কলহার মুখোপাধ্যায়, বিধাননগর: ছেলে থ্যালাসেমিয়ার রোগী। জরুরি প্রয়োজন রক্তের। অথচ লকডাউন চলায় সহজে রক্ত পাওয়াও কঠিন। সন্তানকে নিয়ে রীতিমতো দিশেহারা অবস্থা বাবার। এই সময় ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হল একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের সদস্যরা। যে গ্রুপে ভিড় মোহনবাগান ভক্ত-সমর্থকদের। সেই গ্রুপের এডমিনই রক্তের প্রয়োজনের কথা ছড়িয়ে দেন। তারপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি। এক মোহনবাগানিকে রক্ত দিতে শতাধিক মোহনবাগানি ঝাঁপিয়ে পড়েন গ্রুপে। শেষপর্যন্ত রক্তের গ্রুপ মিলে যাওয়ায় বেলেঘাটার এক যুবক রক্ত দিয়ে প্রাণ বাঁচান বাগুইআটির ঋত্বিক ঘোষের।
আড়াই বছর বয়সে থ্যালাসেমিয়া ধরা পড়ে। তারপর থেকে এ রোগের সঙ্গে যুঝে চলেছেন সদ্য যৌবনে পা রাখা ঋত্বিক। ফুলবাগানের গুরুদাস কলেজে বাংলা অনার্সের ছাত্র। মাসে দু-তিনবার রক্তের প্রয়োজন হয়। যুবকের বাবা বিধাননগর পুরনিগমের অস্থায়ী কর্মী। সামান্য বেতন। টানাটানির সংসার। ছেলের চিকিৎসার খরচ চালাতে প্রাণপাত করতে হয় প্রতিনিয়ত। পাড়ার শুভাকাঙ্ক্ষী দাদা সোমেশ্বর বাগুই ঋত্বিকের চিকিৎসা করাতে ঘোষ পরিবারকে নিয়মিত সাহায্য করেন। এবারও ত্রাতা হয়ে ধরা দিলেন তিনিই।
[আরও পড়ুন: ‘আগামী বছরও বাতিল হতে পারে অলিম্পিক’, আশঙ্কা আয়োজক কমিটির প্রধানের]
সোমেশ্বর বাবু বলেন, “খবরটা শোনামাত্র মোহনবাগানের যে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ রয়েছে সেখানে জানিয়ে দিই। সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে মুহূর্তের মধ্যে খবর ছড়িয়ে পড়ে। প্রচুর মোহনবাগানি রক্ত দিতে রাজি হয়ে যান। তারপর রক্তের গ্রুপ মিলিয়ে বেলেঘাটার জয়ন্ত ঘোষ রক্তদান করেন।” জয়ন্ত বাবুর কথায়, “মানুষকে রক্ত দেওয়াটা আমাদের কর্তব্য। আর বাচ্চা ছেলেটা আমার ভাইয়ের মতো, তার উপর মোহনবাগানের সমর্থক। আবার লাগলে আবার দেব।”
এর আগে ঋত্বিকের বাবা অনেকগুলি ব্লাড ব্যাংকে ঘুরে বিফল হয়েছেন। সবকটি ব্লাড ব্যাংক ডোনার চেয়েছে। আর ডোনারের সন্ধানেই মোহনবাগানের ভক্তদের দ্বারস্থ হন সোমেশ্বরবাবু। ঋত্বিক বলছেন, “রক্ত না পেলে প্রাণ সংশয় হতে পারত আমার। হিমোগ্লোবিন কাউন্ট নেমে যাচ্ছিল দ্রুত। মোহনবাগানের কাকুরা বাঁচালেন।” ঋত্বিকের চিন্তার কিছু নেই। লকডাউন বাড়লেও তার রক্তের জোগান নিশ্চিত থাকবে। ডোনারের অভাব হবে না। একযোগে জানিয়েছেন মোহনবাগান গ্রুপের শতাধিক সদস্য।