Advertisement
Advertisement

Breaking News

অষ্টসিদ্ধি

সন্ন্যাসীর দুই কান দিয়ে বেরিয়ে আসে চুন ও আফিম, পড়ুন সাধকের অলৌকিক শক্তির কাহিনি

অষ্টসিদ্ধি করায়ত্ত করা সাধকদের খুঁজেছেন গৌতম ব্রহ্ম। আজ দ্বিতীয় পর্ব।

The unusual power of sadhus which cant be explained scientifically

ছবি প্রতীকী

Published by: Sulaya Singha
  • Posted:March 14, 2020 8:34 pm
  • Updated:March 14, 2020 8:38 pm

কেউ তালাবন্ধ হাজত থেকে বেরিয়ে এসেছেন অবলীলায়। অন্যের রোগ টেনে এনেছেন নিজের শরীরে। কেউ নিমেষে তালুবন্দি করেছেন কাঙ্খিত বস্তু। কেউ আবার একই সময়ে একাধিক জায়গায় থেকেছেন। বুদ্ধিতে এসবের ব্যাখ্যা মেলে না। অথচ বুজরুকি বললে ইতিহাসকে অপমান করা হয়। অণিমা, লঘিমা, গরিমা, প্রাপ্তি, প্রাকাম্য, মহিমা, ঈশিতা, বশিতা। অষ্টসিদ্ধি করায়ত্ত করা সাধকদের খুঁজেছেন গৌতম ব্রহ্ম। আজ দ্বিতীয় পর্ব।

“হি ডিসপ্লেড মিরাকুলাস পাওয়ারস দ্যাট ক্যান নট বি ডিসমিসড অ্যাজ মিথ।”

Advertisement

তৈলঙ্গস্বামীর সম্পর্কে এমন কথাই লিখেছেন ‘ইন্ডিয়া আনভেলড’ বইয়ের লেখক রবার্ট আরনেট। মেধসানন্দ, শিবানন্দ, সবাই একবাক্যে মেনে নিয়েছেন কাশীর চলমান শিবের সিদ্ধাইয়ের কথা। শুধু বন্ধ কারাগার থেকে বেরিয়ে এসে ইংরেজ ম্যাজিস্ট্রেটকে চমকে দেওয়া নয়, আরও অনেক অলৌকিক ঘটনা জড়িয়ে রয়েছে স্বামীজীর জীবনে পরতে পরতে। কী রকম?

Advertisement

জানা যায়, সাধকের সিদ্ধাই পরখ করতে কাশীর এক স্বঘোষিত গুরুর চ্যালা তাঁকে ক্ষীর বলে আফিম মেশানো চুনগোলা জল খাইয়ে দিয়েছিল। স্বামীজি তা খেয়ে চুন ও আফিম দুই কান দিয়ে আলাদাভাবে বের করে দেন। এমন অনেকবারই হয়েছে। কথিত, বহুবার তৈলঙ্গস্বামী বিষ খেয়ে হজম করে ফেলেছেন। স্বল্পহারী হয়েও বিশাল বপুর অধিকারী ছিলেন। কদাচিৎ খাদ্যদ্রব্য মুখে তুলতেন। কিন্তু ওজন ছিল ১৪০ কেজি।

[আরও পড়ুন: তালাবন্ধ হাজত থেকে বেরিয়ে এলেন নগ্ন সন্ন্যাসী, পড়ুন সাধকের অলৌকিক শক্তির কাহিনি]

নিজের অলৌকিক ক্ষমতার গুণে একবার এক রাজাকে উচিত শিক্ষা দিয়েছিলেন স্বামীজি। রাজা সদলবলে নৌকাবিহারে বেরিয়ে কাশীতে এসে উপস্থিত। তৈলঙ্গস্বামী তখন গঙ্গায় মরার মতো ভাসছেন। রাজা ভাবলেন জলসমাধি হওয়া কোনও মৃতদেহ। পার্শ্বচররা ভুল ভাঙিয়ে জানায়, উনি এক শক্তিধর সন্ন্যাসী, দিনমান জলে এভাবে ভেসে থাকেন। রাজার কৌতূহল নিবারণে সন্ন্যাসীকে বজরায় হাজির করানো হয়। স্বামীজি রাজার তরবারি দেখতে চান। চোখে-মুখে প্রবল অহমিকার বিচ্ছুরণ ঘটিয়ে রাজা জানান, যুদ্ধে প্রভূত পরাক্রমের জন্য ইংরেজরা তাঁকে এই তরবারি উপঢৌকন দিয়েছে। তৈলঙ্গস্বামী সে তরবারি হাতে নিয়ে ছুড়ে ফেললেন গঙ্গায়। কপাল চাপড়ে হায় হায় করে ওঠেন রাজা। সাধুকে তীব্র ভাষায় তিরস্কার করেন। স্বামীজি তখন জলে নেমে পড়েন গঙ্গার অতল থেকে তুলে আনেন একই রকম দেখতে দু’টি তরবারি। “কোনটা তোমার? চিনতে পারছ?” স্বভাবতই রাজার তখন ভিরমি খাওয়ার দশা।

Sannyasi
তৈলঙ্গস্বামী

একবার কাশীর রানিমাকেও উচিত শিক্ষা দিয়েছিলেন স্বামীজি। পালকি বিহারে গঙ্গার ঘাটে যাচ্ছিলেন রানিমা। আগে আগে চলছিলেন পাহারাদাররা। রানিমার পথে চলে আসায় এক গরিব মানুষকে পাহারাদাররা আঘাত করেন। দরদর করে রক্ত বেরতে থাকে। এই দৃশ্য দেখে স্বামীজি ঠিক থাকতে পারেননি। তিনি সটান গিয়ে হাজির হন রানিমার স্নানের ঘাটে। পাহারাদাররা পুলিশে দেন তৈলঙ্গস্বামীকে। কিন্তু লোহার শিকল, হাতকড়া বাঁধতে পারেনি মহাপুরুষকে। সেই দিনই রানিমা নিজের ভুল বুঝতে পারেন। স্বামীজির কাছে ক্ষমা চেয়ে স্বামীর আরোগ্যলাভের প্রার্থনা জানান। রানিমা বাড়ি ফিরে দেখেন শয্যাশায়ী স্বামী বিছানা ছেড়ে দিব্যি হেঁটেচলে বেড়াচ্ছেন।

তৈলঙ্গস্বামী ছিলেন মা অন্তপ্রাণ। বৈরাগ্য স্বভাবজাত হলেও মায়ের জন্যই ইচ্ছা থাকলেও সংসার ছাড়তে পারেননি। ১৬৬৯ সালে মায়ের মৃত্যুর পর সংসার ত্যাগ। শ্মশানবাস। বহু তীর্থ ঘুরে নর্মদা পরিক্রমা। সেখানেই গুরু ভগীরথস্বামীর অনুগ্রহলাভ। ১৭৩৭ সালে কাশীতে আসেন অন্ধ্রের ভিজিয়ানগরের সাধক।

ইতিহাস-গবেষক জি এন পুরন্দর জানিয়েছেন, ২৮০ বছর বেঁচেছিলেন তৈলঙ্গস্বামী। বিজ্ঞান আজও তাঁর দীর্ঘায়ুর রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি। তবে তিনি যে অষ্টসিদ্ধির অধিকারী ছিলেন, তা বাংলার অনেক সাধকই মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করে নিয়েছেন। লোকনাথ ব্রহ্মচারী, রামকৃষ্ণ পরমহংস, স্বামী অভেদানন্দ, বিবেকানন্দ, বামাখ্যাপা, বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী। সবাই একবাক্যে তৈলঙ্গস্বামীর আধ্যাত্মিক শক্তি মেনে নিয়েছেন। রামকৃষ্ণদেবের মতে, ওঁ ছিলেন সত্যিকারের পরমহংস। জানা যায়, রামকৃষ্ণদেবকে একটি নস্যির কৌটো উপহার দিয়েছিলেন স্বামীজি। তাতে নাকি ভবতারিনী মায়ের সিঁদুর রাখবেন বলে জানিয়েছিলেন রামকৃষ্ণদেব।

[আরও পড়ুন: বারাণসীতে খোঁজ মিলল ৪ হাজার বছরের পুরনো শিবলিঙ্গর]

এহেন মহান সাধকের তিরোধানপর্বও অলৌকিকতায় মোড়া। জানা যায়, তৈলঙ্গস্বামী নিজের মৃত্যুর দিনক্ষণ অনেক আগেই বলে দিয়েছিলেন। এবং তা ছিল একেবারে নির্ভুল। দশনামি সম্প্রদায়ের নিয়ম মেনে স্বামীজির দেহ একটি কাঠের বাক্সে ভরে পাথর চাপিয়ে জলসমাধি দেওয়া হয়েছিল। কাতারে কাতারে মানুষ গঙ্গার পাড়ে এসে দাঁড়িয়েছিলেন, সাধককে শেষ বিদায় জানাতে। লেখক জিএন পুরন্দর জানিয়েছেন, এই সময় কাঠের বাক্স থেকে একটি উজ্জ্বল জ্যোতিপ্রভা নির্গত হয়।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ