দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: আমফানের তাণ্ডবের জের এখনও কাটেনি। তারই মাঝে জেলা পরিদর্শনে এসে তৃণমূলীদের হাতে বিজেপি নেতৃত্বের আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগকে কেন্দ্র করে রীতিমতো উত্তেজনা ছড়াল হুগলির উত্তরপাড়ায়। বিজেপির রাজ্য সম্পাদক সায়ন্তন বসু ও শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি শ্যামল বসুর উপর চড়াও হয়ে শারীরিকভাবে আঘাত করার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এই ঘটনার জন্য সায়ন্তন বসু সরাসরি তৃণমূলের জেলা সভাপতি দিলীপ যাদবকে দায়ী করেছেন। এদিকে বিজেপি (BJP) নেতাদের উপর হামলার ঘটনার কথা ছড়িয়ে পড়তেই রবিবার বিকেলেই হুগলির বিভিন্ন জায়গায় বিজেপি কর্মী ও সমর্থকরা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান।
আমফানের তাণ্ডবে দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, কলকাতা ও হুগলি জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত। এখনও হুগলির বিভিন্ন জায়গায় বিদ্যুৎ পরিষেবা ও পানীয় জল সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি। বিশেষ করে উত্তরপাড়ার বিভিন্ন এলাকায় সিইএসসির কর্মীরা কাজ করতে গেলে বাধা দেওয়া হয়। এর ফলে বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রে অনেকটাই সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, বিজেপির উসকানিতেই বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক হতে পারছে না। শুক্রবার বিদ্যুতের দাবিতে উত্তরপাড়ার জিটি রোডে অবরোধকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে জনতার তীব্র বচসাও হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ।
[আরও পড়ুন: এখন পাড়ায়-পাড়ায় জেনারেটরের বিকট শব্দ, শিকেয় শব্দদূষণ রোখার বিধিনিষেধ ]
আজ হুগলি জেলায় পরিস্থিতি পরিদর্শনে এসে বিজেপির সায়ন্তন বসু অভিযোগ করেন, আমফানের পর বিদ্যুতের দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে তাঁদের বেশকিছু কার্যকর্তা আক্রান্ত ও গ্রেপ্তার হয়েছে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড়ে বহু মানুষের বাড়িঘর ভেঙে ধুলিসাৎ হয়ে গিয়েছে। তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর জন্যই তিনি হুগলিতে এসেছেন। কিন্তু, তৃণমূল কংগ্রেস এইসব মানুষের সঙ্গে তাঁদের দেখা করতে দেবেন না। সায়ন্তন বসুর আরও অভিযোগ, দুপুরে উত্তরপাড়ার রাজেন্দ্র অ্যাভিনিউতে তৃণমূল নেতা দিলীপ যাদবের নেতৃত্বে তাঁর সাগরেদরা বিজেপি নেতা শ্যামল বসুর গাড়িতে চড়াও হয়। তাঁদের শারীরিকভাবে আঘাত করার চেষ্টা করে। পুলিশের সামনে পুরো ঘটনা ঘটলেও পুলিশ নিষ্ক্রিয় ছিল। পাশাপাশি তিনি গতকাল দিলীপ ঘোষকে দুর্গত এলাকায় মানুষের সাথে দেখা করতে না দেওয়ার বিষয়ে বলেন, এভাবে আমাদের আটকানো যাবে না। একটা দিলীপ ঘোষকে আটকালে রাস্তায় ১০ হাজার দিলীপ ঘোষ রাস্তায় নামবে। এর জবাব তৃণমূল নির্বাচনে পাবে।
পালটা জবাব দিতে গিয়ে তৃণমূলের হুগলি জেলা সভাপতি দিলীপ যাদব বলেন, আমফানের পর আমাদের দলের ও পুরসভার কর্মীরা মানুষকে পরিষেবা দেওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে অশান্তি করার চেষ্টা করছে বিজেপি। দিলীপবাবুর অভিযোগ, শুক্রবার বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসু ও তাঁর দলবল এবং সিপিএমের নেতাদের একাংশ পুরসভার সাফাই কর্মীদের মারধর করে তাঁদের জিনিসপত্র ফেলে দেয়। এই খবর পাওয়ার পরেই তিনি ঘটনাস্থলে ছুটে যান। ততক্ষণে উত্তেজিত জনতা বিজেপি নেতৃত্বের উপর চড়াও হয়েছে। সায়ন্তন বসু-সহ বিজেপি নেতৃত্ব মানুষকে উসকে দিয়ে রাজনীতি করার চেষ্টা করছেন। উত্তরপাড়ার বুকে পুরকর্মী, বিদ্যুৎ দপ্তরের কর্মীদের আটকে রাখছে। আমি একজন দায়িত্বশীল রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে ঘটনাস্থলে না পৌঁছালে মানুষ মেরে ওদের হাড়গোড় সোজা করে দিত।
[আরও পড়ুন: বিধ্বস্ত কলকাতাকে ছন্দে ফেরাতে হাত মিলিয়ে কাজ, উত্তরবঙ্গ থেকে আসছেন বনকর্মীরা]
এদিকে উত্তরপাড়ায় বিজেপি ও তৃণমূল সংঘর্ষের খবর ছড়িয়ে পড়তেই বিকেলে হুগলির শ্রীরামপুর, কোন্নগর ও জাঙ্গিপাড়া-সহ বিভিন্ন জায়গায় রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান বিজেপি কর্মীরা। অন্যদিকে বিকেল পাঁচটা থেকে উত্তরপাড়া থানার সামনে বিজেপি কর্মীরা জিটি রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখানো শুরু করেছেন। তাঁদের দাবি, বিজেপি নেতাদের গাড়িতে হামলার ঘটনায় দোষীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে।