BREAKING NEWS

১১ চৈত্র  ১৪২৯  রবিবার ২৬ মার্চ ২০২৩ 

READ IN APP

Advertisement

৫ রাজ্যে পরিবেশ রক্ষার প্রচার, সাইকেলে চেপে ১৮০০ কিমি ঘুরলেন বাংলার প্রৌঢ়

Published by: Paramita Paul |    Posted: January 3, 2023 12:49 pm|    Updated: January 3, 2023 12:53 pm

Bengali man travels to five states in cycle to create awareness about environment | Sangbad Pratidin

অর্ণব আইচ: কলকাতা থেকে কালকা। প্রায় ১৮০০ কিলোমিটার। কুয়াশা ঢাকা পথে কনকনে ঠান্ডা। কিন্তু কোনও কিছুতেই পরোয়া নেই কলকাতার ‘সাইকেল ম‌্যান’-এর। সবুজকে বাঁচিয়ে রাখতে কলকাতা থেকে সাইকেলেই পাড়ি দিলেন রাজারহাটের লক্ষ্মণ চক্রবর্তী। মাঝপথে তিনি সবুজের পাঠ দিয়েছেন স্কুলে গিয়ে। সঙ্গে সাইকেলে করে নিয়ে গিয়েছেন অন্তত ৬০টি গাছের চারা। পাঁচটি রাজ্যের অন্তত ২৫টি স্কুল চত্বরে যত্ন নিয়ে পুঁতেছেন কলকাতার গাছ। কিছু তুলে দিয়েছেন ছাত্রছাত্রীদের হাতেও।

রাজারহাটের বাসিন্দা ৫৯ বছরের লক্ষ্মণ চক্রবর্তী কাজ করতেন কারখানায়। লকডাউনে সেই কাজ চলে যাওয়ার পর জমানো টাকায় চলত সংসার। কিন্তু সে আর কতদিন? ছোটখাটো কাজ করতে শুরু করেন। আর তার সঙ্গে বড় ‘বন্ধু’ সাইকেল নিয়ে মাঝেমধ্যে ঘুরতে বেরিয়ে পড়তেন। ঘুরছেনই যখন, মানুষের জন‌্য কেন কিছু করা নয়? সেই কথা ভেবেই একগাদা মাস্ক কিনে বেরিয়ে পড়েন রাস্তায়। হাতে লেখা পোস্টার বোর্ডে সাঁটিয়ে হাতে মাস্ক নিয়ে কখনও শিয়ালদহ, কখনও রাসবিহারী, আবার কখনও বা অন‌্যান‌্য রাস্তায় শুরু করেন প্রচার। কেউ মাস্ক না পরলেই তাঁকে ধরে মাস্ক পরার উপযোগিতা সম্পর্কে বুঝিয়ে তাঁকে পরিয়ে দিতেন মাস্ক। এই কাজে তাঁকে সাহায‌্য করত কলকাতা পুলিশও। করোনাপর্ব স্তিমিত হওয়ার পর ‘সাইকেল ম‌্যান’ মাতলেন ‘সবুজ অভিযানে’।

[আরও পড়ুন: ১৩ দিনে রাশিয়ার ৩ নাগরিকের রহস্যমৃত্যু ভারতে, এবার কার্গো জাহাজে মিলল রুশ ইঞ্জিনিয়ারের দেহ]

লক্ষ্মণ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, গাছের সংখ‌্যা কেন বৃদ্ধি করতে হবে, মানুষের প্রাণ বাঁচাতে গাছের কী প্রয়োজন, তা স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যেই প্রচার করার পরিকল্পনা করেন তিনি। যেখানে সেখানে প্লাস্টিক ফেলে দূষণ রোধের জন‌্যও প্রচারের পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু তা শুধু এই রাজ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চাননি লক্ষ্মণ। তিনি ঝাড়খণ্ড, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা ও পাঞ্জাব–এই পাঁচটি রাজ্যে ঘুরে তিনি সিদ্ধান্ত নেন সাইকেলে করে ‘সবুজ প্রচার’-এর। সামান‌্য যে টাকা হাতে ছিল, তা হাতে নিয়েই সাইকেল সম্বল করে গত ১৮ নভেম্বর বেরিয়ে পড়েন কলকাতা থেকে। সাইকেলে করে কলকাতা ছেড়ে একের পর এক জেলা ঘুরে ঝাড়খণ্ড সীমান্তে আসার আগেই ছোট একটি দুর্ঘটনার কবলে পড়েন তিনি। পায়ে আঘাত পান। তাই দিন কয়েক থেমে যেতে হয়। সারিয়ে ফেলেন সাইকেল।

এর পর কোনও দিকে না তাকিয়ে হাইওয়ের একপাশ দিয়ে সাবধানে সাইকেল চালিয়ে পার হতে থাকেন ঝাড়খণ্ড, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানার মতো রাজ‌্যগুলি। তাঁর সাইকেলে রাখা জামাকাপড়, কম্বল। আর প্রচুর গাছের চারা। এভাবেই দিনে ৫০ কিলোমিটার থেকে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত সাইকেল চালিয়ে পাড়ি দিয়েছেন। দিনে রাস্তার গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে দাঁড়িয়ে প্রচার চালিয়েছেন। মানুষ ভালবেসে তাঁর হাতে তুলে দিয়েছেন সাহায‌্য। ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতেও কম্বলমুড়ি দিয়ে রাতে ধাবায় ঘুমিয়েছেন। ধাবার মালিকরা তাঁকে ভালবেসে দিয়েছেন খাবার। ফের রোদ উঠতে না উঠতেই চলতে শুরু করেছেন ‘সাইকেল ম‌্যান’।

[আরও পড়ুন: পাক অনুপ্রবেশ রুখতে আঁটসাট পদক্ষেপ কেন্দ্রের, গুজরাট সীমান্তে তৈরি হচ্ছে স্থায়ী বাঙ্কার]

প্রত্যেক রাজ্যের পাঁচটি স্কুল, যেগুলি রাস্তার কাছেই পড়বে, সেগুলি বেছে নিয়েছিলেন আগে থেকেই। ওই স্কুলগুলির প্রধানশিক্ষকের সঙ্গে কথা বলার পর ছাত্রছাত্রীদের কাছে সবুজের প্রচার চালিয়েছেন। স্কুলেই পুঁতেছেন গাছ। এভাবে হরিয়ানার কালকায় পৌঁছে এগিয়ে গিয়েছেন পাঞ্জাবের দিকে। এক মাসের মধ্যেই পৌঁছে গিয়েছেন পাঞ্জাবে। তবে ইচ্ছামতো চলাফেরার অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রচণ্ড ঠান্ডা আর কুয়াশা। এবার তাঁর ফিরে আসার পালা। ফের প‌্যাডেলে চাপ দিয়ে ১৮০০ কিলোমিটার পেরিয়ে তিনি এখন কলকাতার রাস্তায়। ফেরার পথেও মানুষের মাঝে সবুজ প্রচার করবেন বলে জানিয়েছেন ‘সাইকেল ম‌্যান’।

Sangbad Pratidin News App: খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে লাইক করুন ফেসবুকে ও ফলো করুন টুইটারে