Advertisement
Advertisement

Breaking News

Parents in dilemma after school buses went missing in Kolkata

পড়ুয়া বোঝাই স্কুলবাস নিখোঁজ কাণ্ড: সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে নারাজ আতঙ্কিত অভিভাবকরা

আচমকা পড়ুয়া-সহ স্কুলবাস উধাও হয়ে ঘটনার তদন্তে সিআইডি।

Parents in dilemma after school buses went missing in Kolkata । Sangbad Pratidin
Published by: Sayani Sen
  • Posted:April 8, 2022 10:05 pm
  • Updated:April 8, 2022 10:10 pm

ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: কোভিডপর্ব কাটিয়ে স্কুল খোলার প্রথম দিনেই প্রবল বিপত্তি। স্কুল ছুটির পর তিন তিনটি ঘণ্টা কেটে গেলেও বাড়ি ফেরেনি কোনও পড়ুয়া। একজন-দু’জন নয়। দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় শ’খানেক বাচ্চা। আচমকা খবর, স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে বেরিয়ে ‘নিখোঁজ’ সবাই! ঘটনা শুক্রবার কলকাতার উপকণ্ঠে বিধাননগরের মহিষবাথানের বেসরকারি স্কুল সল্টলেক শিক্ষা নিকেতনের (Salt Lake Shiksha Niketan)। স্রেফ এটুকু খবরেই ঘুম উড়ে গিয়েছিল শহর-শহরতলির গণ্ডি ছাড়িয়ে গোটা রাজ্যের মানুষের। প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরে খবর পৌঁছয়। ঘটনার ভয়াবহতা আঁচ করে একেবারে গোড়াতেই স্কুলে পৌঁছয় বিধাননগর পুলিশের গোয়েন্দা দপ্তরের আধিকারিকরা। যান শিক্ষা দপ্তরের আধিকারিকরা।

জানা যায়, স্কুলবাস যাঁদের দায়িত্বে থাকে, সেই অ্যাটেনডেন্টদের ফোন বন্ধ। অভিযোগ, স্কুল কর্তৃপক্ষও ফোন ধরছে না। চরম উদ্বেগ আর আতঙ্কে শেষে অভিভাবকরা একে একে স্কুল চত্বরে এসে পৌঁছন। অনেক খোঁজাখুঁজির শেষে সকলেরই খোঁজ মেলে। বেশিরভাগই ছিল স্কুলে। হাতে গোনা কয়েকজন ততক্ষণে পৌঁছয় বাড়ি। চরম অব্যবস্থার অভিযোগে ক্ষোভ উগরে দেন অভিভাবকরা। যদিও স্কুল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, স্কুল খোলার প্রথম দিন কোন বাচ্চা কোন বাসে যাবে তা নিয়ে প্রাথমিক সংশয় তৈরি হয়। তার জেরেই গোলমাল। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ, অভিভাবকদের এই ঘটনার কোনও তথ্য তারা দেয়নি বলেই ঘটনা এত বড় আকার নিয়েছে।

Advertisement

[আরও পড়ুন: ভাদু শেখ হত্যাকাণ্ড: জটিলতা কাটিয়ে তৃণমূল নেতার খুনের তদন্তভার সিবিআইকে দিল হাই কোর্ট]

সল্টলেক শিক্ষা নিকেতনে ক্লাস বসে সকাল সাড়ে সাতটায়। অন্যদিনের মতোই এদিন ছুটির ঘণ্টা পড়ে বেলা ১১টা ২০ মিনিটে। নিয়মমাফিক তার কিছুক্ষণের মধ্যেই সকলের স্কুলবাসে চড়ে বাড়ি ফেরার কথা। কিন্তু কম করে এক ঘণ্টা কেটে গেলেও কেউ না ফেরায় স্বাভাবিকভাবেই উদ্বেগ বাড়তে থাকে। বাগুইআটির বাসিন্দা হিমাদ্রি সেনের সন্তান যেমন পড়ে তৃতীয় শ্রেণিতে। তাঁর কথায়, “সওয়া ১২টার মধ্যে আমার বাচ্চার বাড়ি পৌঁছনোর কথা। আমার মা দুপুর আড়াইটে পর্যন্ত রাস্তায় স্কুলবাসের অপেক্ষায় বসে। বাচ্চার কোনও খোঁজ নেই। আমি অফিসে ছিলাম। মা’র ফোন পেয়ে পড়িমরি করে ছুটে আসি।”

Advertisement

রাজারহাটের দশদ্রোণে বাড়ি আরেকটি পরিবারও একই উদ্বেগের মধ্যে খবর পান স্কুলে কিছু ঘটেছে। তাঁর মেয়ে পড়ে চতুর্থ শ্রেণিতে। ছুটির পর ঘণ্টাখানেক কেটে গিয়েছে। সে ফেরেনি। একটা বাসও নাকি স্কুল থেকে বেরোয়নি। এক পড়শির কাছে এ খবর পেয়ে তিনি স্কুলে গিয়ে জানতে পারেন তাঁর সন্তান আরেকজনের সঙ্গে বাড়ি ফিরে গিয়েছে। এই ডামাডোলের পরিস্থিতিতে যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি কোনও বাসের চালককে। স্কুলে গিয়ে আরেক আতঙ্ক। স্কুল কর্তৃপক্ষের দিকে তিনিও আঙুল তোলেন। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও কোনও সুরাহা মেলে না। ততক্ষণে কেটে গিয়েছে ঘণ্টাদুয়েকের বেশি। তাঁর কথায়, “দু’ঘণ্টা পর জানতে পারি পাশের বাড়ির অভিভাবকের সঙ্গেও আমার বাচ্চা যায়নি। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। স্কুল চত্বরেই খোঁজা শুরু করি। অনেকক্ষণ পর দেখি একটা বাসের পিছনে আমার বাচ্চার সঙ্গে একজোট হয়ে দাঁড়িয়ে আরও তিন-চারজন বাচ্চা।” ভয় পেয়ে সিঁটিয়ে গিয়েছে সকলে।

তিনিই এক অর্থে বাকি বাচ্চাদেরও আবিষ্কার করেন স্কুল চত্বরেই। কেউ কেউ বাসে উঠে বসে। কেউ আবার স্কুলের গণ্ডির মধ্যেই উদ্ভ্রান্তের মতো ছোটাছুটি করছে। চোখেমুখে আতঙ্ক। বাচ্চাগুলির তলাশ করতে করতে সেখানে পৌঁছেছে পুলিশও। অভিভাবকদের সকলে ততক্ষণে খবর পেয়ে জড়ো হয়েছেন স্কুলে। তাঁদের কোনও বাচ্চার কিছু হয়নি বলে আশ্বস্ত করতে ব্যস্ত স্কুল কর্তৃপক্ষ। সল্টলেক শিক্ষা নিকেতনের অ্যাকাডেমিক ডিরেক্টর রেখা বৈশ্যর দাবি, “স্কুলবাসে যাওয়ার কথা নয় এমন একটি বাচ্চা বন্ধুদের সঙ্গে বাসে উঠে গিয়েছিল। তাদের মা-বাবারা এসে তাই বাচ্চাকে খুঁজে পায়নি। যে বাচ্চাকে প্রথমে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না, তাকে খুঁজতেই সব বাস আমরা আটকে দিই। তাই স্কুল চত্বর থেকেই বাস ছাড়তে দেরি হয়। কোনও বাচ্চাই নিখোঁজ হয়নি। বাস ছাড়তে দেরি হয়েছে।”

তবে পরিস্থিতি অত সহজে ঠাণ্ডা হয়নি। স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ উঠতেই পালটা বেঁকে বসে তারা। রেখা বৈশ্যর বিরুদ্ধেই অভিযোগ, তিনি অভিভাবকদের এমন হুমকিও দেন যে, তাঁরা প্রয়োজন মনে করলে বাচ্চাদের টিসি করিয়ে অন্য স্কুলে নিয়ে যতে পারেন। স্কুলের প্রিন্সিপাল নুপূর দত্তও দায় চাপাতে চেয়েছেন বাস অপারেটরদের উপর। তাঁর কথায়, “সব বাচ্চাকে বাস নম্বর দেননি বাস অপারেটররা। এটা দেওয়ার কথা তাঁদেরই। স্কুলের এ দায়িত্ব নয়।” অপারেটররা অবশ্য সেই দায় স্বীকার করলেও স্কুল কর্তৃপক্ষ তাদের দায় পুরোপুরি অস্বীকার করল কীভাবে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।

[আরও পড়ুন: চলার শক্তি নেই, বন্ধুদের কাঁধে চেপেই রোজ কলেজে যান এই যুবক! ভাইরাল ভিডিও]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ