শুভদীপ রায় নন্দী, শিলিগুড়ি : রূপের হাটে ফর্সাদের কদর বরাবর বেশি। কিন্তু পশুদের দরদামের বাজারে বাজিমাত কৃষ্ণকায়দের। আর এই সুযোগে কলপ মেখে সাদাও বেমালুম কালো সেজে হাজির। এক ধাক্কায় দাম প্রায় দ্বিগুণ। এমন ছবিই ধরা পড়ল জলপাইগুড়ি জেলার রাজগঞ্জ ব্লকের শিকারপুর হাটে ছাগল কেনাবেচার কারবারে। ঘটনার খবর মিলতে চমকে ওঠার জোগাড় হয়েছে প্রশাসনের কর্তাদের। এমনকী, জনপ্রতিনিধিরা প্রশ্ন থুলেছেন এমনটা হয় না কি! যেমন, রাজগঞ্জের বিডিও নরবু শেরপা বলেন, “এটা হয় না কি! আগে কখনও শুনিনি। খোঁজ নিয়ে দেখে নিশ্চই ব্যবস্থা নেব।” স্থানীয় বিধায়ক খগেশ্বর রায় হেসে কুটিপাটি। তিনি বলেন, “চুলের কলপ এখন পাঁঠার শরীরে! এত জালিয়াতি! দেখি পুলিশের সঙ্গে কথা বলে কিছু করা যায় কি না !”
[আরও পড়ুন: পাঞ্জাবের এই গ্রামে রাস্তা ও নেমপ্লেটে থাকে শুধুমাত্র মহিলাদের নাম]
কিন্তু, প্রশাসনের কর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা যাই বলুন না কেন, এমনটা হবে না কেন? আট কেজি ওজনের কালো কুচকুচে পাঁঠার দাম ৬ হাজার টাকা। রং সাদা হলে কিন্তু খদ্দের ফিরে তাকাতে চান না। দামও তাই ৩ হাজারের বেশি ওঠে না। বাজারের এমন খেয়ালিপনা দেখে বিক্রেতাও ফন্দি এঁটে নিজের সাদা পাঁঠাকে রাতারাতি কালো সাজিয়ে বাজারে নিয়ে হাজির হচ্ছেন। সেটা কেমন করে? খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গিয়েছে, হাটে যে সমস্ত কালো পাঁঠা বিক্রি হয়ে থাকে সেগুলি আদতে কালোই নয়। সাদা রংয়ের লোমে ভরা। কিন্তু বিক্রির কয়েকদিন আগে চুলে লাগানো কলপ কিনে যত্ন করে লাগিয়ে দেওয়া হয়। আর তাতেই বাজিমাত। প্রচলিত ধারণা, কালো পাঁঠার মাংস অনেক বেশি সুস্বাদু। তাই চাহিদাও বেশি। কিন্তু সেই তুলনায় জোগান অনেক কম। তাই লোকঠাকানো বুদ্ধির আমদানি।
বুধবার ও শুক্রবার শিলিগুড়ি সংলগ্ন ফুলবাড়ি হাটে শাক-সবজি, মুদির সামগ্রী, মাছ, মাংস থেকে গরু, হাঁস-মুরগি, ছাগল,পাঁঠা সবই বিক্রি হয়। হাটে ভিড় করেন বহু মানুষ। শুক্রবার সেখানেই পাঁঠা বিক্রি করতে গিয়েছিলেন রাজগঞ্জের সুখানির বাসিন্দা মহম্মদ মুশাফির। তাঁর ব্যাগে ছিল চারটি পাঁঠা ছিল। একটি কুচকুচে কালো। ওই পাঁঠার দাম বেশি হাঁকাবেন বলে ঠিকও করে রেখেছিলেন। কিন্তু সমস্যা হল এক জায়গায়। পাঁঠার শরীরের লোম কুচকুচে কালো হলেও মাথায় সাদা ছোপ। সামান্য ভুলে এমনটা হয়েছে। ওই সময় রাস্তায় পাশে সেলুনে চলে যান। সেখান থেকে খানিকটা কলপ নিয়ে পাঁঠার মাথায় লাগিয়ে নিশ্চিত হন মুশাফির। সেলুন মালিক অবশ্য প্রথমে শুনে ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। পরে ৩০ টাকা দিতে কলপ গুলে দেন। মুশাফিরের অবশ্য তেমন তাপ-উত্তাপ নেই। তিনি জানিয়েছেন, “এটা নতুন কিছু না। হাটে নকল কালো পাঁঠার রমরমা। দাম বেশি কিছু করার নেই।” শুধু মুশাফির নয়, বিক্রেতাদের অনেকেই নকল পাঁঠার কারবারের কথা কবুল করেছেন।
ছবি: কল্পনা সূত্রধর