সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আখরোট কিংবা সবজিপাতি দিয়ে তৈরি পোশাক! আর এই পোশাকের আয়ু শেষ হয়ে আসলেও কুছ পরোয়া নেহি! এরপর চাইলেই মাটি খুঁড়ে ফেলে দিন। মিশে যাবে ১৮০ দিনের মধ্যে। অবাক হবেন না! গুরুগ্রামের এক জুটি তাঁদের ফ্যাশন ব্র্যান্ডের জন্য এরকম অদ্ভূত ভাবনাই ভেবেছেন। তবে আপাতদৃষ্টিতে তা আপনার অদ্ভূত মনে হলেও তাঁদের ভাবনা যে সুদূরপ্রসারী, তাতে কোনও সন্দেহ নেই! পরিবেশের সুরক্ষার্থেই পুরোপুরি জৈব কিংবা ভেষজ পোশাক বানানোর পরিকল্পনা এসেছে তাঁদের মাথায়।
হিতেশ দেশপাণ্ডে আর হিমাংশু কুলহারি, দুজনেই পরিবেশপ্রেমী এবং সেই সঙ্গে পশুপ্রেমীও বটে! তাঁদের কথায়, বেশিরভাগ টেক্সটাইল ব্র্যান্ডই পোশাক তৈরির ক্ষেত্রে ভিন্নরকম কেমিক্যাল ব্যবহার করে, যা পরিবেশ পক্ষে মোটেই স্বাস্থ্যকর নয়। উপরন্তু পোশাক ডাই অর্থাৎ রং করতে গেলেও ব্যাপকহারে জল দূষিত হয়। পলিয়েস্টারের মতো বেশকিছু সিন্থেটিক ফ্যাব্রিকের অবশিষ্টাংশের জায়গা হয় পোশাক কারখানা থেকে নদী কিংবা সমুদ্রে। আর সেসমস্ত বিষয় মাথায় রেখেই পরিবেশবান্ধব ভেষজ পোশাক তৈরির ভাবনা আসে এই জুটির।
[আরও পড়ুন: ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ বারোটা বাজাচ্ছে ত্বকের? জেনে নিন কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা]
পোশাকের বোতাম তৈরি হয় কখনও আখরোট, আবার কখনও বা শুকনো সবজি দিয়ে। সবটাই ভেষজ উপদান দিয়ে তৈরি। কাজেই মাটিতে মিশে যাওয়াও সহজ। প্রসঙ্গত, পোশাক ডাই করার কিংবা রং করার জন্য এখনও কোনওরকম পরিবেশবান্ধব উপায় বের করতে পারেননি তাঁরা। আর তাই তাঁদের কারখানায় তৈরি সব পোশাকই সাদা বলে জানিয়েছেন হিতেশ ও হিমাংশু। বছর দুয়েক আগে শুরু করা তাঁদের এই ভেষজ পোশাক ব্র্যান্ডের চাহিদা এখন ব্রিটেন, আমেরিকা, দুবাই, নরওয়ের মতো দেশেও তৈরি হয়েছে।
একটা সময় ছিল, যখন গাছের ছাল-বাকলকেই পোশাক বানিয়ে লজ্জা নিবারণ করত আদিম মানুষ। পশুহত্যা করে চামড়ার ব্যবহারও শুরু হয়েছিল সেই আদিমযুগেই। তারপর ধীরে ধীরে তুলো থেকে সুতোর আবিষ্কার। এদিকে পরিধানের ইতিহাসেও বিবর্তনের চাকা ঘুরল দ্রুত গতিতে। রেশম থেকে শুরু করে পলিয়েস্টার, এখন সব ধরনের পোশাকের ম্যাটেরিয়ালের সঙ্গেই মানুষ পরিচিত। কিন্তু বিজ্ঞানের অগ্রগতি মানুষকে যেভাবে প্রকৃতি থেকে কৃত্রিমতার দিকে ঠেলে দিয়েছে, তাতে জনজীবনে অগ্রগতি দেখা দিলেও আখেড়ে তা যে পরিবেশের জন্যই মারাত্মক, সে ভাবনা বোধহয় উন্নতির শিখরে পৌঁছতে পৌঁছতে লোপ পেয়েছে মানুষের মস্তিষ্ক থেকে। সাদরে কাছে টেনে নিয়ে কৃত্রিমতার সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতানোয় পরিবেশ দূষণও বাড়ছে মারাত্মক হারে। আর সেই প্রেক্ষিতেই গুরুগ্রামের এই পরিবেশপ্রেমী জুটির অভিনব ভাবনায় উঠে এল জৈব পোশাকের ভাবনা।