রাজ কুমার, আলিপুরদুয়ার: ভোটের উত্তাপে গা সেঁকতে রাজি নন ডুয়ার্সের বনবসতিির বাসিন্দারা৷এখানে এখন বিষাদের সুর। ঘিরে ধরেছে উচ্ছেদের আতঙ্ক৷ দেশের অবৈধ বনবস্তিবাসীদের উচ্ছেদ করা নিয়ে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল কেন্দ্রের তরফে, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট তাতে অন্তরবর্তীকালীন স্থগিতাদেশ জারি করে। কিন্তু ভোট মিটলেই নাকি সেই নির্দেশ ফের কার্যকর হবে৷ বস্তির বাসিন্দারা কবে থেকেই এসব শুনে আসছেন৷ এবার সময় আসন্ন৷ ভোট শেষ হয়ে নতুন সরকার তৈরি হবে ২৩ মে-র পরপরই৷ তাই ভোট মানে ডুয়ার্সের কয়েক লক্ষ বনবস্তিবাসীর কাছে অশুভ সময়৷
[ আরও পড়ুন : ‘কেন্দ্রের উদাসীনতায় হয়নি ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান’, নাম না করে ভারতীকে খোঁচা দেবের]
আর ভোটপ্রার্থীদেরও এই বনবস্তি নিয়ে তেমন কোনও মাথাব্যথা নেই৷ এসব এলাকায় পা পড়ে না কোনও দলের প্রার্থীরই৷ মুখে অবশ্য বনবস্তির প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন আলিপুরদুয়ার কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী দশরথ তিরকে৷ তিনি বলেন, ‘আমরা জানি, দেশের সর্বোচ্চ আদালতে এই মামলা চলাকালীন কেন্দ্রীয় সরকারের আইনজীবী কয়েক দফায় উপস্থিত ছিলেন না। আর সেই কারণেই অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট৷ আমরা আদালতের রায়কে শিরোধার্য করে বলছি, এর জন্য দায়ী কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। আর তাই বিজেপির বিরুদ্ধে আমরা বনবস্তিবাসীর কাছে প্রচার চালাচ্ছি।’ পালটা বিজেপির জেলা সভাপতি গঙ্গাপ্রসাদ শর্মা বলেন, ‘ দেশের সর্বোচ্চ আদালত এই রায় দেওয়ার পর আমরা যে সব রাজ্যে ক্ষমতায় রয়েছি সেই রাজ্যের সরকার এই রায়ে স্থগিতাদেশ চেয়ে আবেদন জানিয়েছে। অথচ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তেমন কোনও ভূমিকা লক্ষ্য করা যায় নি। এই সরকার কতটা বনবস্তিবাসীর সঙ্গে থাকতে চান, তা বুঝুন এখানকার মানুষই৷’
[ আরও পড়ুন : লোকসভা ভোটে বিজেপির হয়ে লড়ছেন মামা ও ভাগনে!]
তবে তৃণমূল আর বিজেপি মুখে যাইই বলুক, বনবস্তির বাসিন্দারা কিন্তু ভোটে মাথা ঘামাতে নারাজ। রাজাভাতখাওয়ার লালসিং ভুজেলের কথায়, ‘নিজের বাপ-ঠাকুরদার ভিটেমাটি না থাকলে আর ভোটের অধিকার থেকে লাভ কী আমাদের? আমরা বংশ পরম্পরায় জঙ্গলে বসবাস করি। জঙ্গল রক্ষা করি। এই জঙ্গল আমাদের পুর্বপুরুষদের হাতে তৈরি। অথচ আজ বলা হচ্ছে, জঙ্গলে আমাদের অধিকার নেই! এখানে আমরা থাকতে পারব না, ভোট দিয়ে আর কী হবে?’ প্রয়োজনে একসঙ্গে ভোট বয়কটের পথেও হাঁটতে পারেন বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন ভুজেল৷
[ আরও পড়ুন : ‘কোমর বেঁধে কাজে নামো’, প্রচারে দলীয় কর্মীদের বার্তা দিতে অভিনব কাজ বিজেপি প্রার্থীর]
উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলায় প্রায় ১০০ বনবস্তি রয়েছেন। জলদাপাড়া, গরুমারা ও বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় এইসব বনবস্তিতে লক্ষাধিক মানুষের বসবাস৷ উচ্ছেদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা মানবাধিকার কর্মী সুমন গোস্বামী বলেন, ‘ ২০০৮ সালে ফরেস্ট রাইট অ্যাক্ট তুলে দেওয়ার আবেদন জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেন বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা৷ সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে এই বছর ২৩ ফেব্রুয়ারি অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশ জারি করা হয়৷ এই রকম একটি রায়ের পেছনে দেশের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারগুলোর ষড়যন্ত্র রয়েছে।’ ভোট বাদ দিয়ে আপাতত জঙ্গলের অধিকারের আন্দোলন আরও সংঘবদ্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি৷