স্টাফ রিপোর্টার: কাশ্মীর নিয়ে পরিস্থিতি যে বিগড়োবেই, তার আঁচ একপ্রকার পেয়েই গিয়েছিলেন পর্যটকরা। পুজোয়, বা তার আগে পরে যাঁরা কাশ্মীরের ট্যুর বুক করেছিলেন তাঁরা যাত্রা বাতিল পর্ব ইতিমধ্যে শুরু করে দিয়েছেন। অন্যদিকে, ভূস্বর্গে এই মুহূর্তে এরাজ্যের যেসব পর্যটক রয়েছেন, তাঁরাও অবিলম্বে ফিরে আসতে চাইছেন।
এর মধ্যেই খবর, এই অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে ভূস্বর্গের পাট চোকাতে চাইছেন বাঙালি হোটেল লিজ হোল্ডাররা। সংসদে অধিবেশন চলছে। তার মধ্যে সোমবার সপ্তাহের শুরুর দিনটিকেই কেন্দ্রের সরকার বেছে নিয়েছিল কাশ্মীর নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে। সেখানে ৩৭০ ও ৩৫এ ধারা দু’টি তুলে দিয়েছে কেন্দ্র। কাশ্মীরিদের মধ্যে এই খবর যেভাবে আতঙ্ক ছড়িয়েছে, কার্যত তার চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে আতঙ্ক ছড়িয়েছে পর্যকদের মধ্যে। তাঁদের কানে গরম সীসার মতো পড়েছে এখবর। পর্যটকদের মধ্যে একটাই চিন্তা, তাঁরা আর সুস্থমতো ঘরে ফিরতে পারবেন কি না।
[আরও পড়ুন: ৩৭০ ধারা বিলুপ্তি নিয়ে জোর চর্চা নেটদুনিয়ায়, উঠে এল অক্ষয়-ধোনিদের নামও]
বাঙালির দীর্ঘদিনের প্রিয় পর্যটন সংস্থা কুণ্ডু স্পেশ্যালের কর্ণধার সৌমিত্র কুণ্ডু বাঙালি পর্যটকদের আতঙ্কের কথা জানিয়েছেন। বলেছেন, “আমরাই প্রথম কাশ্মীর ও লাদাখে ট্যুর অপারেট করে বাঙালিদের বেড়াতে নিয়ে গিয়েছি। গত কয়েক বছরে যখন থেকে পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করে, তখনই আবার এই ট্যুর আমরা বন্ধ করে দিই। কিন্তু এখন এক কথায় বলা যায়, বাঙালিরা কাশ্মীর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।” তাঁর ব্যাখ্যা, “এতদিন বারবার নানা সমস্যা আমরা দেখেছি। কিন্তু সরকার তখন আশ্বাস দিত। এবার সরকারই পর্যটকদের বের করে দিয়েছে। এমনকী, ঘরে ঘরে খুঁজে দেখছে কোথাও কেউ রয়ে গেলেন কি না। এই অবস্থায় তো আর বাঙালিরা কেউই সেখানে যাবেন না।” তিনি আরও বলেন, “মানুষ জীবনের টেনশন কাটাতে কাশ্মীর বেড়াতে যেতেন। কাশ্মীরে গিয়ে কে আর টেনশনের মধ্যে পড়তে চাইবেন।” তাঁর মতে, শুধু পুজোতেই নয়, অন্তত মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত আগামী বেশ কয়েক মাস আর কাশ্মীরে বেড়াতে যাওয়ার ঝুঁকি না নেওয়াই ভাল। কারণ এর প্রভাব দীর্ঘমেয়াদে পড়তে পারে।
এদিন সকালে অফিস খোলার সঙ্গে সঙ্গেই বিভিন্ন পর্যটন সংস্থার কাছে কাশ্মীর ট্যুর বাতিল করার জন্য ফোন আসা শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের ট্রাভেল এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক নীলাঞ্জন বসু। কাশ্মীরে এখন যে বাঙালি পর্যটকরা রয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে এখনই যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। তবে রাজ্য সরকারের তরফে কাশ্মীরের সরকারি ট্যুর অপারেটর সংস্থাকে জানানো হয়েছে সবরকম ব্যবস্থা করার জন্য। এ নিয়ে উদ্বেগের কোনও কারণ নেই বলে জানিয়েছে সরকার।
[আরও পড়ুন: বাতিল ৩৭০ ধারা, কাশ্মীরে কি জমি কিনতে পারবেন আপনিও?]
কাশ্মীরের এই পরিস্থিতিতে সরকারি দপ্তরের কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কাজ করতে হচ্ছে। সেখান থেকে যাঁরা এখনই ফিরতে পারবেন না, সরকারি ব্যবস্থাপনায় তাঁরা থাকবেন। সেক্ষেত্রে দুশ্চিন্তার কোনও কারণ নেই বলে আশ্বাস দিয়েছেন সরকারি দপ্তরের আধিকারিকরা। রাজ্যের ট্যুর এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কর্তা প্রবীর সিনহারায় জানাচ্ছেন, হোটেল যাঁরা বুক করে রেখেছিলেন, টিকিট যাঁরা কেটেছিলেন, তাঁদের প্রত্যেকে এই পরিস্থিতিতে সব যাত্রা বাতিল করতে চেয়েছেন। তাঁর কথায়, অবস্থা এখন বেশ খারাপ। সেখান থেকে পরিস্থিতি পুনরুদ্ধার করা এখনই সম্ভব হবে না বলেই মনে করছেন তিনি। এর মধ্যেই কাশ্মীরের হোটেল মালিক, পরিবহণ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকে জানাচ্ছেন, সরকারের এই পদক্ষেপে ইতিমধ্যে নানা গুজব ছড়িয়েছে কাশ্মীরে।