Advertisement
Advertisement
Purulia

বিয়ের অনুষ্ঠান বদলে গেল শোকে, পুরুলিয়ার দুর্ঘটনায় ৯ জনের মৃত্যুতে কান্নার রোল তিলাইটাড়ে

কোনও রকমে পালন হল নিয়মরক্ষার অনুষ্ঠান।

Marriage ceremony shrouded in sadness after 9 people died in accident in Purulia

পুরুলিয়া গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের মর্গে ভিড় নিহতদের আত্মীয়দের। ছবি: সুমিত বিশ্বাস

Published by: Arpan Das
  • Posted:June 20, 2025 11:29 pm
  • Updated:June 20, 2025 11:32 pm  

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: যখন শুক্রবার রাতে ৯ মৃতদেহ নিয়ে তিলাইটাড়, মুরু, রঘুনাথপুর গ্রামে সাত সাতটি অ্যাম্বুলেন্স ঢুকল, তখন শুধুই কান্নার রোল ঝাড়খণ্ডের সরাইকেলা-খরসোওয়া জেলার নিমডি থানার ওই তিন গ্রামে। এখানকার অধিকাংশ গ্রামের মানুষজনই চাষাবাদ করে দিন গুজরান করেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মুখে পুরুলিয়ার বলরামপুরের আদাবোনা গ্রামে একটি বরযাত্রীর অনুষ্ঠানে ওই তিন গ্রাম মিলিয়ে মোট ৯ জন গিয়েছিলেন। কিন্তু তাদের যে ফিরতে হবে নিথর হয়ে তা জানত না তাদের পরিবার। ফলে এই শোকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে বরের বাড়িতে বন্ধ হয়ে গেল প্রীতিভোজ। নিয়ম রক্ষায় রীতিটুকু পালন হল এই যা।

Advertisement

দুর্ঘটনার পরেই ঝাড়খণ্ডের ওই গ্রামগুলি থেকে বহু মানুষ বলরামপুর থানায় চলে আসেন। মৃত পরিবারের সদস্যরা শুধু নন। তাদের আত্মীয়-স্বজনরা গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের মর্গে ভিড় করেন। তাদের যাতে কোনরকম অসুবিধা না হয় তার সব রকম ব্যবস্থা করে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ। সাত সাতটি অ্যাম্বুলেন্স। সঙ্গে একটি বড় বাস দিয়ে মৃতদের পরিবারের সদস্যদেরকে তাদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে হাসপাতালেই তাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করে পুলিশ।

দুর্ঘটনার পরেই আনন্দ অনুষ্ঠান মুহূর্তেই বদলে যায় শোকে। যারা এদিন দেবেন মাহাতো গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের মর্গে বা বলরামপুর থানায় আসেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রীতিভোজের অনুষ্ঠানে যেতেন। কিন্তু বরের বাড়ি সরাইকেলা-খরসোওয়া জেলার ইচাগড়ে আর পা রাখা হয়নি তাদের। মৃত চন্দ্রমোহন মাহাতোর ছেলে লছমন মাহাতো নিমডি হাসপাতালের মেডিকেল টেকনিশিয়ান। তার কথায়, “আমি সকালে ঘরেই ছিলাম। হঠাৎ শুনতে পাই বাবাদের গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়েছে। সঙ্গে সঙ্গে বলরামপুর থানায় এসে দেখি বাবা আর নেই। বরযাত্রী গিয়ে যে এমন ঘটনা ঘটবে ভাবতেই পারছিনা।”

বর-কনে দু’পক্ষেরই আত্মীয় সঞ্জয় মাহাতো বলেন, “প্রীতিভোজের অনুষ্ঠান হয়নি। নিয়ম রক্ষায় কয়েকটি রীতি পালন হয়েছে এই যা। শোকের পরিবেশে কি আর প্রীতিভোজের অনুষ্ঠান হয়!” মৃত স্বপন মাহাতোর কাকা সুধীর মাহাতো বলেন, “একেবারে তরতাজা ছেলেটা, কি যে হয়ে গেল। কেন যে এমন হল মনকে বোঝাতে পারছি না। কত আনন্দে বরযাত্রীতে এসেছিল। এবার আমাকে ওর মৃতদেহ নিয়ে বাড়ি ঢুকতে হল।” মৃত শশাঙ্কশেখর-র কাকা তপন মাহাতো বলেন, “আমি ওষুধ দোকান করে কোনোভাবে দিন চালাই। ভাইপোর এমন অবস্থা হবে ভাবতে পারছি না। খুব খারাপ লাগছে। অনুষ্ঠান শোকে বদলে গেল।”

এদিন মধ্যরাতে যখন পুলিশের অ্যাম্বুলেন্স ঝাড়খণ্ডের গ্রাম ছাড়ছে। তখনও ভেসে আসছে মৃতের পরিজনদের ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement