Advertisement
Advertisement
চরমেঘনায় পুজো ফিকে

প্রকৃতি সেজে উঠলেও আসেন না দুর্গা, বিষণ্ণতায় দিন কাটে সীমান্তের চরমেঘনাবাসীর

উৎসবে ব্যস্ততার ফাঁকে দুষ্কৃতী দৌরাত্ম্য বাড়ার আশঙ্কায় পুজোয় অনুমতি দেয় না প্রশাসন।

Residents of border area Charmeghna, Nadia deprived of Puja feelings

ছবি: প্রতীকী

Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:September 18, 2019 7:32 pm
  • Updated:September 19, 2019 10:36 am

পলাশ পাত্র, তেহট্ট: নদীর ধার ছেয়ে গিয়েছে কাশফুলে। হালকা বা মাঝারি বৃষ্টি থেমে রোদ উঠলে শরতের মেঘ নজর কাড়ছে। এমন মনোরম দৃশ্যেও অবশ্য মন কেমন চরমেঘনাবাসীর। তাঁদের ঘরে যে মা দুর্গা আসেন না। দুর্গাপুজোয় শামিল হতে না পেরে নদিয়ায় বাংলাদেশে সীমান্তে কাঁটাতারের ওপারের মানুষগুলো বিষণ্ণ৷ এখানে শারদীয়ার ৪, ৫টা দিনের আলাদা কোনও রং নেই।

[ আরও পড়ুন: মহিলা পরিচালিত পুজোগুলি নিয়ে এবার ‘বাংলার দুগ্গা’ ফোরাম, ঘোষণা চন্দ্রিমার]

মাথাভাঙা নদীর পাড়ে প্রায় হাজার ভারতীয়ের বসবাস। বাংলাদেশের একেবারে সীমান্তঘেঁষা সংলগ্ন নদিয়ার এই হিন্দু গ্রামটিতে আজও পা পড়েনি দুর্গা ও তার পরিবারের। তাই বিষাদও এঁদের ছেড়ে যায় না। হোগলবেড়িয়া থানার চরমেঘনা  সরকারিভাবে অ্যাডভার্স পজেশান ল্যান্ড। চরমেঘনাবাসীর প্রত্যেকের ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড, প্যান কার্ড রয়েছে। তারপরও তাঁদের জীবন খাঁচাবন্দি। কয়েক বছর আগে চরমেঘনা গ্রাম ভারতীয় ভূখণ্ডে চলে আসে। তাতে অবশ্য নাগরিক পরিষেবা পেতে সুবিধা হয়৷
২০১৫ সালের ৩১ জুলাইয়ের পর চরমেঘনা ভারতের ভূখণ্ডে চলে আসে৷ তার ফলে এখন পঞ্চায়েতের পরিষেবা মেলে চরমেঘনায়৷ বিধবা ভাতা, বার্ধক্য ভাতা, ইন্দিরা আবাস যোজনা, পাকা রাস্তা গ্রামবাসীরা পাচ্ছে। তবে জাতিগত শংসাপত্র না পাওনা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে চরমেঘনায় দুর্গাপুজো করা নিয়ে গ্রামের মানুষ সম্মিলিত হয়েছে। আলোচনাও হয়েছে  বিস্তর। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার কারণে এই অঞ্চলে দুর্গাপুজোর অনুমতি দেওয়া হয় না। অথচ মনসা, কালী, ভূমি, কার্ত্তিক মাসে গোয়াল পুজো, ভাদ্র মাসে কর্মা বা গাছ পুজো করা হয়। চরমেঘনার কাঁটাতার থেকে নদিয়ার প্রাচীন পুজো নস্করি মায়ের কাছে অঞ্জলি দেন এখানকার বাসিন্দা।

Advertisement

প্রায় ২০০ বছর আগে বিহার, ছোটনাগপুর থেকে কাঁটাতারের ওপারের চরমেঘনাবাসীর পূর্বপুরুষরা এপারে এসেছিলেন নীল চাষের জন্য। পরবর্তীকালে তাঁরা কৃষিকেই জীবিকা হিসেবে গ্রহণ করেন। ধান, পাট, রবিশস্য বা সবজি চাষের উপর এখানকার মানুষ নির্ভরশীল। তাঁদের সন্তানসন্ততি এবং বর্তমান প্রজন্ম এখন পড়াশোনা করে শিক্ষিত হচ্ছে। কিন্তু তবু দৈনন্দিন জীবন যেন আটকে সকাল ছ’টা থেকে বিকেল ছ’টায়। ওই সময়টুকুই এপার-ওপারে অবাধ যাতায়াতে গেট খোলা থাকে। এই রোজনামচায় নাগরিক জীবন দুর্বিসহ হয়ে ওঠে।

Advertisement

[ আরও পড়ুন: শরতে হারিয়ে যাওয়া শৈশবে ফিরে যান হাওড়ার এই পুজোয় হাত ধরে]

বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসবের ছোঁয়া না পেয়ে প্রবল মনকষ্টে থাকেন গ্রামবাসীরা। তাঁদের বক্তব্য, কৃষিপ্রধান এলাকা হওয়ায়, অভাব থাকলেও খেয়ে-পরে চলে যায়। সেক্ষেত্রে চাঁদা তুললে বারোয়ারী পুজো করা খুব কঠিন কিছু নয়। কিন্তু প্রশাসনের অনুমতি না পাওয়ায় পুজোটা করা যায় না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই বলছেন, পুজোয় স্থানীয়দের ব্যস্ততার সুযোগে ওপার থেকে দুষ্কৃতীরা চলে আসে। সেক্ষেত্রে নিরাপত্তা প্রশ্নচিহ্নের মুখে পড়ে যায়। ঘটনা প্রসঙ্গে করিমপুর এক বিডিও অনুপম চক্রবর্তী বলেন, ‘ওনাদের জাতিগত শংসাপত্র পাওয়ার বিষয়টি পিআরআইয়ের ওপর নির্ভর করে। ওনারা সার্ভে করেও গিয়েছেন। রিপোর্ট দিলেই হবে।তবে কেন এতদিন পুজো হয়নি, তার কারণ আমি জানার চেষ্টা করব। পুজো নিয়ে ওনারা আবেদন করলে আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েও দেব।’ কিন্তু সত্যিই কি এবার দুর্গা আবাহনের স্বাদ পাবেন চরমেঘনাবাসী? এই প্রশ্নের উত্তর এখনও অজানা।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ