Advertisement
Advertisement
Kasi-Varanasi

অধরা ভিটেছাড়াদের ক্ষতিপূরণ! বারাণসীর ভোটে এবার ইস্যু কাশী বিশ্বনাথ করিডর

কাশী বিশ্বনাথ মন্দির করিডর নির্মাণের কাজ শুরু হয় পাঁচ বছর আগে। উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

Kashi Vishwanath corridor tunnel is one of key issues in Lok Sabha polls
Published by: Subhajit Mandal
  • Posted:May 23, 2024 3:17 pm
  • Updated:May 23, 2024 3:32 pm

বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, বারাণসী: কারও পৌষমাস, কারও সর্বনাশ।– বাংলার এই প্রবাদ ‘কাশী বিশ্বনাথ মন্দির করিডর’ নির্মাণ ইতিহাসে ছত্রে-ছত্রে লেখা থাকবে। কারণ, মন্দির চত্বরকে আধুনিকতার মোড়ক দিতে কয়েক হাজার পরিবারকে বাস্তুহারা হতে হয়েছে। বহু পরিবার ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত। আবার বহু পরিবার আর্থিক ক্ষতিপূরণ পেলেও বাপ-ঠাকুরদার ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ হয়েছে। মা, বাবা, স্ত্রী, সন্তানদের হাত ধরে নতুন জায়গায় নতুন পরিবেশে বাসা বাঁধতে হয়েছে। কারও আবার তাও জোটেনি। জীবনের শেষপ্রান্তে এসে নতুন করে জীবন সংগ্রাম শুরু করতে হয়েছে। যেহেতু করিডর নির্মাণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। তাই প্রবলভাবেই এর উপস্থিতি জানান দিচ্ছে বারাণসীর ভোট রাজনীতির ময়দানে। এর মধ্যে গলার কাঁটার মতো বিঁধে রয়েছে জ্ঞানবাপী বিতর্ক।

কাশী বিশ্বনাথ ধাম। সনাতন ধর্মের আঁতুড়ঘর। কথিত আছে, কয়েক হাজার বছর আগে বারাণসীর (Varanasi) এখানেই প্রথম সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষের পা পড়েছিল। দেশের সবচেয়ে পুরনো জনপদ। তারপর থেকে একটু একটু করে বসতি গড়ে তোলেন সনাতনীরা। এই বিশ্বনাথ মন্দিরকে (Kashi Vishwanath Temple) ঘিরে বহু বাঙালির বসবাস। মন্দিরের উল্টোদিকেই রয়েছে বাঙালিটোলা। কয়েক শতাব্দী ধরে বহু বাঙালি পরিবার বিশ্বনাথ ধামের মাটি আঁকড়ে পড়ে রয়েছে। কিন্তু আধুনিকতা বা উন্নয়নের চাপ ভিটেমাটি ছাড়তে বাধ্য করছে তাঁদের। যেমন স্বপন বন্দ্যোপাধায়। প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর অন্ধ ভক্ত। কাঁধের ঝোলা ব্যাগে সবসময় থাকে ইন্দিরার ছবি। কত বছর আগে বিশ্বনাথ ধামের মাটিতে বাসা বেঁধেছিলেন পূর্বপুরুষরা তা বলতে পারেন না। এক চিলতে ঘরে পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকতেন। ভাড়া দিতেন যৎসামান্য। সব ঠিকঠাকই চলছিল। আচমকা এক সরকারি ফতোয়া বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের উপর নামিয়ে এনেছে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। করিডরের জন্য ভিটেমাটি ছাড়তে হবে। যেহেতু ভাড়া থাকতেন তাই ক্ষতিপূরণের পরিমাণ সামান্য। জানালেন, “৭২ বছর বয়সে কোথায় যাব জানি না। ক্ষতিপূরণ বাবদ যে অর্থ পাব তা দিয়ে কিছুই হবে না।” যেমন রাজকিশোর গুপ্তা। কর্মজীবনের অনেকটা বছর কলকাতার মহেশতলায় কাটান। বিশ্বনাথ ধাম থেকে ঢিল-ছোড়া দূরত্বে তাঁর আদি বাড়ি ছিল। একদিন চোখের সামনে বুলডোজার দিয়ে সেই বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। সেদিন চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। এখন ভিটেমাটি ছেড়ে প্রায় ১৭ কিলোমিটার দূরে নতুন করে সংসার পেতেছেন। এরকম ঘটনা প্রচুর পাবেন। অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিশ্বনাথ ধাম ছাড়তে হয়েছে বলে জানান তিনি।

Advertisement

[আরও পড়ুন:   এনামুলের ভাইয়ের সংস্থার ৫০ লক্ষ টাকা দেবের ঝুলিতে! শুভেন্দুর অভিযোগে পালটা তৃণমূল সাংসদের ]

কাশী বিশ্বনাথ মন্দির করিডর নির্মাণের কাজ শুরু হয় পাঁচ বছর আগে। উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)। সরকারি বরাদ্দ ছিল ৩৩৯ কোটি টাকা। ৫ লক্ষ বর্গফুট জুড়ে নির্মিত হচ্ছে এই করিডর। এর জন্য ভাঙা পড়েছে প্রায় ১৪ হাজার বাড়ি, দোকান ও প্রচুর মন্দির। তবে মন্দিরগুলি ফের আগের মতো করেই নির্মাণ করে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। কিন্তু যাঁদের ভিটেমাটি গিয়েছে তাঁদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। পুনর্বাসনের জায়গা নিজেদেরই খুঁজে নিতে বলা হয়েছে। স্বভাবতই ভোট আসতেই রাজনীতির বাইরে থাকতে পারেননি মহাদেব। থাকবেনই বা কী করে? যখন একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশের প্রধানমন্ত্রী বিশ্বনাথ ধামে পুজো দিয়ে মনোনয়ন জমা দেন। যখন বিশ্বনাথ ধামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া গঙ্গা থেকে রাজনৈতিক বার্তা দেন প্রধানমন্ত্রী। স্বভাবতই বিরোধীরা ছেড়ে কথা বলছে না।
প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন কংগ্রেসের অজয় রাই। যিনি পূর্বাঞ্চলীয় বাহুবলী বলেই পরিচিত। তাঁর অভিযোগ, “প্রধানমন্ত্রী বিশ্বনাথ মন্দিরে পুজো দিয়ে মনোনয়ন দিলেন। তারপর গঙ্গায় প্রমোদ ভ্রমণ করলেন। কিন্তু একবারের জন্যও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের প্রসঙ্গে কিছু বললেন না। আমরা বারবার এই নিয়ে সরব হয়েছি।” আবার বিজেপির রাজ্যের মুখপাত্র অশোক পান্ডের দাবি, সকলেই কম করে ৮ গুণ ক্ষতিপূরণ পেয়েছে।

Advertisement

[আরও পড়ুন: ভোটের মরশুমে মিষ্টিতেও রাজনীতি! দেদার বিকোচ্ছে ঘাসফুল-পদ্মফুল-কাস্তে হাতুড়ি সন্দেশ]

আগের তুলনায় শহর পরিষ্কার হয়েছে। বাণিজ্য বেড়েছে। স্থানীয়দের হাতে অর্থ এসেছে। এগুলোও তো উন্নয়ন। তবে খুব সতর্ক হয়েও মুখ খুলে ফেললেন বারাণসী দক্ষিণের সাতবারের বিজেপি বিধায়ক প্রবাসী বাঙালি শ্যামদেব রায়চৌধুরী। অশীতিপর শ্যামদেববাবু জানান, “কয়েক বছর হল রাজনীতি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছি। কারণ এখন রাজনীতির প্রাঙ্গণে ধর্মের নামে অধর্ম হচ্ছে। সেবা কম, ব্যক্তি স্বার্থ বেশি। বাবা বিশ্বনাথ হয়তো আধুনিক হতে চাইছেন। তাই দ্রুত সব বদলে যাচ্ছে।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ