রঞ্জন মহাপাত্র, দিঘা: দিঘার সমুদ্রপাড়ে ঝাউগাছের মাঝে পিকনিক করতে হলে এবার আগাম অনলাইনে পার্কিং বুক করতে হবে পর্যটকদের। সেইসঙ্গে নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া যত্রতত্র পিকনিক করা যাবে না। বড়দিনের ছুটির আগেই এমনই নির্দেশিকা জারি করেছে দিঘা-শংকরপুর উন্নয়ন পর্ষদ। দিঘা-শংকরপুর উন্নয়ন পর্ষদের সদস্য দেবব্রত দাস জানান, দিঘাকে দূষণমুক্ত রাখতে পিকনিকের স্থান নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট স্থানের বাইরে পিকনিক করা যাবে না। কেউ যদি নির্দিষ্ট স্থানের বাইরে পিকনিক করেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেইসঙ্গে যানজট এড়াতে পার্কিং অনলাইনে বুক করে পিকনিক করতে আসতে হবে। পিকনিকের জন্যেই শুধুমাত্র অনলাইনে পার্কিং বুক করতে হবে। হোটেলে আসা পর্যটকেরা এই আওতায় পড়বে না।
[দিঘার হোটেলে নেওয়া যাবে না অতিরিক্ত ভাড়া, চরম হুঁশিয়ারি মুখ্যমন্ত্রীর]
দিঘা-শংকরপুর উন্নয়ন পর্ষদের ওয়েবসাইটে গাড়ির নম্বর দিয়ে পার্কিং বুক করলে তবেই পিকনিক করা যাবে বলে এক নির্দেশিকায় জানিয়ে দিয়েছে দিঘা-শংকরপুর উন্নয়ন পর্ষদ। পাশাপাশি অনলাইনেই পার্কিং ভাড়া মিটিয়ে দিতে হবে পর্যটকদের। পিকনিকের জন্যে একসঙ্গে ১৪০টি বাস এবং ৭০টি ছোট গাড়ি পার্কিং বুক করতে পারবে। মূলত যানজট সমস্যা এড়াতে উন্নয়ন পর্ষদ এমনই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আগামী ২০ ডিসেম্বর থেকে উন্নয়ন পর্ষদের www.dsda.org.in-এই ওয়েবসাইট থেকেই পার্কিং বুক করা যাবে। ২০ ডিসেম্বর থেকে দিঘার সৈকতে শুরু হচ্ছে বেঙ্গল বিচ ফেস্টিভ্যাল ২০১৭। চলবে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত। একই সঙ্গে জেলার বই মেলা, সবলা মেলা, হস্ত শিল্প মেলাও চলবে পর্যটন শহরে। আবার ২৩ ডিসেম্বর থেকে নিউ দিঘায় শুরু হচ্ছে উইন্টার কার্নিভ্যাল ২০১৭। চলবে ৩১ ডিসম্বর পর্যন্ত। ফলে ২০ ডিসেম্বর থেকে ৩১ডিসেম্বর পর্যন্ত উৎসবের দিনগুলিতে পর্যটকের ভিড় বাড়বে। পর্যটকের ভিড় বাড়লেই বাড়বে ছোট বড় যানবাহনের দাপট। আর তাই আগে থেকেই যান নিয়ন্ত্রণ করতে পিকনিকের গাড়িগুলিতে নিয়মের বেড়াজালে আটকানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে নিউ দিঘার নির্দিষ্ট পিকনিক কেন্দ্র ছাড়া অন্যকোথাও রান্না করা যাবেনা বলেও নির্দেশিকা জারি করেছে উন্নয়ন পর্ষদ।
[ডিসেম্বরের কড়া শীতে জোড়া কার্নিভাল, নববর্ষের উচ্ছ্বাসের গন্তব্য দিঘা]
ন্যাশনাল গ্রীন ট্রাইবুনাল ইতিমধ্যে পরিবেশ দূষণ রুখতে সৈকত শহর দিঘায় পলিথিন ও থার্মোকল ব্যবহার নিষিদ্ধ করার জন্যে উন্নয়ন পর্ষদকে নির্দশ দিয়েছে। গ্রিন ট্রাইবুনালের নির্দেশমত উন্নয়ন পর্ষদও দিঘায় পলিথিন ও থার্মোকল ব্যবহার বন্ধ করার নির্দেশিকা জারি করেছে। এমনকি পর্যটকের পলিথিন বা থার্মোকল ব্যবহার করছেন কি না তা নজরদারি করার জন্যে কর্মীও নিয়োগ করেছে। ওই কর্মীরা দিঘা বর্ডার ও দিঘা গেটের কাছে দাঁড়িয়ে পর্যটকদের মূলত পিকনিকের গাড়িগুলিতে নজরদারি চালানোর কাজ করে। তারপরেও নজর এড়িয়ে পর্যটকেরা দিঘা পলিথিন ও থার্মোকল ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ। যার ফলে প্রতিনিয়ত পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। সৈকত শহরের পরিবেশ দূষণ রুখতে এবার বড়দিন ও বর্ষবরণের আগেই পর্যটকদের পিকনিকের উপর লাগাম পরাতে চাইছে উন্নয়ন পর্ষদ। সে কারণে নিউ দিঘার পিকনিক কেন্দ্র ছাড়া অন্য কোথাও পর্যটকেরা রান্না করতে পারবেন না বলে নির্দেশিকা জারি করেছে উন্নয়ন পর্ষদ। সেইসঙ্গে বলা হয়েছে, পর্যটকেরা চাইলে অন্যত্র রান্না করে এনে যেকোন জায়গায় বসে খাওয়ার খেতে পারেন। তবে পলিথিন ও থার্মোকল কোনভাবেই ব্যবহার করতে পারবেন না।
পর্ষদের এমন নির্দেশিকায় পর্যটকদের কপালে কিছুটা হলেও ভাঁজ ধরতে শুরু করেছে। কারণ, ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকেই দিঘার ঝাউজঙ্গলের মধ্যে শুরু হয়ে যায় পিকনিক। ২৪, ২৫ এবং ৩১ ডিসেম্বর এবং ১ জানুয়ারি পিকনিকের ভিড় আরও বাড়ে। তাই যে যেখানে সুযোগ পায় সেখানেই বসে পড়েন উনুন জ্বালিয়ে পিকনিক করতে। যত্রতত্র পিকনিক করা যাবে না উন্নয়ন পর্ষদ এমন নির্দেশিকা জারি করার পরে ঝাউজঙ্গলের মধ্যে পিকনিকের সেই ভিড় আর নজরে পড়বে না। সেইসঙ্গে দিঘার পাড় বরাবর সৈকত এলাকাও পরিষ্কার থাকবে বলে দাবি উন্নয়ন পর্ষদের।