Advertisement
Advertisement
FIFA World Cup

তিনযুগের শাপমুক্তি! রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে বিশ্বজয়ী আর্জেন্টিনা, মারাদোনাকে ছুঁলেন মেসি

হ্যাটট্রিক করেও ট্র্যাজিক নায়ক হয়েই রইলেন এমবাপে।

Argentina beats France in penalty shootout to clinch the FIFA World Cup 2022 for 3rd time | Sangbad Pratidin
Published by: Sulaya Singha
  • Posted:December 18, 2022 11:26 pm
  • Updated:December 18, 2022 11:43 pm

আর্জেন্টিনা: ৩ (মেসি-২ একটা পেনাল্টি থেকে, ডি মারিয়া)
ফ্রান্স: ৩ (এমবাপে-৩ একটা পেনাল্টি থেকে)
পেনাল্টি শুটআউটে জয়ী আর্জেন্টিনা (৪-২)

দুলাল দে, দোহা: ১৯৮৬-র বিশ্বকাপে পশ্চিম জার্মানির বিরুদ্ধে দু’গোলে এগিয়ে গিয়েও চাপে পড়তে হয়েছিল দিয়েগো মারাদোনার আর্জেন্টিনাকে। জোড়া গোল শোধ করে ম্যাচে ফেরে প্রতিপক্ষ। ৩৬ বছর পর কাতারে রবিবাসরীয় রাতে মেসির আর্জেন্টিনার শিবিরেও ফিরেছিল সেই বিভীষিকাময় স্মৃতি। সেবার বুরুচাগার গোলে নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়েছিল ম্যাচ। কিন্তু এবার এক্সট্রা টাইম ছাপিয়ে পেনাল্টি শুটআউটের পর এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। মেসির হাতে উঠল কাঙ্ক্ষিত বিশ্বকাপ। আর হ্যাটট্রিক করেও ট্র্যাজিক নায়ক হয়েই রইলেন এমবাপে। এমন হাইভোল্টেজ ফাইনাল শেষ কবে দেখেছে দুনিয়া, মনে করা কঠিন।

Advertisement

দিয়েগো মারাদোনা যে দূর থেকে আশীর্বাদ করছেন তাঁকে, সে অনুভূতির কথা আগেই ব্যক্ত করেছিলেন লিও মেসি। ফুটবলের রাজপুত্রের আশীর্বাদেই ৩৬ বছরের খরা কাটাল আর্জেন্টিনা। নীল সাদা রঙে বদলে গেল কাতারের লুসেইল স্টেডিয়াম। আজ মারাদোনা ভিআইপি বক্সে থাকলে না জানি কী করতেন। কিন্তু দূর থেকেও যে তৃপ্তির শিখরে পৌঁছে গিয়েছেন তিনি, তা আন্দাজ করতে কষ্ট হয় না। পারলেন, মেসি পারলেন। তাঁর দিকে ধেয়ে আসা সমস্ত অভিযোগ, অভিমান, অপমানের আঙুলগুলোকে গুঁড়িয়ে দিতে পারলেন। বুঝিয়ে দিলেন, ক্লাব নয়, দেশের জন্যও মেসি নিবেদিত প্রাণ। আর সেই সঙ্গে তাঁকে নিয়ে যাবতীয় তর্কের সমূলে অবসান ঘটল। রোজারিওর ছেলে আজ যেন বিশ্বজয় করে বৃত্ত সম্পন্ন করলেন। জন্ম দিলেন নতুন যুগের। যে যুগ শুধু তাঁকেই মনে রাখবে। যে যুগ আর্জেন্টিনা বলতে বুঝবে ম্যাজিশিয়ান মেসির কথা। রূপকথার সওদাগররা তো এমনই হয়। 

Advertisement


চলতি বিশ্বকাপে (FIFA World Cup 2022) কার্যত অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিল ফ্রান্স। সেই ফরাসি শিবিরের বিরুদ্ধে লড়াইটা যে মেসিদের জন্য বেশ কঠিন হবে, এমনটাই প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু এমবাপের পা আর দেশঁর মাথাকে ঘোল খাইয়ে কী অনবদ্য ছন্দে গোটা ম্যাচে নিজেদের দাপট দেখিয়ে গেলেন ডি মারিয়ারা। অথচ এই আর্জেন্টিনার শুরুটাই ছিল কাঁটায় মোড়া। সৌদি আরবের কাছে হারের পর এই দলকে ফেভারিটদের তালিকাতেই রাখেনি কেউ। তবে পরের ম্যাচ থেকে একেবারে অন্য রূপে ধরা দেয় লা আলবিসেলেস্তা। আর ফাইনালের প্রথমার্ধে ফ্রান্সের রক্ষণকে রীতিমতো কঠিন পরীক্ষার মুখে ফেলে দেন মেসিরা।

[আরও পড়ুন: আজ থেকে বিজয়ীর সমার্থক শব্দ লিওনেল মেসি]

এমবাপেদের বিরুদ্ধে এই দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের নেপথ্য নায়ক কিন্তু দাঁড়িয়ে ছিলেন সাইডলাইনে। তিনি লিওনেল স্কালোনি। গ্রিজম্যানকে জোনাল মার্কিংয়ে আটকে দেওয়াটাই মাস্টারস্ট্রোকে পরিণত হয়। সাপলাই লাইন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চাপে পড়ে যান দেশঁর ছেলেরা। গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো আবার বক্সের ভিতর ডি মারিয়াকে ফাউল করায় পেনাল্টি উপহার পেয়ে যায় আর্জেন্টিনা। পেনাল্টি থেকে গোল করতে কোনও ভুল হয়নি মেসির। পরের গোলটি এল ডি মারিয়ার পা থেকে। চোটের জন্য প্রায় গোটা টুর্নামেন্টে ডাগআউটে থাকা ডি মারিয়াই যেন আর্জেন্টিনার মসিহা হয়ে উঠেছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে এমবাপেকে দিয়ে মাঝমাঠ সচল করতে ফরাসি কোচ তুলে নেন জিরু ও ডেম্বেলেকে। তবে তাতেও গোলমুখ খুলতে পারেনি ফ্রান্স।

অনেকে যখন ধরেই নিয়েছেন বিশ্বকাপ ফাইনাল একেবারে একপেশে ম্যাচে পরিণত হয়েছে, তখনই যাবতীয় সমীকরণ ঘেঁটে দিল ফরাসি ব্রিগেড। ম্যাচের বয়স তখন ৮০ মিনিট। পেনাল্টি থেকে একটি গোল শোধ করলেন এমবাপে। মাত্র এক মিনিট পর কোমানের পাস থেকেও আরও একটি গোল পিএসজি স্ট্রাইকারের। আর তাতেই সমতায় ফেরে ফ্রান্স। আসলে ডি মারিয়াকে তুলে নেওয়ায় খানিকটা দুর্বল হয়ে পড়ে আর্জেন্টিনার ডিফেন্স ও সাপলাই লাইন। সেই সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করেন এমবাপে। আর ইনজুরি টাইমে মেসির নিশ্চিত গোল আটকে দিয়ে খেলা এক্সট্রা টাইমে নিয়ে গেলেন হুগো লরিস। তিনি তেকাঠির নিচে দাঁড়িয়ে বাস্তিল দূর্গ না সামলালে ৯০ মিনিটেই বিশ্বজয় করতেই পারতেন মেসিরা।

তবে নির্ধারিত সময়ে আটকে দিলেও এক্সট্রা টাইমে তাঁকে আর রোখা গেল না। ডান পায়ে গোল করে আবারও এগিয়ে দেন দলকে। একাই লড়ে গেলেন ক্রমাগত। কিন্তু কে জানত তখনও গতবারের চ্যাম্পিয়নদের স্বপ্নভঙ্গ হতে দেননি এমবাপে। ঠান্ডা মাথায় ২৩ বছরের ফরাসি তারকা পেনাল্টি থেকে গোল করে দলকে ফের অক্সিজেন দেন। আর সেই সঙ্গে কনিষ্ঠতম তারকা হিসেবে ফাইনালে হ্যাটট্রিকের নজির গড়লেন তিনি। কিন্তু আফসোস একটাই। ঈশ্বরিক পারফর্ম করেও ট্রফি ঘরে তোলা হল না তাঁর।

[আরও পড়ুন: বাংলাদেশকে উড়িয়ে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দ্বিতীয় স্থানে ভারত, কতটা কঠিন ফাইনালের রাস্তা?]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ