সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: না আছে কোনও নেতা। না আছে কোনও দক্ষ কর্মী। ফলে সংগঠনটাই নেই। শুধু ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগানের আবেগে ভেসেই জঙ্গলমহলের অন্যতম জেলা পুরুলিয়া গেরুয়াময়৷ লোকসভা ভোটের ফলাফলে পুরুলিয়ার রাজনৈতিক পর্যবেক্ষণ এমনই।
এই জেলায় পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে থেকেই ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগানে শাসককে বিদ্ধ করেছিল বিজেপি। পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপি বনমহলের এই জেলায় ভাল ফল করায় ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি এই জেলায় কার্যত তাদের রাজনৈতিক স্লোগান হয়ে যায়। তবে এই ধ্বনি লোকসভা ভোটের আগে আর শুধুই একটা রাজনৈতিক স্লোগান ছিল না। যেন আমজনতার মনের কথা হয়ে যায়। তাই জেলার তরুণ ভোটাররা ছাড়াও ক্ষুদ্র–বৃহৎ ব্যবসায়ী, প্রান্তিক কৃষক এমনকী সাংস্কৃতিক কর্মী, সমাজসেবী সংগঠনের সদস্যরাও ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে সাক্ষাতে ওই স্লোগান আওড়ে তবেই বাক্য বিনিময় করছেন।
[আরও পড়ুন: রাজ্যের ফলাফল LIVE: উত্তরবঙ্গ-জঙ্গলমহলে বিজেপির চমকপ্রদ উত্থান, নিশ্চিহ্ন বামেরা]
ভোটের এই ফলাফলে পুরুলিয়া জেলার রাজনৈতিক মহল বলছে, শুধুমাত্র উগ্র হিন্দুত্বের কথা বলেই সাবেক মানভূমে গেরুয়া ঝড় তুলল বিজেপি। তবে একথা মানতে চাইছে না গেরুয়া শিবির। দলের জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘আসলে এটা শাসকদল তৃণমূলের বিরুদ্ধে গণ অভ্যুত্থান। সেখানে ‘জয় শ্রীরাম’ একটা স্লোগান। যখন কঠিন পরিস্হিতি আসে তখন স্লোগান তুলতে হয়। আমরা হিন্দু, তাই পুরুলিয়া গর্বের সঙ্গে বলেছে ‘জয় শ্রীরাম’। এমন বিপুল জয়ের পেছনে শুধু যে এই স্লোগানই কাজ করেছে তা নয়। আমরা প্রায় তিন বছর ধরে এই জেলায় নানা রাজনৈতিক ইস্যু করে কর্মসূচির ঢেউ তুলে সংগঠন গড়েছি।এটা তারই ফল।’’
স্লোগানকে নিয়ে পুরুলিয়া জেলা বিজেপির ব্যাখা এমনটা হলেও, বিজেপি বিরোধী সব দলই কিন্তু বলছে, ওই ধ্বনির ওপর ভর করেই সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে ভোট ভাগ হয়ে গেছে। তাই পুরুলিয়া জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা কংগ্রেস প্রার্থী নেপাল মাহাতো বলছেন, ‘জয় শ্রীরাম স্লোগানেই পুরুলিয়া কেন্দ্রের অধিকাংশ ভোট সব বিজেপিতে চলে গেল। সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে ভোট ভাগ হয়ে যাওয়ার এমন উদাহরণ অতীতে পুরুলিয়ায় দেখা যায়নি। লোকসংস্কৃতি ঘেরা এই জেলার কাছে যা অনেক বড় বিপদ!’
[আরও পড়ুন: ট্রেন্ডে বাজিমাতের দোরগোড়ায় দেব-নুসরত-মিমি, দিল্লি দূর মুনমুনের]
তাই বিজেপিকে ঠেকাতে বলা ভাল এই জেলায় গেরুয়া শিবিরের ছত্রছায়ায় থাকা রামভক্তদের আটকাতে তৃণমূলও পালটা ‘সংকটমোচন হনুমান দল’ বা ‘বীর হনুমান দল’ গঠন করে। কিন্তু তাতে লাভ বিশেষ হয়নি৷ বরং শাসকদলকে আরও বেশি করে বিদ্ধ হতে হয় গেরুয়া শিবিরের রাজনৈতিক আক্রমণে। পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট তথা পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,‘‘ধর্মের নামে রাজনীতি করে, স্লোগান তুলে দীর্ঘদিন রাজনৈতিক ময়দানে থাকা যায় না। সেটা প্রমান হবেই৷’’ ফরওয়ার্ড ব্লকের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তথ্য এই কেন্দ্রের বাম প্রার্থী বীর সিং মাহাতো বলেন, ‘‘এই জেলায় বিজেপির না আছে কোনও নেতা। না আছে কোনও সংগঠন। শুধু ‘জয় শ্রীরাম’–এর আবেগেই একটা বড় অংশ বিজেপির দিকে ঝুঁকে পড়ল।’’
তাই বৃহস্পতিবার সকাল থেকে প্রত্যেকটা রাউন্ড গণনার পর মাইকে ফল ঘোষণায় যখন বিজেপির এগিয়ে থাকার খবর আসছিল তাদের শিবির থেকে ভেসে আসছিল, ‘জয় শ্রীরাম, জয় জয় শ্রীরাম।’
ছবি: সুনীতা সিং৷