সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আলোর খোঁজ তো সবাই করে। কিন্তু, অন্ধকার? কারও অন্ধকার দিকের খবর ক’জন নেয়! চিন সেই সাহস দেখাল। বৃহস্পতিবার সকাল, বেজিংয়ে ঘড়িতে যখন ১০টা বেজে ২৬ মিনিট, ঠিক তখন চাঁদের ‘অন্ধকার দিকে’ অবতরণ করল চিনের অভিযাত্রী যান চ্যাঙ্গে ৪।
‘চাঁদের অন্ধকার দিক’। আমরা পৃথিবীবাসীরা এমন মন্তব্য মাঝেমধ্যে করে থাকি বটে, কিন্তু ব্যাপারটা বড্ড ভুল। আসলে চাঁদের অন্ধকার দিক বলে কিছু নেই। হয় না। সম্ভবই না। কারণ সূর্যের আলো সমানভাবে পড়ে চাঁদের দু’দিকেই। কিন্তু, পৃথিবী থেকে আমরা চাঁদের একটা দিকই দেখতে পাই। সূর্যের আলোয় রাতের আকাশে ঝলমলে সেই দিকটির অপর প্রান্তটিকে ভ্রান্ত ধারণায় অন্ধকার বলে ধরে নিই আমরা। তবে অন্ধকার বলতে যদি অজানা ধরা হয়, তা হলে চাঁদের এই অপর প্রান্তটিকে ‘অন্ধকার’ বলা যেতেই পারে। কারণ পৃথিবী থেকে চাঁদে একাধিকবার মহাকাশ যান পৌঁছলেও তা পৌঁছেছে আমাদের চেনা দিকটিতেই। এই প্রথম চাঁদের অজানা, অদেখা দিকে পৌঁছনোর সাহস দেখাল চিন। বা আমাদের চলতি কথায় উদ্যোগ নিল অন্ধকার দিকে আলোকপাত করার।
[ নিশানায় ভারত, পাকিস্তানের জন্য অত্যাধুনিক রণতরী গড়ছে চিন ]
মহাকাশ অভিযানের ইতিহাসে এই চেষ্টা অভিনব বই কি। প্রথমত, পৃথিবীর তড়িৎচুম্বকীয় অবস্থা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে চাঁদকে এই প্রথম কাছ থেকে জানা যাবে। আর ঠিক এই একই কারণে চাঁদের এই পৃষ্ঠ থেকে একাধিক মহাজাগতিক ঘটনা পৃথিবীর প্রভাবমুক্ত হয়ে প্রত্যক্ষ করা যাবে। শুধু তাই নয়, বিজ্ঞানীদের মতে, চাঁদের এই পৃষ্ঠ থেকে ব্রহ্মাণ্ডের অনেক দূরতম আর গভীরতম আওয়াজ চিনের অভিযাত্রী যান ‘চ্যাঙ্গে ৪’-এর কর্ণগোচর হবে। চিনের জাতীয় মহাকাশ বিষয়ক বিভাগের লুনার এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড স্পেস সেন্টারের ডেপুটি ডিরেক্টর তোংজি লিউ জানিয়েছেন, “অবশ্যই চ্যাঙ্গে ৪ অভিযানের সাহায্যে আমরা মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে নিজেদের নাম উজ্জ্বল করতে চাই। এই কৃতিত্ব আর সাফল্যে আমরা আপ্লুতও। তবে, চাঁদের অজানা দিককে প্রথমবার জানার রোমাঞ্চও কিছু কম নয়।”
[ ‘কে ব্যবহার করছে জানি না’, মোদির আফগান লাইব্রেরি নিয়ে কটাক্ষ ট্রাম্পের ]
ইতিমধ্যেই চাঁদের অপর পৃষ্টের দক্ষিণ প্রান্তের এইটকেন বেসিনে অবতরণ করেছে চ্যাঙ্গে ৪। চাঁদের অপর পৃষ্ঠের ছবিও পাঠিয়েছে পৃথিবীতে। এটাই মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে চাঁদের অজানা পৃষ্ঠের প্রথম ছবি। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, চাঁদের মাটিতে লালচে আলো। মসৃণ জমি। তবে ঢালু গর্তের মতো খাদও রয়েছে সামনে। ‘চ্যাঙ্গে ৪’ নামের চিনের অভিযাত্রী যানটি লম্বায় ১.৫ মিটার চওড়া ১ মিটার। এছাড়া দু’টি মুড়ে ফেলা যায় এমন সৌর প্যানেলও রয়েছে এই যানে। যেহেতু এটি চাঁদের অপর প্রান্তে এবং পৃথিবীর যোগাযোগ ক্ষেত্রের বাইরে। তাই সরাসরি চ্যাঙ্গে ৪ থেকে পৃথিবীতে তথ্য পাঠানো সম্ভব নয়। বিষয়টি আগেই ভেবে ব্যবস্থা করে রেখেছিল চিন। মহাকাশে চাঁদকে আবর্তনকারী একটি উপগ্রহ পাঠিয়ে রেখেছিল আগেই।