Advertisement
Advertisement

Breaking News

Kalpataru Utsav

জগৎবাসীকে চৈতন্যদান করতেই কল্পতরু হয়েছিলেন ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ, জেনে নিন মাহাত্ম্য

যুগাবতার মানবসমাজের উদ্দেশে বলেন, 'আশীর্বাদ করি তোমাদের চৈতন্য হউক'।

Amazing story about Shree Ram krishna Paramhans । Sangbad Pratidin

জগৎবাসীকে চৈতন্যদান করতেই কল্পতরু হয়েছিলেন ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ

Published by: Sayani Sen
  • Posted:December 31, 2023 4:00 am
  • Updated:December 31, 2023 4:12 pm

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘কেমন করে জানলে, অবতার নাই?’ – একবার এক গৃহী ভক্তকে প্রশ্ন করেছিলেন ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ। ভক্তটির মনে হয়েছিল, এ যুগে বোধহয় আর অবতার নেই। ঠাকুরের প্রশ্নের জবাব দিতে না পেরে তিনি যখন নিশ্চুপ, তখন ঠাকুরই বলে দিয়েছিলেন, ‘অবতারকে সকলে চিনতে পারে না।’ দক্ষিণেশ্বরের গঙ্গা দিয়ে বয়ে যায় যে সময়ের স্রোত, সে-ও কি সেদিন চিনতে পেরেছিল যুগাবতারকে? কেউ কেউ পেরেছিলেন। কারো মনে ছিল সন্দেহ। ঠাকুর নিজেকে তো কখনও সেভাবে সকলের সামনে প্রকাশ করেননি। তবে বলতেন বটে, সময় এলে হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিয়ে যাবেন। সেই হাঁড়িটিই ভেঙেছিলেন কাশীপুর উদ্যানবাটিতে। সে-ও এক ১ জানুয়ারি। জগৎবাসীকে কৃপা করে আত্মপ্রকাশে অভয়দান করেছিলেন। বলেছিলেন, “তোমাদের কী আর বলিব, আশীর্বাদ করি তোমাদের চৈতন্য হউক।”

শ্রীগীতায় ভগবান বলেছিলেন, যখন গ্লানি প্রবল হয়ে ওঠে তখনই তাঁর স্বয়ংপ্রকাশ। পরমেশ্বর নিজে নেমে এসে জগৎকে গ্লানিমুক্ত করেন। পৃথিবীকে দেন চালিকাশক্তি। ঠাকুরও তো সেই কাজটি করতেই এসেছিলেন কৃপা করে। কিন্তু এমনই তাঁর লীলামাধুর্য যে, ভক্ত তাঁকে যেন চিনেও চিনতে পারে না। মানুষ কি অবতার হয়ে উঠতে পারেন? যখনই এ প্রশ্ন উঠেছে, তখন ঠাকুর মিটিমিটি হেসেছেন। একবার নরেন্দ্র আর গিরিশের মধ্যে এই নিয়ে তর্ক শুরু হল।

Advertisement

Ramkrishna

Advertisement

ঠাকুর জানেন, তাঁর সাধনার ধারা যাঁরা উত্তরকালে বয়ে নিয়ে যাবেন, তাঁদের দু’জনের মধ্যেই বেঁধেছে লড়াই। ঠাকুর উপভোগ করছেন পুরো বিষয়টি, নিজে তর্কের আগুনে হাওয়াও দিলেন। নরেন্দ্র মানেন না যে, মানুষ অবতার হতে পারেন। কেননা তিনি অবাঙ্মনসোগোচরম্‌। আর গিরিশের স্থির বিশ্বাস যে, তিনি নরদেহ ধারণ করে জগতে আবির্ভূত হতে পারেন। ঠাকুর যেন দূর থেকে দেখে নিচ্ছেন তাঁর পার্ষদদের। কার মত কোন খাতে বইছে সব বুঝে নিচ্ছেন। একদিন তো হাটে হাঁড়ি ভাঙবেই। সেদিন আর কোনও তর্কের অবকাশ থাকবে না। তিনি তো তাই বলেন, “চৈতন্য লাভ করলে তবে চৈতন্যকে জানতে পারা যায়।”

মতের গোঁড়ামি কবেই বিসর্জন দিয়েছেন ঠাকুর। জগৎকে তিনি এই শিক্ষা দিতেই তো এসেছেন। সাধনার ভূমি এই ভারতবর্ষে কত মত, কত সম্প্রদায়। ব্যক্তিবিশেষে কত সাধক সাধনার উচ্চতর বিন্দু স্পর্শ করেছেন। তবু সমন্বয় যেন সম্পূর্ণ হয়নি। উপরন্তু ঐহিক ভোগবাসনা, জড়বাদ এসে গ্রাস করেছে মানুষকে। এবার ঠাকুর এলেন ধরাধামে। সব সাধনার মাটি স্পর্শ করলেন। সিদ্ধিলাভ করলেন। কিন্তু সিদ্ধাই দেখাননি কখনও। দৈবাৎ প্রকাশ হয়ে গেলে বলতেন, ও কিছু না। তাঁর লীলা যে এবার অন্যরকম। সমস্ত মত এসে মিলবে তাঁর কাছেই। সব তর্কের হবে অবসান। আর ঠাকুর জগৎকে শিখিয়ে দিয়ে যাবেন সেই মহামন্ত্র- যত মত তত পথ। এই কথাটির অনুধাবনই তো যুগের প্রয়োজন। মতের বিরুদ্ধতায় মাতামাতি নয়, সমন্বয়ের পথে জগতের কল্যাণে ব্রতী হতে হবে।

[আরও পড়ুন: বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় মত, বলিদান বন্ধের নির্দেশ, যুগান্তকারী সিদ্ধান্তে অগ্রণী মা সারদা]

শাস্ত্রজ্ঞান তো অনেক পেয়েছে এই ভূমি, এবার সেই জ্ঞানের ধারা তিনি প্রবাহিত করছেন লোকহিতে। বলছেন, শিবজ্ঞানে করতে হবে জীবের সেবা। ঠাকুর এসেছেন যুগের রথটিকে ঠিক অভিমুখে চালিত করতে। সেইমতো তৈরি করছেন তাঁর পার্ষদদের। যুক্তি তর্কের আগুনে শুদ্ধ করে পৌঁছে দিচ্ছেন শুদ্ধাভক্তির পথে। অথচ তিনি যে যুগাবতার, সেই কথাটিই রেখেছেন লুকিয়ে। কেউ কেউ জানেন, অনেকেই জানেন না। এবার তো সকলের সামনে তাঁর কোনও অলৌকিক প্রকাশ নেই। তিনি শুধু বলেন, জগদম্বার জমিদারিতে যখনই তাঁর ডাক পড়বে, তখনই সেখানে তাঁকে হাজির হতে হবে।

শ্যামপুকুরে থাকার সময় একদিন অদ্ভুত দর্শন হল ঠাকুরের। দেখলেন, তাঁর সূক্ষ্ম শরীর স্থূল শরীর থেকে বেরিয়ে এসে ঘরের মধ্যে বিচরণ করছে। আর তাঁর কণ্ঠে এবং পিঠে কতকগুলি ক্ষত হয়েছে। কেন এমন হল? ঠাকুর প্রশ্ন করলে, জগদম্বা তাঁকে বুঝিয়ে দিলেন, কত মানুষ নানারকম দুষ্কর্ম করে এসে তাঁকে স্পর্শ করে পবিত্র হয়েছে। সেই পাপভার সংক্রমিত হয়েই ঠাকুরের শরীরে ক্ষত হয়েছে। সত্যিই ক্ষত হল ঠাকুরের কণ্ঠে।

অসুখ যেন কিছুতেই আর সারতে চাইছিল না। ডাঃ মহেন্দ্রলাল সরকারের ওষুধে গোড়ার দিকে কিছু কাজ হয়েছিল। কিন্তু সময়বিশেষে তা-ও আর ফল দেয় না। ভক্তেরা ঠিক করলেন, ঠাকুরকে কাশীপুরের উদ্যানবাটীতে আনা হবে। নির্জনে খানিক সুস্থ থাকবেন ঠাকুর। উদ্যানবাটীর ভাড়া ছিল ৮০ টাকা, ঠাকুরের পরম ভক্ত সুরেন্দ্রনাথ মিত্র সমস্ত ব্যয়ভার বহনের অঙ্গীকার করলেন। ঠাকুর এখানে এসে মনে মনে প্রফুল্ল হয়েই উঠলেন। ঠাকুরের সেবার ভার নিয়ে শ্রীশ্রীমা থাকলেন সঙ্গে।

একদিন নিজের ঘর থেকে নেমে বাগানে সামান্য ঘোরাঘুরি করলেন ঠাকুর। ভক্তেরা ভেবেছিলেন, তাতে তিনি সুস্থ হবেন। কিন্তু উলটো ফল হল। ঠান্ডা লেগে ঠাকুর আরও অসুস্থ হয়ে পড়লেন। ভক্তেরা আসা-যাওয়া করেন। নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করতে থাকেন। সকলেই যেন বুঝতে পারছেন, এবারের মতো লীলামাধুরী ফুরোবার সময় হয়ে এসেছে। ঠাকুরের সঙ্গ করে আধ্যাত্মিক পথে আর-একটু এগিয়ে যেতে, তাঁর কৃপা পেতে চান সকলেই। অসুস্থ হওয়ার পর ঠাকুর দিন পনেরো আর বাগানে পায়চারি করতে পারেননি।

[আরও পড়ুন: ভক্তের আকাঙ্ক্ষা পূরণেই প্রভু জগন্নাথের ‘ঘোড়ালাগি বেশ’, জানুন এর তাৎপর্য]

দেখতে দেখতে পৌষমাসের অর্ধেক কেটে গেল। এসে পড়ল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। দিনটা ১৮৮৬ সালের ১ জানুয়ারি। সেদিন ঠাকুর একটু সুস্থ বোধ করছেন। মনস্থ করলেন, আজ একটু বাগানে ঘুরে বেড়াবেন। ছুটির দিন। গৃহী ভক্তদের অনেকেই সেদিন এসেছেন কাশীপুর উদ্যানবাটীতে। বেলা একটু পড়তে, বিকেল তিনটে নাগাদ ঠাকুর এসে দাঁড়ালেন বাগানে। ভক্তেরা তাঁকে দেখে প্রণাম করছেন।

গিরিশচন্দ্র ও অন্যান্য ভক্তরা ছিলেন একটু দূরে, ঠাকুরকে দেখে তাঁরা কাছে ছুটে এলেন। কেউ কিছু কথা বলবার আগেই ঠাকুর গিরিশচন্দ্রকে সম্বোধন করে বললেন, “গিরিশ, তুমি যে সকলকে এত কথা বলিয়া বেড়াও, তুমি কী দেখিয়াছ ও বুঝিয়াছ?” গিরিশ বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে ঠাকুরের পদপ্রান্তে ভূমিতে বসে ঊর্ধ্বমুখে করজোড়ে গদগদ স্বরে বলে উঠলেন, “ব্যাস-বাল্মীকি যাহার ইয়ত্তা করিতে পারেন নাই, আমি তাহার সম্বন্ধে অধিক কী আর বলিতে পারি!” গিরিশের সরল বিশ্বাসে ঠাকুর মুগ্ধ হলেন। তারপর সমবেত ভক্তদের উদ্দেশে বললেন, “তোমাদের কী আর বলিব, আশীর্বাদ করি তোমাদের চৈতন্য হউক।”

Ramkrishna

এই সেই পরম ক্ষণ যখন নিজের দেবত্ব প্রকাশ করলেন শ্রীরামকৃষ্ণ। সন্ন্যাসী ভক্তরা বলেন আত্মপ্রকাশে অভয়-প্রদান। তখন আর কে মনে রাখে যে ঠাকুর অসুস্থ! ঠাকুরকে যে স্পর্শ করা বারণ সে প্রতিজ্ঞাও ভুলে গেলেন সকলে। ঠাকুরের চরণ স্পর্শ করে সকলেই ধন্য হলেন। ঠাকুর কৃপা করলেন তাঁর বহু ভক্তকে। এতদিন ঠাকুর বলতেন, যেদিন সকলে তাঁকে চিনবেন সেদিন কানাকানি পড়ে যাবে। এবার সত্যিই কানাকানি পড়ল। ঠাকুর বিদায়বেলায় নিজেকে প্রকাশ করলেন অন্য রূপে।

কল্পতরু বৃক্ষের কাছে মানুষের সকল চাওয়া পূরণ হয়। ঠাকুর যেন এদিন নিজেকে কল্পতরুভাবেই প্রকাশ করেছিলেন। আসলে তিনি তো সেই কল্পতরু যাঁর কাছে হাত পেতেছিল সময়। যুগের প্রয়োজনে ধর্ম সংস্থাপনার্থেই তাঁর আবির্ভাব। ধর্ম ও সমাজকে একসূত্রে বেঁধে যে আন্দোলনের বীজ ঠাকুর রোপণ করে দিয়েছিলেন, উত্তরকালে তাই-ই আশ্রয় হয়ে দাঁড়াল গোটা পৃথিবীর। বিভেদে মত্ত পৃথিবীতে শান্তি পেতে মানুষ তাঁর উদার সমন্বয়ের সাধনস্রোত থেকেই তুলে নেয় দু-আঁজলা শান্তিজল। যুগাবতার তখন অলক্ষ্যেই কৃপা করেন মানবসমাজকে, বলেন, ‘আশীর্বাদ করি তোমাদের চৈতন্য হউক’।

[আরও পড়ুন: হাতের রেখায় M অক্ষর কীসের ইঙ্গিত? জেনে নিন জ্যোতিষীদের বক্তব্য]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ