শুভময় মণ্ডল: ভোটের আগে রাজ্যের পুলিশ পর্যবেক্ষক হিসাবে তাঁর নিয়োগের নড়েচড়ে বসে বাংলার রাজনৈতিক মহল। বিরোধী দলগুলির রাজ্যে সব বুথকে অতি স্পর্শকাতর ঘোষণার দাবি খারিজ করে দিয়েছেন তিনি। তবে বাংলায় সমস্যা রয়েছে সেকথা জানিয়ে রাজ্যে ৭ দফা ভোটের ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। সেই বিবেক দুবের ঝুলিতে রয়েছে বিরাট সাফল্য। সিবিআইয়ের যুগ্ম অধিকর্তা থাকাকালীনই দেশের এক অন্যতম চর্চিত মামলার তদন্তভার ছিল তাঁর কাঁধে। এবং তা অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে সামলেছিলেন অকুতোভয় এই দুঁদে গোয়েন্দা। তাই এমন আধিকারিকের উপরই ভরসা রেখে বাংলায় পাঠিয়েছে কেন্দ্র, বলে মত ওয়াকিবহাল মহলের। কিন্তু কী সেই সাফল্য?
২০০৪ সালের ঘটনা। গোধরা পরবর্তী সময়ে গুজরাটের একাধিক জায়গায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার আঁচ বর্তমান। সেই সময় বিলকিস বানো গণধর্ষণ কাণ্ডের তদন্তভার পেয়েছিলেন বিবেক দুবে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে গুজরাটে যান সিবিআইয়ের তৎকালীন যুগ্ম অধিকর্তা। তৈরি করেছিলেন ৮ জন সাহসী অফিসারের এক বিশেষ টিম। রাধিকাপুরের বাসিন্দা ১৯ বছরের তরুণী বিলকিস বানো তখন পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। সেইসময় তাঁরই গ্রামের কিছু লোকের হাতে গণধর্ষণের শিকার হন বিলকিস বানো। থানায় অভিযোগ দায়েরের পর অন্তত চারবার তাঁর বয়ান রেকর্ড করেন পুলিশ আধিকারিকরা। কিন্তু কেস ফাইল হয় না। তখন মামলা গড়ায় আদালত পর্যন্ত। সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। তদন্তভার পড়ে এই বিবেক দুবের কাঁধে। নিজের টিম নিয়ে যখন বিলকিস বানোর গ্রামে পৌঁছান তখন প্রায় নতুন করে তদন্ত শুরু করার উপক্রম।
[আরও পড়ুন: বাংলায় সমস্যা রয়েছে, তাই ৭ দফায় ভোটের ব্যাখ্যা দিলেন বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক]
তাঁর টিমের এক এসপি পদমর্যাদার আধিকারিক সেদিনের ঘটনা স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে জানিয়েছেন, দাঙ্গাবিধ্বস্ত গ্রামবাসীরা খুবই আতঙ্কে ছিলেন। গণধর্ষণ কাণ্ডের তদন্তে কেউই মুখ খুলতে রাজি ছিলেন না। সাক্ষ্যপ্রমাণ লোপাটের মতো ঘটনা তো ছিলই তার সঙ্গে দোসর হয়েছিল গ্রামবাসীদের মুখে কুলুপ আঁটা। তবে সেইসময় খুব ঠান্ডা মাথায় তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যান ‘টিম লিডার’ বিবেক দুবে। গ্রামবাসীদের ধীরে ধীরে আশ্বস্ত করে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য রাজি করান বিবেক দুবে। সেই টিমের এক আধিকারিক যোগেশ গুপ্তা বর্তমানে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের বিশেষ অধিকর্তা। জানা গিয়েছে, গ্রামবাসীদের কথা বলানোই ছিল প্রধান চ্যালেঞ্জ বিবেক দুবের কাছে। একইসঙ্গে বিভিন্ন জায়গা থেকে হুমকি আসছিল সিবিআইয়ের আধিকারিকদের কাছে যাতে তদন্ত বন্ধ হয়। পাশাপাশি তদন্ত দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করার জন্য বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার থেকেও চাপ আসছিল তাঁদের কাছে। মাঝেমাঝেই হুমকির ভয়ে সাক্ষী ভেঙে পড়ার মতো ঘটনাও ঘটছিল।
কিন্তু লক্ষ্যে অবিচল থেকে চার-পাঁচ মাসের মধ্যে তদন্ত সম্পূর্ণ করে দোষীদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হন বিবেক দুবে এবং তাঁর টিম। আদালতে মামলার ট্রায়ালও শুরু হয়। তখন এখনকার মতো এত রমরমা না থাকলেও সংবাদমাধ্যমের সংস্পর্শ থেকে নিজের টিমকে দূরেই রেখেছিলেন বিবেক দুবে। একপ্রকার নিঃশব্দে বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন বিবেক দুবে। এবার বাংলায় পুলিশ পর্যবেক্ষকের দায়িত্বে আসার পর বিরোধীদের দাবি খারিজ করে দিয়েছেন তিনি। বোঝাই যাচ্ছে, স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতেই এবারের ইনিংসও টানবেন বিবেক দুবে।
[আরও পড়ুন: রাজ্যের নির্বাচনী পর্যবেক্ষক আরএসএস ঘনিষ্ঠ কে কে শর্মার বদলে এলেন বিবেক দুবে]