রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: নাগরিকত্ব বিল পাস করার দাবিতে শরণার্থীদের দিয়ে বাংলা থেকে প্রতিদিন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে চিঠি পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন অমিত শাহ। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সেই নির্দেশ কার্যকর করতে নেমে পড়ল বঙ্গ বিজেপি। দ্রুত নাগরিকত্ব বিল পাস করার দাবিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দপ্তরে এককোটিরও বেশি চিঠি পাঠাচ্ছে তারা। দলের মহিলা মোর্চাই ২০ থেকে ২৫ লক্ষ চিঠি পাঠাবে। এই চিঠি পাঠানোর মধ্য দিয়ে নাগরিকত্ব বিল পাসের দাবিকে আরও জোরদার করে, এনআরসির পথকে প্রশস্ত করাই বিজেপির লক্ষ্য বলে মনে করা হচ্ছে।
[আরও পড়ুন: ২৩ হাজার অভিযোগের কিনারা, কলকাতা পুলিশকে ধন্যবাদ জানালেন লন্ডনের সিপি]
লোকসভা ভোটের প্রচারে এসে বাংলায় এনারসির পক্ষে সওয়াল করেছিলেন নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহরা। এরপর থেকে বাংলায় এনআরসি হবেই, লাগাতার বলে চলেছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় থেকে রাজ্য নেতারা। গত ১ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গে এসে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের সভায় জাতীয় নাগরিক পঞ্জীকরণ বা এনআরসির পক্ষে জোরদার সওয়াল করেছিলেন অমিত শাহ। বলেছিলেন, ‘বাংলায় এনআরসি হবেই। তবে তার আগে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল চালু করা হবে। যাতে যাঁরা শরণার্থী, তাঁদের নাগরিকত্ব পেতে অসুবিধা না হয়।’ তাই নাগরিকত্ব বিল চালুর দাবিতে পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রতিদিন শরণার্থীরা যাতে ১ লক্ষ চিঠি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠান, সেটা সুনিশ্চিত করার জন্য আলাদা বৈঠক করে দলীয় নেতৃত্বকে নির্দেশ দিয়েছিলেন।
বর্তমানে রাজ্য বিজেপির সাংগঠনিক নির্বাচন প্রায় শেষের পথে। নভেম্বরের ১৫ তারিখের মধ্যেই জেলাস্তরের নির্বাচনও প্রায় হয়ে যাবে। তারপরই নাগরিকত্ব বিল পাসের দাবিতে শাহর দিয়ে যাওয়া নির্দেশ কার্যকর করতে নেমে পড়বেন দিলীপ ঘোষরা। এপ্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু বলেন, ‘শীতকালীন অধিবেশন শুরু হবে। সেই সময় নাগরিকত্ব বিল পাসের দাবিতে বাংলা থেকে পাঠানো চিঠিও পৌঁছবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে। নভেম্বর থেকেই আমরা এই কাজে জোর কদমে নেমে পড়ছি।’
[আরও পড়ুন:পুলিশ আবাসনে শব্দবাজি রুখতে মরিয়া প্রশাসন, শহরজুড়ে বিলি পোস্টার ও লিফলেট]
বাংলায় এনআরসির বিরুদ্ধে পথে নেমেছে তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, বাংলায় কোনও ভেদাভেদ নয়। এনআরসি হবে না। আর ঠিক এই সময়ে বিজেপি নেতৃত্ব পালটা প্রচার শুরু করতে চাইছে যে এনআরসি নিয়ে আতঙ্কের কোনও কারণ নেই। এটা শরণার্থীদের বোঝাতে নভেম্বর থেকেই বাড়ি বাড়ি যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে গেরুয়া শিবির। এনআরসি ইস্যুতে এটা বিজেপির পালটা প্রচার কৌশল বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ, ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি অন্যতম ইস্যু হতে চলেছে। তাই এখন থেকে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের পক্ষে প্রচার চালাতে মাঠে নেমে পড়তে চাইছে গেরুয়া শিবির।
বিজেপির মহিলা মোর্চার রাজ্য সভানেত্রী ও হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘নাগরিকত্ব বিল পাসের দাবিকে সামনে রেখে শরণার্থীদের কাছে গিয়ে কথা বলব। তাঁদের মাধ্যমে ২০ থেকে ২৫ লক্ষ চিঠি আমরা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠাব।’ দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিজেপির জেলা কমিটিগুলি তো বটেই, দলের শাখা সংগঠন অর্থাৎ সমস্ত মোর্চাই নাগরিকত্ব বিল পাসের দাবিতে পোস্ট কার্ড পাঠাবে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে।