Advertisement
Advertisement
Holi

নন্দগাঁও ও বারসানা, রাধাকৃষ্ণের নিজেদের গ্রামে আজও নিষিদ্ধ প্রেম

প্রতি বছরের মতো এবারও শোভাযাত্রায় প্রস্তুত দুই গ্রাম ।

Barsana and Nandgaon is one of the most popular Holi traditions। Sangbad Pratidin
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:March 18, 2022 8:44 am
  • Updated:March 18, 2022 8:47 am

কুণাল ঘোষ: ব্রজভূমি তৈরি। শ্রীরাধার বাপের বাড়ি থেকে শ্বশুরবাড়ি পর্যন্ত জামাইয়ের তত্ত্ব-সহ শোভাযাত্রা যাবে। দোল (Dol Yatra) উপলক্ষে।

নন্দগাঁও (Nandgaon) আর বারসানা (Barsana)। এখানে রাধাকৃষ্ণ প্রেমিক-প্রেমিকা নন। স্বামী-স্ত্রী। স্ত্রীর বাপের বাড়ি বারসানা থেকে বহু উপহার-সহ মিছিল যাবে নন্দগাঁওতে ঘোষদের বাড়ি। বরাবরের মতো। শুক্র আর শনিবার প্রেমের রঙে রঙিন থাকবে দুই গ্রাম। এই একটি দিন আন্তরিক উৎসবে হেরে যাবে বৃন্দাবনও। নন্দগাঁও আর বারসানা শ্রীকৃষ্ণের (Shree Krishna) জীবনকাহিনিতে উপেক্ষিত দুই গ্রাম। মথুরা, বৃন্দাবনের গ্ল্যামার এখানে নেই। পুতনাকাণ্ডের পর শিশু কৃষ্ণকে কংসের হাত থেকে বাঁচাতে তখনকার এই বনাঞ্চলে ছোট পাহাড়ের উপর বসতি গড়েছিলেন নন্দ ঘোষ। কৃষ্ণের বেড়ে ওঠা এখানেই। এলাকায় তিনটি পাহাড়। অন্য দু’টির একটির মাথায় বারসানা গ্রাম। আরেকটি গিরি গোবর্ধন। মাঝখানে সংকেত বন, বাল্য থেকে কৈশোরের যাত্রাপথে থাকা রাধাকৃষ্ণের মিলনভূমি।

Advertisement

[আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ফের বৈঠকে কংগ্রেসের বিক্ষুব্ধরা, পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা]

Nandgaon

Advertisement

এই তল্লাটে কৃষ্ণ মানুষ। ওই যে, বাড়ি। ওই যে, ঘর। এই ঘরে মা যশোদা ননী তৈরি করতেন, বালক কৃষ্ণ চুরি করতেন সদলে। আর ওই যে দূরের পাহাড়ের মাথায় গ্রাম, ওটা বারসানা। রাধার বাড়ি। এখানে কথিত, রাধা-কৃষ্ণের প্রেম থেকে পরিণয়। রাধা শ্বশুরবাড়ি যান। তাই কৃষ্ণ এখান থেকে চলে যাওয়ার ঘটনায় বারসানার অভিমান আরও তীব্র।

তবে তাই বলে দোলের কর্তব্য ভোলে না বারসানা। সেই কবে শ্রীকৃষ্ণ রং মাখিয়েছিলেন রাধাকে। আজও চলছে হোলি পালন। জামাই শ্রীকৃষ্ণের জন্য নানা উপহার নিয়ে রং খেলার শোভাযাত্রা যাবে রাধার বাড়ি থেকে কৃষ্ণের বাড়ি। প্রাণঢালা প্রেমের উৎসবে মাতোয়ারা থাকবেন ব্রজভূমির তরুণ-তরুণীরা।

[আরও পড়ুন: রেলে প্রবীণ যাত্রীদের টিকিটে ছাড় নয় এখনই, সাংসদ দেবের প্রশ্নের উত্তরে জানাল কেন্দ্র ]

তবে হ্যাঁ, দোল আর হোলিতে রাধাকৃষ্ণের প্রেমকে অনিঃশেষ উচ্চতায় আসীন রাখলেও সেই সম্পর্ককে মান্যতা দেওয়ার অদ্ভুত রীতিতে আজও নন্দগাঁও আর বারসানার মধ্যে প্রেম এবং বিবাহ নিষিদ্ধ। এই দুই গ্রামের বৈবাহিক সম্পর্ককে গ্রহণ করে না সমাজ। তল্লাট ঘুরে যা বুঝেছি, কেউ বলেন রাধাকৃষ্ণই এই দুই গ্রামের শেষ দম্পতি হিসাবে থেকে যাবেন। কেউ বলেন, কৃষ্ণ চলে যাওয়ার পর জনমদুখিনী রাধাকে মাথায় রেখেই দুই গ্রামের মধ্যে বিয়েতে মঙ্গল দেখে না কেউ। আজব রীতি, চলছে আজও। তবে উৎসবে কোনও খামতি নেই।

মথুরা, বৃন্দাবন নিয়ে মাতামাতি বিশ্বে। বাণিজ্য, বিপণন, দোকানবাজার, টুরিস্ট বাস নিয়ে জমজমাট ভক্তি আর অর্থনীতির মিশ্রণ। অথচ রাস্তার উলটো দিক দিয়ে প্রত্যন্ত এলাকার মধ্যে উপেক্ষিত দুই গ্রাম। মানুন বা নাই মানুন, কৃষ্ণের বাড়ি। রাধার বাড়ি। মন্দির। পুজো। কিন্তু মথুরা, বৃন্দাবনের মতো প্রচারের শীর্ষে নয়। ঝাঁ চকচকে উপস্থিতি নেই। পাহাড়ের কোল বেয়ে পাক খেয়ে ওঠা সরু রাস্তার ধাপ শেষে রুগ্‌ণ কিছু দোকান আর বসতি পেরিয়ে কৃষ্ণের বাড়ি। একই ছবি বারসানাতে রাধার বাড়িতেও। পর্যটকদের তালিকাতেও উপেক্ষিত দুই গ্রাম।
তবে বছরে এই একবার, দোল আর হোলি, হোলির দুটো দিন অভিমান ভুলে জেগে ওঠে দুই গ্রাম। শুধু রাধার বাড়ি থেকে কৃষ্ণের বাড়ির দিকে রওনা হওয়া শোভাযাত্রাটাই প্রাণের পরশে হারিয়ে দেবে মথুরা, বৃন্দাবনের গ্ল্যামারকে। আজ নন্দগাঁও থেকে একদল তরুণ যাবে বারসানা। রং নিয়ে। তবে সেখানকার তরুণীরা কাউকে ধরে ফেললে কপালে দুঃখ আছে। আর কাল বারসানা থেকে আসল শোভাযাত্রা নন্দগাঁওর দিকে।

রং থাকবে, গান থাকবে, উন্মাদনা থাকবে, উপহার থাকবে, রাধাকৃষ্ণের প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালবাসা থাকবে। কিন্তু আকাশে বাতাসে ভাসবে কঠিন শর্ত, প্রেমকে সম্মান করো। কিন্তু দুই গ্রামের কোনও তরুণ-তরুণীর প্রেম চলবে না। যুগে যুগে নিজের প্রেমকে বন্দি রেখে দোলের দিন রাধাকৃষ্ণের প্রেমের জোয়ারেই ভেসে চলেছেন নন্দগাঁও আর বারসানার তরুণ-তরুণীরা। এবং এবারও এই দিনটিতে হারতে চলেছে মথুরা-বৃন্দাবন।
ব্রজভূমির দুই উপেক্ষিত গ্রাম রং নিয়ে তৈরি।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ