অর্ণব আইচ: মুখ ফিরিয়ে নিলেন নিকটাত্মীয়রা। মৃত বৃদ্ধা আদৌ করোনায় আক্রান্ত নন। আক্রান্ত তাঁর বাড়ির লোকেরা। তবু সংক্রমণের আতঙ্কে নিকটাত্মীয়রা মোবাইল ‘সুইচড অফ’ করে দিলেন। কেউ শ্মশানযাত্রী হতে রাজি নন। কীভাবে মায়ের দেহ সৎকার হবে, তাও বুঝতে পারছিলেন না ছেলে ও পুত্রবধূ। এভাবেই সকাল থেকে দেহটি পড়ে ছিল বাড়িতে। শেষপর্যন্ত ‘পরমাত্মীয়’ হয়ে পাশে এসে দাঁড়াল পুলিশই। রবিবার দুপুরে কলকাতার দক্ষিণ শহরতলির পাটুলি থানার পুলিশকর্মীরা শ্মশানযাত্রী হয়ে সৎকার করলেন বৃদ্ধার দেহের। তখন তাঁদের সঙ্গে ছিলেন বৃদ্ধার এক দূর সম্পর্কের আত্মীয়, যাঁর সঙ্গে খুব কমই যোগাযোগ ছিল পরিবারটির। প্রত্যেক শ্মশানযাত্রীর করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করছে পুলিশ ও পুরসভা।
পুলিশ জানিয়েছে, বৃদ্ধার বাড়ি পাটুলির রবীন্দ্রপল্লিতে। বাড়িতে রয়েছেন তাঁর ছেলে, পুত্রবধূ ও নাতি-নাতনিরা। তিনি ছাড়া বাড়ির বাকি চারজনই আক্রান্ত করোনায়। বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগে এদিন সকালে বাড়িতে মৃত্যু হয় ৮৩ বছর বয়সের ওই বৃদ্ধার। তাঁর ছেলে পুরসভা ও স্বাস্থ্যদপ্তরে ফোন করেন। যেহেতু বৃদ্ধা আক্রান্ত নন, তাই তাঁর সৎকারের ব্যবস্থা পরিবারকে করতে হবে বলে জানানো হয়। সৎকারের সঙ্গে যুক্ত একটি সংস্থাও জানিয়ে দেয়, তাদের কাছে দেহ নিয়ে যাওয়ার মতো গাড়ি নেই। পরিবারের পক্ষ থেকে ফোন করা হয় নিকটাত্মীয়দের। কিন্তু সেই আত্মীয়রা শ্মশানযাত্রী হতে নারাজ। প্রতিবেশীদের অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু বাড়ির চৌকাঠ স্পর্শ করতেও রাজি নন প্রতিবেশীরা। এর মধ্যেই নিকটাত্মীয়রা ফোন ‘সুইচড অফ’ করে দেন। নিরুপায় হয়ে অসহায় পরিবার ফোন করে পুলিশকে। পাটুলি থানার ওসি সৌম্য ঠাকুরের নির্দেশে সঙ্গে সঙ্গেই একটি পুলিশের টিম বাড়ির সামনে যায়। কোভিড নেগেটিভ হওয়া সত্ত্বেও ডেথ সার্টিফিকেট দিতে চাননি কোনও চিকিৎসক। পুলিশ এলাকার এক চিকিৎসককে রাজি করিয়ে ডেথ সার্টিফিকেটের ব্যবস্থা করে।
[আরও পড়ুন: রিয়া চক্রবর্তীর জন্য বাঙালি মেয়েদের কদর্য আক্রমণ, লালবাজারের দ্বারস্থ মহিলা]
এর মধ্যেই পরিবারের লোকেদের কাছ থেকে পুলিশ আধিকারিকরা এক দূর সম্পর্কের আত্মীয়র ফোন নম্বর পান। তাঁর সঙ্গে খুব বেশি যোগাযোগ ছিল না পরিবারটির। ফোন করে পুলিশ বাঘাযতীন থেকে তাঁকে নিয়ে আসে। স্থানীয় পুরসভার সঙ্গে আলোচনা করে পুলিশ গাড়ি জোগাড় করে। দূর সম্পর্কের ওই আত্মীয়কে সঙ্গে নিয়েই পাটুলি থানার সিভিক ভলান্টিয়ার ও পুলিশকর্মীরা শ্মশানযাত্রী হন। গড়িয়া শ্মশানে বৃদ্ধার মুখাগ্নি করেন ওই আত্মীয়ই। সামনে দাঁড়িয়ে থেকে বৃদ্ধার শেষকৃত্য সম্পন্ন করল ‘পরমাত্মীয়’ পুলিশ।