গৌতম ব্রহ্ম: একদিকে ইউটিউবের ‘আলো’, অন্যদিকে থিম পুজোর ‘রোশনাই’। দুইয়ের দৌলতে পুজোর গানের মরা গাঙে ফের জোয়ার এসেছে। যে স্টুডিওগুলো এতদিন কার্যত মাছি মারছিল, সেখানেও ‘ডেট’ পেতে কালঘাম ছুটছে। কোথাও আবার কাজ চলছে দু’-তিন শিফটে। তুঙ্গ চাহিদা সামলাতে অনেকেই একটি স্টুডিও ভেঙে দু’টি করে নিয়েছেন। চওড়া হাসি ফুটেছে রেকর্ডিস্ট ও স্টুডিও মালিকদের মুখে।
বেলেঘাটার ‘ভাইব্রেশনস’ হোক বা রানিকুঠির ‘ভায়োলিনা’, হরিদেবপুরের ‘স্কাই স্ক্র্যাপার’ বা কাঁকুড়গাছির ‘রেসোনেন্স’, সর্বত্রই এক ছবি। মহালয়া পর্যন্ত ‘ডেট’ পাওয়াই মুশকিল। কোথাও পুজোর আবহ তৈরি হচ্ছে, কোথাও ‘ইউটিউব কভার সং’। কোথাও ‘ভয়েস ডাবিং’, কোনও জায়গায় রেকর্ডবন্দি হচ্ছে বাঁশি, ঢোল-তবলা, গিটার। প্রাক পুজোর এই রমরমা বাজারে কন্ঠশিল্পী ও যন্ত্রশিল্পীদের পকেটও বেশ গরম হচ্ছে। তা স্বীকার করে নিলেন বিশিষ্ট পারকাশনিস্ট পণ্ডিত মল্লার ঘোষ ও সুরকার জয় সরকার। মল্লারবাবু এবার ২০ টি পুজোর আবহ তৈরি করছেন। জানালেন, “বিমুদ্রাকরণ ও জিএসটির জন্য এবার অনেক পুজোর বাজেটে কোপ পড়েছে। তবু কমিটিগুলি আলাদা করে ‘কাস্টমাইজড’ আবহ তৈরির চেষ্টা করছেন। এগুলিই থিমকে জীবন্ত করে তুলছে। আমার তো প্রাক-পুজোর দিনগুলি স্টুডিওতেই কাটে। রেকর্ডিস্ট, যন্ত্রশিল্পী, কণ্ঠশিল্পী, প্রোগ্রামার-সবারই রোজগার হচ্ছে।” জয় এবার দশটি পুজোর আবহ তৈরি করছেন। জানালেন, ইউটিউব প্রোজেক্ট ও থিম পুজোর হাত ধরে স্টুডিওগুলি আবার গমগম করছে।
এদিকে, পুজোয় নতুন অ্যালবাম করছেন রূপঙ্কর, মনোময়, ইমন, শোভন ও জয়তী চক্রবর্তীর মতো শিল্পীরাও। সিডি-র পাশাপাশি ইউটিউবেও ‘ডিজিটালি’ মুক্তি পাবে অ্যালবামগুলি। এখন ভিডিও তৈরির কাজ চলছে জোরকদমে। শমীক কুণ্ডুর সুরে পুজোয় এবার গান করছেন আচার্য জয়ন্ত বসুর মেয়ে রেমা বসু। ইউটিউবে মুক্তি পাবে সেই গান। এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে। বিজয়গড় পল্লিশ্রী মোড়ের কাছেই ‘স্টুডিও হংসধ্বনি’। মালিক রবীন্দ্রনাথ মাজি জানালেন, “বেশ কয়েকটি থিম পুজোর আবহ তৈরি হয়েছে। গত বছরও হয়েছিল, এবারও। ‘জোয়ার’ ব্যান্ড এ বছর আটটি পুজোর থিমসঙ্গীত তৈরি করছে। দেবজ্যোতি মিশ্র, দেবজিৎ রায়, দিশারি চক্রবর্তী, কুন্দন সাহা, উপালি চক্রবর্তী, শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়দেরও কাজ হচ্ছে।”
একই বক্তব্য ‘ভাইব্রেশনস’-এর সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার গৌতম বসুর। গৌতমবাবুর কথায়, এখন অনেকেই ইউটিউব মুক্তির জন্য একটি বা দুটি ‘কভার সং’ তৈরি করছেন। নতুন গান, রিমেক, রবীন্দ্রসংগীত এমনকী লোকগানও রয়েছে তালিকায়। তাছাড়া মুম্বই ও বাংলাদেশের অনেক কাজ হচ্ছে। ফলে স্টুডিওগুলোয় কাজ বেড়েছে। মুম্বইয়ে স্টুডিও ভাড়া অনেক বেশি। ১২ হাজার টাকা থেকে শুরু। আর এখানে হাজার পাঁচেক টাকায় দারুণ স্টুডিও। মুম্বইয়ে যন্ত্রশিল্পীদের দক্ষিণা আকাশছোঁয়া। আর বাংলায় অল্প টাকায় অনেক গুণী যন্ত্রশিল্পী বাজিয়ে দিচ্ছেন। বাংলাদেশ থেকেও প্রচুর কাজ ‘আউটসোর্স’ হয়ে আসছে। এমনটাই জানালেন গৌতমবাবু। ‘স্কাই স্ক্র্যাপার’-এর মালিক সোমাঙ্গি বিশ্বাস অবশ্য জানালেন, “তাঁর স্টুডিওয় সারা বছরই কাজ থাকে। পুজোর সময় কাজের শুধু ধরনটা বদলে যায়। এই সময় পুজোর গান তৈরির জন্য অনেকে আসেন। তা সে পুজোর আবহ হোক বা ইউটিউব প্রজেক্ট।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.