সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পাকিস্তানের প্রায় সব মাদ্রাসার সঙ্গে সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলির ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ নিয়ে ইমরান খান সরকারের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিল আন্তর্জাতিক নজরদার সংস্থা এফএটিএফ (ফাটফ)। ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (ফাটফ)-এর কঠোর নজরদারির মধ্যে রয়েছে পাকিস্তানের প্রশাসন।
পাকিস্তানের মাটিতে সক্রিয় সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলির নানা উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহ করা, তাদেরকে অর্থের জোগান দেওয়া, মাদ্রাসা থেকে জেহাদি নিয়োগের প্রক্রিয়া চালু রাখা, তাদের গোপন কাজকর্ম, ধর্মের নামে জেহাদ, এসব পাকিস্তান সরকার কেন বন্ধ করতে পারছে না এবং কেন এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না? ফের এই প্রশ্ন করেছে নজরদার সংস্থা ফাটফ। ফাটফের অফিস প্যারিসে। এদের ক্ষমতাও অসীম।
‘ফাটফ’ কর্তৃপক্ষকে উদ্ধৃত করে খবর প্রকাশ করেছে দ্য নিউজ-সহ বেশ কিছু পাকিস্তানি ও বিদেশি ওয়েবসাইট। সেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে, ‘ফাটফ ক্রুদ্ধ হয়ে পাকিস্তান সরকারকে তোপ দেগেছে। বলেছে, পাকিস্তানের সব মাদ্রাসা ও মসজিদের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ও যোগাযোগ কেন? কেন মাদ্রাসার পড়ুয়াদের জেহাদি হিসাবে কাজে লাগানো হচ্ছে? আপনারা কেন এসব বন্ধ করতে পারছেন না? এসব বন্ধ করতে কী কী ব্যবস্থা আপনারা নিয়েছেন এবং নিচ্ছেন? আপনাদের এই সংক্রান্ত ১৫০টি প্রশ্ন পাঠানো হয়েছে ইমেল করে। আপনারা ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারির মধ্যে ‘ইমেল’ করেই উত্তর দেবেন। আপনাদের উত্তরের সমর্থনে উপযুক্ত তথ্য, প্রমাণ, নথি, ছবি পাঠাবেন। আমরা সেগুলি যাচাই করে দেখব। সেগুলি সন্তোষজনক না হলে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই পাকিস্তানকে আমরা কালো তালিকাভুক্ত করে দেব।’
ইমরান খান সরকার এই ইমেল ও প্রশ্নাবলি পাওয়ার কথা কবুল করেছে। আগামী ২১ থেকে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত চিনের রাজধানী বেজিংয়ে বসছে আন্তর্জাতিক নজরদার সংস্থা ফাটফ-এর গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক। সেখানেই ঠিক হতে চলেছে পাকিস্তানের ভাগ্য। পাকিস্তানকে কত বছর কালো তালিকাভুক্ত করা হবে তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। পাকিস্তান সরকারের ‘উত্তর’ (ভারত সরকার যেটাকে ‘অজুহাত’ বলছে) সেটা যদি মোটামুটি সন্তোষজনক হয় তাহলে পাকিস্তানকে ‘ধূসর তালিকা’য় রেখে দেওয়া হবে। অর্থাৎ এখন যেমনটা আছে। সেক্ষেত্রে আপাতত ‘কালো তালিকাভুক্ত’ করা হবে না।
সূত্রের খবর, ফাটফ-এর বৈঠকে ‘বন্ধু’ পাকিস্তানকে বাঁচানোর জোর চেষ্টা চালাবে চিন। সেই তৎপরতা ইতিমধ্যে তারা শুরু করে দিয়েছে। কয়েকদিন আগেই ফাটফ তাদের বিবৃতিতে স্পষ্ট জানিয়েছিল, ‘বেজিংয়ে পরবর্তী অধিবেশনের আগে পাকিস্তান যদি ধর্মীয় জেহাদি ও সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে ‘স্থায়ী ও পাকা ব্যবস্থা’ না নেয় তাহলে পাকিস্তানকে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে। এই ব্যবস্থা নিতে হবে ফাটফ-এর তৈরি করা মানদণ্ডের ভিত্তিতে। কালো তালিকাভুক্ত হলে পাকিস্তান বিশ্বের কোনও দেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য, আর্থিক লেনদেন করতে পারবে না। আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, ইসলামিক ব্যাংক, এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাংকের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির কাছ থেকে কোনও আর্থিক সাহায্য বা ঋণ নিতে পারবে না। চিন , সৌদি আরব-সহ কোনও দেশ পাকিস্তানকে সাহায্য করতে পারবে না।’
বিশেষজ্ঞদের মত, কালো তালিকাভুক্ত হলে মারাত্মক ফল হবে দু’টি। এক, ভবিষ্যতে পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্র ঘোষণা করা অনেক সহজ হয়ে যাবে। দুই, প্রবল আর্থিক সংকটে ধুঁকতে থাকা পাকিস্তান পুরোপুরি দেউলিয়া হয়ে যাবে। দ্রুত ভেঙে পড়বে সেখানকার সরকার ও প্রশাসন। পিঠ বাঁচাতে পাকিস্তান সরকার বলেছে, “ফাটফ ২৭ দফা ব্যবস্থা নিতে বলেছে। তার মধে্য আমরা বেশ কিছু ব্যবস্থা নিয়েছি। ফেব্রুয়ারি মাসের সময়সীমার মধ্যে সব কিছু করে দেখানো অসম্ভব। তাই ২০২০ সালের জুন মাস পর্যন্ত সময় চেয়ে আমরা আবেদন জানাব সংস্থাটির কাছে।” ফাটফ-এর মত, হাফিজ সইদের দু’টি সংস্থা জামাত-উদ-দাওয়া, ফালাহ-এ-ইনসানিয়তের মতো ধর্মীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি পাক সরকার। এদের দাপট অব্যাহত। এরাই সন্ত্রাসে জেহাদি সরবরাহ করে চলেছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.