যাত্রীর শরীরে না লাগে। তাই জঙ্গিদের লক্ষ্য করেই চালানো হয় একের পর এক গুলি। জঙ্গিরাও পালটা গুলি চালায়। এক কামরা থেকে অন্য কামরায় জঙ্গিদের তাড়া করেন কমান্ডোরা। গা-ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা করেও কমান্ডোদের ছোড়া গুলিতে একে একে জঙ্গিরা নিকেশ হতে শুরু করে। জঙ্গিদের গুলিতে যে কমান্ডোরা ‘আহত’ হয়েছেন, তাঁদের কীভাবে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে, তারও মহড়া দেওয়া হয়। এর আগে শহরের নামী হোটেল থেকে শুরু করে আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় মহড়া দিয়েছেন কমান্ডোরা। পরবর্তী সময়েও এই জাতীয় মহড়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
[কারগিলে লড়েছিলেন বন্দুক হাতে, এবার পাক হ্যাকারদের ত্রাস সেনা অফিসার]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.