Advertisement
Advertisement

‘ছেলেটাকে কি পুলিশ তুলে নিয়ে যাবে?’, অসমে আতঙ্কে কাঁটা একরত্তির মা-বাবা

মা-বাবা ভারতীয়, আর একরত্তি ছেলেটা বাংলাদেশি হয়ে গেল কী করে!

Assam Tragedy: 5 year old Son's name excluded from NRC, Parents get anxious
Published by: Saroj Darbar
  • Posted:July 31, 2018 3:59 pm
  • Updated:August 1, 2018 3:59 pm

মণিশংকর চৌধুরি, গুয়াহাটি: ছেলেটাকে কি তাহলে পুলিশ তুলে নিয়ে যাবে! ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখবে? কী করেই বা মাকে ছেড়ে থাকবে একরত্তি ছেলে? তাঁরাই বা থাকবেন কী করে? চোখেমুখে আতঙ্ক আর অজস্র প্রশ্নের ঘোরাঘুরি। কিন্তু কোথাও কোনও উত্তর নেই। মাত্র একটা তালিকা প্রকাশ। সেই ঝড়েই যেন তছনছ হতে বসেছে বাণীব্রত দেবের সাজানো সংসার।

[  নাগরিকপঞ্জি থেকে বাদ প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির ভাইয়ের পরিবারের নাম, তুঙ্গে বিতর্ক ]

Advertisement

সোমবার প্রতিদিনের মতো স্কুলে গিয়েছিল বছর পাঁচেকের বেদান্ত দেব। গোলাঘাট জেলার সিংমারি শহরে তার বাড়ি। বাড়িতে আছে মা-বাবা আর বোন। স্থানীয় প্রণবানন্দ বিদ্যাপীঠে প্রথম শ্রেণির ছাত্র সে। সোমবার আর পাঁচটা দিনের মতোই বাবা তাকে স্কুলে দিয়ে এসেছিল। তখন কে জানত কয়েকঘণ্টার মধ্যেই সে আর এ দেশের ‘কেউ নয়’ হয়ে উঠবে! ছেলেকে স্কুলে দিয়ে এসে বাণীব্রতবাবু এনআরসি সেবাকেন্দ্রে যান। যাচাই করে দেখেন সকলের নাম নাগরিকপঞ্জিতে এসেছে কি না। দেখেন তাঁর নিজের নাম, স্ত্রী আর মেয়ের নাম এসেছে। কিন্তু একরত্তি বেদান্তের নাম আসেনি। আকাশ ভেঙে পড়ে মাথায়। মা-বাবা ভারতীয়, আর একরত্তি ছেলেটা বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী হয়ে গেল কী করে! তড়িঘড়ি আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। তাঁকে জানানো হয়, যেরকম তথ্য এসেছে তার ভিত্তিতেই নাগরিকপঞ্জি তৈরি হয়েছে। আপাতত আর কিছুই করার নেই। ৭ আগস্ট থেকে ভেরিফিকেশনের কাজ শুরু হচ্ছে। তখনই এ ব্যাপারে যা করার করতে হবে।

Advertisement

পরাধীন ভারতে স্কুল তৈরি পূর্বসূরির, স্বাধীন দেশে ঠাঁই নেই গোটা পরিবারের ]

তারপর থেকেই আতঙ্ক তাড়া করে ফিরছে বাণীব্রতবাবুকে। হাতে ছেলের জন্ম সার্টিফিকেট নিয়ে বলছেন, অসম সরকারই তো এই সার্টিফিকেট দিয়েছে। তাহলে ছেলেকে কেন বাংলাদেশি করে দেওয়া হল? বাণীব্রতবাবুর প্রশ্নের সামনে অসহায় প্রতিবেশীরাও। দীর্ঘদিন ধরেই দেখছেন তাঁদের। আজ যে আচমকা এমন সংকটের মুখে পড়তে হবে তাঁকে, তা হয়তো কেউ কল্পনাও করেননি। অনেকেই আশ্বাস দিয়ে বলছেন, ভেরিফিকেশনের সময়ই হয়তো এই ভুল শুধরে নেবে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে অন্যত্র। বাণীব্রতবাবুর আশঙ্কা, যদি তখনও কিছু না হয়, তাহলে কি তাঁর দুধের শিশুকে পুলিশ তুলে নিয়ে যাবে? ডিটেনশন ক্যাম্পে আদৌ কি থাকতে পারবে ওই একরত্তি বাচ্চা? এই মুহূর্তে অসমে প্রায় ছ’টি ডিটেনশন ক্যাম্প আছে। গোয়ালপাড়া, কোকরাঝাড়, শিলচর, নওগাঁও-সহ একাধিক জায়গায় আছে এই ক্যাম্প। মোটামুটি ডিস্ট্রিক্ট জেলগুলিকেই পরিবর্ধিত করে এগুলো বানানো হয়েছে। জেলবন্দি আর ডিটেশন ক্যাম্পে যাঁদের ঠাঁই হয়েছে- সব মিলিয়ে তিল ধারণের জায়গা নেই প্রায়। চূড়ান্ত অস্বাস্থ্যকর অবস্থা সেখানে। সেই পরিবেশের কথা ভেবেই শিউরে উঠছেন বাণীব্রতবাবু। যদি নিয়মের গেরোয় কয়েক ঘণ্টার জন্যও একরত্তি গৈরিককে সেখানে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়, তবে কী পরিস্থিতি হবে, তা ভেবেই চোখ বন্ধ করে ফেলছেন উদভ্রান্ত বাণীব্রতবাবু। এদিকে ভেরিফিকেশনের সময় এনআরসি সেবাকেন্দ্রের সামনে হাজার হাজার মানুষের লাইন থাকবে। সেই ভিড়ে দাঁড়িয়েই নিজের নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে হবে একরত্তি গৈরিককে। মা-বাবার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লেও সে সবের রেশ নেই খুদের চোখেমুখে। এ দেশ যে আর তার নিজের দেশ নেই, তা আর দুধের শিশু বুঝবে কী করে!   

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ