‘প্রাণের আরাম। মনের আনন্দ।’ চোখের শান্তি। সবুজ পাতায় সেজে উঠুক অন্দরমহল। লিখছেন মানসী দাস মণ্ডল৷
আকাশ ছুঁতে চাওয়া ইমারত থেকে দেখতে গেলে যখন আকাশ ছোট পড়ে যায়, তখন খানিক স্বস্তির নিঃশ্বাস বয়ে আনে জীবন্ত সবুজ রং। ঘরের দেওয়াল জুড়ে প্লাস্টিক পেন্ট নয়, অন্দর জুড়ে সতেজ পাতাবাহার-এর কথাই বলছি। ব্যালকনি জুড়ে হোক বা ড্রয়িং রুমের এক কোণে অন্দরসজ্জায় পাতাবাহারের সতেজ পরশ মানে প্রকৃতির দিকে একধাপ এগিয়ে যাওয়া।
মাদার-ইন-লস-টাঙ: ব্যালকনি ছাড়াও ঘরের যেকোনও জায়গায় ইনডোর প্ল্যান্ট রাখতে পারেন। প্রায় ৩ থেকে ৪ ফুট লম্বা হয়ে থাকে এর পাতা। পাতার বর্ডার লাইনের হলুদ রং আর মাঝ বরাবর সবুজ ছিটে। রোদের থেকে ছায়াই বেশি পছন্দ এই গাছের। জল দিতে হয় খুব কম এবং শীতকালে এর পরিমাণ আরও কম। ঘরের ছায়ায় বেড়ে ওঠার জন্য আদর্শ এই গাছ।
[ আরও পড়ুন : মেঝে পরিষ্কার করতে ঝক্কি? জেনে নিন ঝকঝকে রাখার সহজ উপায় ]
ক্রটন : এর পাতার রং খুব উজ্জ্বল। সবুজের বিভিন্ন শেড রয়েছে এতে। পাতার ওপরের প্রলেপ মোমের মতো। বেড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত সূর্যালোক। আর একটু বেশি জল। তাই একে জানালা বা ব্যালকনির কাছে রাখাই শ্রেয়।
এরিকা পাম : একে অনেকেই বাটারফ্লাই পামও বলে। ঘরের তাপমাত্রা এর জন্য উপযুক্ত। মাঝে মাঝে একে রোদে রাখতে হয়। সাধারণভাবে ব্যালকনি বা করিডর এর জন্য পারফেক্ট।
স্পাইডার প্ল্যান্ট : এটাও খুব পরিচিত পাতাবাহার। এর সবুজ সাদা পাতার স্ট্রাইপ সত্যিই অন্যরকম। তবে হ্যাঙ্গিং অবস্থায় একে দেখতে বেশি ভালো লাগে। খুব সামান্য যত্নেই কিন্তু বেড়ে ওঠে।
লাকি ব্যাম্বু ট্রি : অনেকে একে অর্নামেন্টাল ব্যাম্বু বলেও চেনে। এর কাণ্ডের সৌন্দর্যের ওপর এর দাম নির্ভর করে। বিশেষ করে রিং শেপের কাণ্ডের গাছের বেশ চাহিদা। খুব অল্প রোদেই বেড়ে ওঠে। তাই ইনডোর প্ল্যান্ট হিসাবে একে বেছে নিতেই পারেন।
মানিপ্ল্যান্ট: যারা খুব বেশি অন্দরসজ্জা নিয়ে সচেতন নন, তারাও মানিপ্লান্টকে চিনে নিতে খুব বেশি সময় নেন না। প্রায় জিরো মেইনটেন্যান্সে বেড়ে ওঠা এই গাছের অদ্ভুত পাতার জন্যই এর সুপরিচিতি। হলুদ, সবুজ, সাদার কম্বিনেশনের পাতার এই গাছের মাটিতে জলের প্রয়োজন একটু বেশি। পাশাপাশি অল্প জৈব সার ও কম সূর্যালোকেই এর পছন্দ। ঘরের যে কোনও জায়গার শোভা বাড়াতে সবার আগে এর নাম স্মরণ করতেই পারেন।
এনথারিয়াম : গাঢ় সবুজ রংয়ের মোমের মতো চকচকে পাতাই এর প্রধান আকর্ষণ। খুব সহজেই বেড়ে ওঠে। সরাসরি সূর্যালোক এর মোটেই পছন্দ নয়। বরং ঘরের ছায়াতেই বেড়ে ওঠে দিব্যি। শুধুমাত্র রুট ড্যামেজ এড়িয়ে যেতে প্রয়োজন একটু বেশি জল। তবে সঠিক যত্নে এর লাল রঙের ফুল আপনার উপরি পাওনা।
আফ্রিকান ভায়োলেট : একটু নতুনত্বের সহজ করলে বাড়িতে নিয়ে আসুন আফ্রিকান ভায়োলেট। পাশাপাশি সাজানো ঘন সবুজ পাতাই এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। বাকিদের মতো কেউ খুব একটা সূর্যালোক পছন্দ করে না। বরং জলে ভেজা নরম মাটিতে বেড়ে ওঠে সযত্নে। তবে আপনার বিশেষ যত্নে এর ছোট ছোট বেগুনের ফুল ঘরের শোভা বাড়িয়ে তোলে অনায়াসেই।
[ আরও পড়ুন : উজ্জ্বল পর্দা-হালকা আলোয় বদলে ফেলুন অন্দরসজ্জা, রইল কিছু টিপস]
কয়েকটা কথা খুব বিশেষ যত্নের প্রয়োজন না হলেও, কয়েকটা ছোট ছোট বিষয় মেনে চললেই, সময়ের সাথে সাথে বোঝা যায় পাতাবাহার ফুল গাছের চেয়ে কোনও অংশেই কম নয়। যাদের হাতে সময় কম, কিন্তু গাছের শখ ষোলআনা তারা পাতাবাহারকেই বাড়ির সদস্য করে ফেলুন। বিশেষ করে ওয়ার্কিং যারা তাদের জন্য তো এটাই বেস্ট অপশন। তবে নিয়মিত জল দেওয়া ছাড়াও মাঝে মাঝে রোদে দেওয়া প্রয়োজন। আর সময় পেলে মাঝে মাঝে জৈব সারও দিতে পারেন। আবার চাকচিক্য বাড়াতে রকমারি প্লান্টারও আনতে পারেন। পরিশ্রমের ফল পাবেন হাতেনাতেই। অন্দরমহলের সৌখিনতার শখ যারা পোষণ করেন, তাদের কাছে ঘরের কোণে বাহারি পাতা বাহারের থেকে বেস্ট অপশন আর কি বা হতে পারে! তাই গরমের শুরুতে বাহারি পাতাই হোক আপনার অন্দরসজ্জার প্রধান উপকরণ।