Advertisement
Advertisement
পরিযায়ী শ্রমিক

পেটে খিদে, মাথার উপর প্রখর সূর্যের তাপ নিয়েই ১০০ কিমি পথ পেরলেন পরিযায়ী শ্রমিকরা

ঝাড়খণ্ডের ঝরিয়া থেকে হেঁটে ফিরলেন পুরুলিয়ার ৫ শ্রমিক।

Migrant labours in Purulia walked 100 KM from Jharia, Dhanbad to reach home

ফাইল ছবি

Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:April 16, 2020 12:48 pm
  • Updated:April 16, 2020 12:48 pm

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: পাঁচ, দশ কিলোমিটার নয়। বৈশাখের দাবদাহে প্রায় ১০০ কিমি পথ হেঁটে ঝাড়খণ্ডের ঝরিয়া থেকে অযোধ্যা পাহাড়তলিতে পৌঁছলেন বাংলার পাঁচ পরিযায়ী শ্রমিক। লকডাউনের মধ্যেও বাড়ি ফেরার মরিয়া চেষ্টায় সোমবার কাকভোরে ঝাড়খণ্ডের ধানবাদ জেলার ঝরিয়া শিল্পাঞ্চল থেকে তাঁরা রওনা দিয়েছিলেন। আন্তঃরাজ্য সীমানা সিল হয়ে যাওয়ায় পথে তাঁদের কম ঝক্কি পোহাতে হয়নি। তবুও হেঁটে মঙ্গলবার সন্ধে নামার আগেই পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়তলির আড়শা থানার ধানচাটানি গ্রামে পৌঁছে যান ৫ জন। দলে ছিলেন ১ মহিলাও। এমন অসময়ে এই অসাধ্য সাধন করার পরই তাঁদের শত কিমি পথ পেরনোর কাহিনি ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়ায়!

লকডাউনের শুরু থেকেই বাড়ি ফেরার তাগিদে দিল্লির আনন্দবিহার, মুম্বইয়ের বান্দ্রা, গুজরাটের সুরাটে পরিযায়ী শ্রমিকদের ভিড় দেখেছে দেশবাসী। ক্লান্ত, ক্ষুধার্ত শরীর নিয়ে রাজপথে মাইলের পর মাইল হাঁটতেও দেখা গিয়েছে। কেউ অসীম ধৈর্য আর অনন্ত পরিশ্রমের পর গন্তব্যে পৌঁছতে পেরেছেন, কেউ পারেননি।

Advertisement

[আরও পড়ুন: মাত্র ১ টাকায় ব্যাগ ভরতি বাজার! দুস্থদের জন্য অভিনব উদ্যোগ ক্লাব সদস্যদের]

যাঁরা পেরেছেন, সেই তালিকাতেই রয়েছেন সুশীল সরেন, স্ত্রী বেলমনি সরেন ও আরও তিন যুবক – সঞ্জয় মুর্মু, লাদেন মান্ডি, রাখাল সরেন। সকলে পুরুলিয়ার বাসিন্দা। ঝরিয়ার একটি ঠিকাদার সংস্থার অধীনে নির্মাণকাজে যুক্ত ছিলেন। ঝাড়খণ্ডের বোকারোয় গত ৫ এপ্রিল করোনা আক্রান্তের হদিশ পাওয়া যায়। তারপর থেকে ওই বিস্তীর্ণ এলাকায় রাস্তাঘাটে যাতায়ত একেবারেই বন্ধ করে দেয় পুলিশ। ফলে এই পাঁচ পরিযায়ী শ্রমিক ঠিকাদার সংস্থার অধীনে থাকলেও, ওই সংস্থা খাবার দেওয়া কার্যত বন্ধ করে দেয় বলে অভিযোগ। আরও অভিযোগ, বাজারে কিছু গেলেও পুলিশ লাঠিপেটা করত। ফলে অর্ধাহারেই দিন কাটছিল তাঁদের।

Advertisement

PRL-Migrant-Labours1

এদিকে লকডাউন বেড়ে যাবে শুনে চিন্তা আরও চেপে বসে। তাই খিদে পেটে না থাকতে পেরে হেঁটে বাড়ি শ্রেয় বলে মনে করেন তাঁরা। সঞ্জয় মুর্মুর কথায়, “কীভাবে যে প্রায় একশ কিমি রাস্তা এই দাবদাহের মধ্যে হেঁটে এলাম, তা বুঝতেই পারছি না। দিনের পর দিন খিদের যন্ত্রণা থেকেই বোধহয় এতটা রাস্তা ভাঙতে পেরেছি।”

[আরও পড়ুন: ‘পরে কিনব ক্রিকেট কিট’, স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে ত্রাণের জন্য সঞ্চিত অর্থ দান ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র]

প্রথমে ঝরিয়া থেকে ধানবাদ। সেখান থেকে চন্দনকেয়ারিতে আসার পর তাঁরা বিশ্রাম নেন। সেখানে তাঁদের খাবারের ব্যবস্থা করে এক মুখিয়া (গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান)। ঝাড়খণ্ড সীমানা পার হওয়ার সময় তাঁদের পুলিশ পথ আটকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছিল। সুস্থতার প্রমাণ দিয়ে তবে ছাড়া পেতে হয়েছে। তারপর পুরুলিয়া শহরে প্রবেশের পথে আবার পুলিশের মুখোমুখি। সেখানেও আরেকপ্রস্থ স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়। এলাকায় ফেরার পর প্রশাসনের নির্দেশ মত ওই পাঁচ পরিযায়ী শ্রমিক নিজেদের বাড়িতেই কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। কারও সঙ্গে কোনওরকম সংযোগ রাখছেন না আপাতত।

ছবি: সুনীতা সিং।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ