Advertisement
Advertisement

Breaking News

Complimentary breakfast

শুধু ‘কমপ্লিমেন্টারি’ প্রাতঃরাশেই পেট ভরাতেন, অভিজাত হোটেলে থেকে আত্মহত্যা মায়ের, অসুস্থ মেয়ে

গত ৮ জুন দুপুরে হোটেলে চেক ইন করেন মা ও মেয়ে।

Poverty stricken Kolkata woman survived on complementary breakfast only । Sangbad Pratidin
Published by: Krishanu Mazumder
  • Posted:July 21, 2023 6:35 pm
  • Updated:July 21, 2023 6:38 pm

অর্ণব আইচ: মধ‌্য কলকাতার কিড স্ট্রিটের (Kyd Street) অভিজাত হোটেলের ডিলাক্স রুমে থাকতেন মা ও মেয়ে। প্রত্যেকদিন ঘরের ভাড়া ৪৮০০ টাকা। কিন্তু পেট ভরাতেন শুধু হোটেলের ‘কমপ্লিমেন্টারি’ প্রাতঃরাশ খেয়ে। সারা দিন ও রাতে আর কিছু খেয়ে ‘টাকা নষ্ট’ করতে চাইতেন না তাঁরা।

এভাবে টানা ৩৮ দিন বাতানুকূল বিলাসবহুল ঘরে থাকার পর ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মঘাতী হলেন মা পলি মিত্র (৫৫)। মেয়ে এসএসকেএম হাসপাতালে মৃতু‌্যর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। পুলিশ জানিয়েছে, কিড স্ট্রিটের ওই পাঁচতলা হোটেলের চারতলায় ৩০৩ রুমে থাকতেন পলি ও তাঁর মেয়ে। বুধবার প্রাতঃরাশের জন‌্য দরজায় টোকা দেন হোটেলের কর্মীরা। মেয়ের মোবাইলে ফোন করলেও কোনও সাড়া পাননি। এর পরই তাঁরা ফোন করেন নিউ মার্কেট থানায়। থানার পুলিশ রাতে ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে দরজা খুলে দেখেন, মেঝেয় উপুড় হয়ে পড়ে আছেন মা পলি। মেয়ে বিছানায় একপাশ ফিরে শুয়ে রয়েছেন। জ্বলছে ঘরের আলো। চলছে বাতানুকূল যন্ত্র ও ফ‌্যান।

Advertisement

[আরও পড়ুন: উবে গেল অভিমান! মমতার ডাকে একুশের মঞ্চে হাজির ‘বেসুরো’ শুভাপ্রসন্ন]

এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে পলিকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। যুবতীর চিকিৎসা চলছে। মেঝের উপর পড়ে ছিল ঘুমের ওষুধের প্রচুর ফাঁকা পাতা।ময়নাতদন্তের পর চিকিৎসকরা পুলিশকে জানিয়েছেন, ঘুমের ওষুধ খেয়েছিলেন মহিলা। তবে মৃত্যু হয়েছে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে। ঘরের ভিতর থেকে পাওয়া যায় ন’পাতার সুইসাইড নোট।

Advertisement

সেখানে লেখা রয়েছে বিভিন্ন ধরনের অসঙ্গতিপূর্ণ কথা। সেখানে সোশ‌্যাল মিডিয়ার বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন মেয়ে। ইন্সটাগ্রাম ও ফেসবুকে তঁার দু’টি নামে অ‌্যাকাউন্ট রয়েছে। সেখানে  অন‌্যদের বিভিন্ন পোস্ট ও কমেন্ট তঁাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলেছিল।  বিজ্ঞানের অপব‌্যবহার করা হচ্ছে বলে নোটে লেখা রয়েছে। এইসব পোস্টই আত্মহত‌্যার পথে নিয়ে যায় বলে দাবি তাঁদের। কিন্তু ঘুমের ওষুধ খাওয়ার পিছনে আর্থিক কারণ, এমনকী মহিলার ছেলের চাপ ছিল, এমন সম্ভাবনাও রয়েছে। হোটেলের আধিকারিক রাজা পাত্র জানান, গত ৮ জুন দুপুরে দক্ষিণ শহরতলির হরিদেবপুরের ব‌্যানার্জিপাড়ার বাসিন্দা পলি ও তাঁর মেয়ে হোটেলে চেক ইন করে জানান, তাঁদের বাড়ি ভেঙে নির্মাণ হচ্ছে বলে হোটেলে এসে থাকছেন।

সাতদিন অন্তর রুমের ভাড়া মেয়ে এসে এটিএম কার্ডে এসে মিটিয়ে দিতেন। ১৫ জুলাই পর্যন্ত ১ লাখ ৯৯ হাজার টাকা রুমের ভাড়া বাবদ মেটানো হয়। শেষ ভাড়া মেটান পলি নিজেই। হোটেলে বাইরের খাবার আনা বারণ। প্রতে‌্যকদিন বেশি করে কমপ্লিমেন্টারি ব্রেকফাস্ট খেতেন। কিন্তু সারাদিন কেউ তাঁদের কিছু খেতে দেখেননি। শুধু দিন পাঁচেক এক প্লেট করে ফ্রায়েড রাইস-চিলি চিকেনের অর্ডার দেন। গত ১৮ জুলাই পলি সকালে বাইরে বেরিয়ে রাতে ফেরেন। এর আগেও কয়েকদিন মা ও মেয়ে সারাদিনের জন‌্য বাইরে বের হন। পলি জানিয়েছিলেন, তাঁর মায়ের কাছে গিয়েছেন তাঁরা। এর মধে‌্য একদিন এক যুবক পলিদের সঙ্গে হোটেলে দেখা করতে এসেছিলেন। তাতেই সৃষ্টি হয় রহস‌্য।

পুলিশ জেনেছে, পলির স্বামী স্বপন মিত্র মোটর ভেহিক‌্যালসে এজেন্টের কাজ করতেন। হরিদেবপুরে একটি বহুতলের একতলায় ফ্ল‌্যাট কেনেন। ৬ বছর আগে স্বপনবাবুর মৃতু‌্যর পর আয়ের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। ব‌্যানার্জিপাড়ার বাসিন্দারা জানান, মা ও  মেয়ের বেশিরভাগ দিনই খাওয়া জুটত না। লক ডাউনের সময় প্রতিবেশীরা তাঁদের খাবার জোগাড় করে দিয়েছেন। ৬ মাস আগে উত্তর ২৪ পরগনার গোবরডাঙায় বাপের বাড়ির সাড়ে তিন কাঠা জমি বিক্রির ভাগ হিসাবে ৬ লাখ টাকা পান। কিন্তু গত চার মাস ধরেই বাড়ি ছেড়ে থাকছিলেন বিভিন্ন হোটেলে। পুলিশের কাছে খবর, পলি মিত্রর এক ছেলেও রয়েছে। কিন্তু ছেলে বিয়ে করে কালীঘাটের দিকে পরিবারে নিয়ে থাকতে শুরু করেন।

মা, বোনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। কিন্তু ওই ফ্ল‌্যাটটির ভাগ পেতে চাপ দিতে থাকেন ছেলে। সেই কারণেই মা-মেয়ে বাড়িছাড়া হন কি না, পুলিশ তা জানার চেষ্টা করছে। হোটেলে যে যুবক তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন, তিনি পলির ছেলে কি না, তা জানতে চায় পুলিশ। তাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে সিসিটিভির ফুটেজ। পলির ভাইয়ের সন্ধান মিললেও এখনও কেউ তাঁর দেহে দাবিদার হননি। পলির অসুস্থ মেয়ের মানসিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে তাঁর চিকিৎসার ব‌্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

[আরও পড়ুন: আমি চর নই, পাকিস্তানে পাঠাবেন না’, মোদি ও যোগীর কাছে আরজি সীমা হায়দারের]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ