ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, বারাসত : জীবনে প্রথমবার ভোটে দাঁড়াচ্ছেন। শুধু ভোটে দাঁড়াচ্ছেনই না। ভোট দিচ্ছেনও প্রথমবার। লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে যে প্রার্থী ভোট চাইতে যাচ্ছেন, তিনি নিজে জীবনে কখনও ভোট দেননি ! বিষয়টি শুনতে অবিশ্বাস্য লাগলেও এটাই এবারের ভোট বাজারের ‘হট টপিক’।
বারাসত লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী মৃণালকান্তি দেবনাথ এই প্রথমবার বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। বৃহস্পতিবার টেলিফোনিক সাক্ষাতকারে সে কথাই জানালেন তিনি। জীবনের অধিকাংশ সময় বিদেশে কাটিয়েছেন, কিন্তু গত দশ বছর দেশে থাকা সত্ত্বেও ভোট দিতে যাননি এই চিকিৎসক। বিষয়টিকে মৃণালবাবু যেভাবেই ব্যাখ্যা করুন না কেন, শাসকদল তৃণমূল-সহ বাকি পার্টিগুলি প্রত্যাশিতভাবে বিষয়টিকে হাতিয়ার করেছে। তৃণমূলের দাবি, যিনি গণতন্ত্রই মানেন না, তিনি মানুষের প্রতিনিধি হওয়ার জন্য ময়দানে নামেন কী করে। বামেদের কটাক্ষ, “গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন না যখন ষড়যন্ত্রে বিশ্বাস করেন নিশ্চয়ই।”
[আরও পড়ুন- মামার বক্তব্য দিয়ে ভাগনিকে আক্রমণের কৌশল কংগ্রেসের ]
প্রতিপক্ষ যাই বলুক না কেন। মৃণালবাবু বিষয়টিকে ইতিবাচক বলেই মনে করছেন। তাঁর দাবি, জীবনে প্রথমবার ভোট দিতে গিয়ে যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল সে কারণেই ভোট না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কী সেই অভিজ্ঞতা? মৃণালবাবু জানিয়েছেন, ১৮ বছর বয়সে পা দিয়ে বাবার সঙ্গে ভোট দিতে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু, পাড়ার ঝান্ডাধারী মস্তানরা মাঝপথ থেকেই ফিরিয়ে দিয়েছিল তাঁকে। বলেছিল, আর যেতে হবে না, আপনাদের ভোট হয়ে গিয়েছে। সেই বিতৃষ্ণা থেকেই আর কোনওদিন ভোটকেন্দ্রের দিকে যাননি তিনি।
[আরও পড়ুন- বৃথা ভারতের ডসিয়ের, যথারীতি জঙ্গি শিবিরের অস্তিত্ব অস্বীকার পাকিস্তানের]
মৃণালবাবু ও বিজেপির তরফ থেকে জানানো হয়েছে, ১৯৭৪ সালে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডাক্তারি পাস করার পর কয়েক বছর দেঘরিয়ায় একটি ঘর ভাড়া করে প্র্যাকটিস শুরু করেন তিনি। এরপরই উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাড়ি দেন। প্রথমে দক্ষিণ আমেরিকা। তারপর লন্ডন। সেখান থেকে সাইকোলজিক্যাল মেডিসিন নিয়ে পড়তে ভিয়েনা যান। এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজের একটি দ্বীপে সরকারের তরফে স্বাস্থ্য পরিষেবা পরিচালনার দায়িত্ব পান। তবে বছর দশেক আগে দেশে ফিরে আসেন তিনি। দুই সন্তান তাঁদের পরিবার নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত। বর্তমানে হাবরায় ও চিনার পার্কে দুটি বাড়ি আছে তাঁর। স্ত্রীর সঙ্গে অবসর জীবন কাটাতে দেশে এসেছিলেন।
[আরও পড়ুন-‘ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা’, চিরাচরিত পথের বাইরে অভিষেকের ভোটপ্রচার]
কিন্তু ফিরে আসার পরও এই দশ বছর ভোট দিতে যাননি কেন ? মৃণালবাবুর যুক্তি, “১৮ বছর বয়সে যখন ভোট দিতে গিয়েছিলাম তখন মস্তানদের মার খাওয়ার ভয় পেয়েছিলাম। এখন হয়তো মারবে না। তবে পরিস্থিতি দেখে ভয় হয় ভোট দিতে গেলে কেউ যদি অপমান করে তাড়িয়ে দেয়। তাই যাইনি।” যদিও মৃণালবাবুর এই যুক্তি কোনওভাবেই মানতে নারাজ প্রতিপক্ষ দলগুলি। তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার কার্যকরী সভাপতি নারায়ণ গোস্বামীর সাফ বক্তব্য, “এত বছরে তিনি অনেকবার ভোট দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু দেননি। অর্থাৎ গণতন্ত্রের প্রতি তাঁর অশ্রদ্ধা রয়েছে। আর বিজেপি প্রার্থীর জনসংযোগ নেই। বিজেপি কর্মীরাও তাঁকে চেনেন না। এ ধরনের মানুষ কীভাবে ভোটে দাঁড়ান !”