Advertisement
Advertisement

Breaking News

Lok Sabha 2024

‘লাখপতি দিদি’ থেকে লাখ টাকার অনুদান, লোকসভায় ফোকাসে নারীশক্তিই, কেন?

জাতীয় স্তর হোক বা রাজ্যস্তর, শাসক বিরোধী সব শিবির এখন বুঝে গিয়েছে, মহিলারা আর কারও মুখাপেক্ষী নন। তাঁরা স্বাধীন এবং স্বতন্ত্র। ভোটার হিসাবে নিজেদের স্বকীয়তা প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন।

Lok Sabha 2024: The woman factor in Indian politics, here is how trend changed
Published by: Subhajit Mandal
  • Posted:April 18, 2024 9:29 pm
  • Updated:April 18, 2024 10:43 pm

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মেয়েদের মন বোঝা, নয়কো সোজা, নয়কো সোজা। প্রেম-রোমান্টিকতা নিয়ে যাঁরা লেখালেখি করেন তাঁরা বলেন, নারীচরিত্র বেজায় জটিল। সেটা বোধহয় এদেশের রাজনেতারাও মানেন। নাহলে অধুনা ভারতীয় রাজনীতিতে মহিলা মন পেতে কেনই বা এত ছলাকলা? কেনই বা এত চেষ্টা-চরিত্র?

বেটি বাঁচাও-বেটি পড়াও, কন্যাশ্রী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, লাডলি বেহেনা, লড়কি হু লড় সকতি হু, মহালক্ষ্মী যোজনা। গত এক-দেড় দশকে ভারতীয় রাজনীতিতে সবচেয়ে আইকনিক কতগুলি স্লোগান এবং প্রকল্পের নাম। সবকটিই মহিলাকেন্দ্রিক। বিজেপি-তৃণমূল-কংগ্রেস, রাজনৈতিক দলগুলি আগামী দিনের জন্য যা যা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, তাতেও মহিলা ভোটারদের তুষ্ট করার একটা প্রবল প্রচেষ্টা লক্ষনীয়। বিজেপি যেমন বলছে, ক্ষমতায় এলে ৩ কোটি মহিলাকে ‘লাখপতি দিদি’ বানানো হবে। শিল্পাঞ্চলে মেয়েদের হস্টেল, ক্রেশ তৈরিতে জোর দেওয়া হবে, সংসদীয় রাজনীতিতে মেয়েদের অংশীদারিত্ব বাড়ানোর যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেটা কার্যকর হবে। অ্যানিমিয়া, স্তন ক্যানসার, জরায়ুর ক্যানসার সারাতে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হবে। কংগ্রেস আবার সরাসরি বলছে, ক্ষমতায় এলে গরিব পরিবারের মহিলাদের বার্ষিক ১ লক্ষ টাকা করে সাহায্য করা হবে। কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরিতে মহিলাদের জন্য ৫০ শতাংশ সংরক্ষণ, সমকাজে সমবেতন, সুস্থ কাজের পরিবেশ, শহর, মহানগরে মহিলাদের জন্য স্বাস্থ্যকর শৌচাগার তৈরি, কী নেই কংগ্রেসের ইস্তেহারে। তৃণমূলও জানিয়ে দিয়েছে, ক্ষমতায় এলে দেশজুড়ে চালু হবে কন্যাশ্রী, বাড়বে অনুদান। ৬০ বছরের পর বৃদ্ধভাতা, বছরে বিনামূল্যে ১০টি সিলিন্ডারের মতো প্রতিশ্রুতিও রয়েছে। বামেদের তরফেও জোর দেওয়া হয়েছে মেয়েদের আত্মনির্ভরতায়। মহিলা মন পেতে তাঁদের ঘোষণা, বাম দলগুলির সাংসদর নিজেদের সাংসদ তহবিলের এক তৃতীয়াংশ খরচ করবে নারী উন্নয়নে।  মোট কথা সব দলই চেষ্টা করছে, যেনতেন প্রকারে মহিলা ভোটারদের কাছে টানতে। সব রাজনৈতিক দল আলাদা আলাদা করে মহিলাকন্দ্রিক পরিকল্পনা শুরু করেছে। 

Advertisement

[আরও পড়ুন: সোমবার থেকেই অনির্দিষ্টকালের জন্য রাজ্যের স্কুলগুলোতে গরমের ছুটি, জারি বিজ্ঞপ্তি]

বস্তুত, শুরুতে ভারতীয় রাজনীতিতে মহিলাদের  অংশীদারিত্ব অনেক কম ছিল। স্বাধীনতার পর প্রায় চার-পাঁচ দশক মহিলা ভোটারদের নির্ণায়ক ফ্যাক্টর হিসাবে মনেই করেনি রাজনৈতিক দলগুলি। মনে করা হত, মহিলা ভোটাররা পরিচালিত হন পুরুষদের দ্বারাই। সমাজজীবনে মহিলারা যতটা অবহেলিত ছিলেন, রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও তেমনভাবেই উপেক্ষিত ছিলেন মহিলা ভোটাররা। তাছাড়া ভোটপ্রক্রিয়ায় মহিলাদের অংশগ্রহণের হারটাও ছিল উল্লেখযোগ্যভাবে কম। বস্তুত স্বাধীনতার পর দেশে পুরুষ ও মহিলাদের ভোটে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে পার্থক্য ছিল ১৫ শতাংশের বেশি। অর্থাৎ মহিলাদের থেকে প্রায় ১৫ শতাংশ বেশি পুরুষ ভোটপ্রক্রিয়ায় অংশ নিতেন। তাছাড়া যেসব মহিলা ভোটে অংশ নিতেন, তাঁরাও কতটা নিজেদের মতামত প্রকাশ করতেন, আর কতটা পুরুষ অভিভাবকের নির্দেশ মানতে বাধ্য হতেন, সেটাও বিবেচ্য বিষয়।

Advertisement

কিন্তু সময় যত এগিয়েছে, সেই প্রবণতাও তত বদলানো শুরু করেছে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বাড়ছে মহিলাদের অংশগ্রহণ। ১৯৬২ নির্বাচনে পুরুষ ও মহিলা ভোটারের পার্থক্য প্রায় ১৫ শতাংশ ছিল। সেটাই ২০২৪ সালে দেড় শতাংশে নেমে এসেছে। এ বার ভোটারের মোট সংখ্যা প্রায় ৯৬ কোটি ৮০ হাজার। এর মধ্যে সাড়ে ৪৯ কোটির কিছু বেশি পুরুষ এবং ৪৭ কোটির কিছু বেশি মহিলা। এক রিপোর্টে দাবি, এবার ভোট দিতে পারেন ৬৮ কোটি মানুষ। এর মধ্যে মহিলা হতে পারেন ৩৩ কোটি। অর্থাৎ ব্যবধান কমতে কমতে নেমেছে দুকোটিতে। ২০১৯-এ মহিলারা পুরুষদের ছাপিয়ে যাবেন, সে সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। অর্থাৎ দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় মহিলাদের অংশগ্রহণ হু হু করে বাড়ছে। তাছাড়া, ক্রমশ নারী শিক্ষার উন্নয়ন, চেতনার উন্নয়ন এবং কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি মহিলা ভোটারদের অন্যের উপর নির্ভরতা কমিয়ে স্বাধীনচেতা, স্বতন্ত্র নাগরিক হিসাবে তুলে ধরতে সাহায্য করেছে। আজকের মহিলা ভোটাররা আর পুরুষ দ্বারা পরিচালিত হন না। আজকের মহিলাদের একটা বড় অংশ নিজেদের ভোট নিজেদের মতামত অনুসারে দেন, নিজের ভালোমন্দ বুঝে দেন।

সাম্প্রতিক অতীতে বহু নির্বাচনেই দেখা গিয়েছে পুরুষ ভোটার এবং মহিলা ভোটারদের ভোটিং প্যাটার্ন বা ভোট দেওয়ার প্রবণতা আলাদা। অর্থাৎ পুরুষ এক ইস্যুতে ভোট দিচ্ছেন, মহিলা অন্য ইস্যুতে ভোট দিচ্ছেন। যার জলজ্যান্ত উদাহরণ, ২০২১ বাংলার নির্বাচন, যেখানে ‘বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়’ স্লোগান তুলে ভোট মঞ্চে ঝড় মমতার ঝড়। ২০২২ উত্তরপ্রদেশ নির্বাচন, যেখানে তিন তালাকের ধুয়ো তুলে মুসলিম মহিলাদের একটা অংশের ভোট নিজেদের ঝুলিতে টেনে নেয় বিজেপি। ২০২৩ মধ্যপ্রদেশ নির্বাচন, যেখানে ‘লাডলি বেহেনা’ প্রকল্প বিজেপির ডুবন্ত তরীকে তীরে এনে দাঁড় করায়। সেই হালহকিকত বুঝেই মহিলা ভোটারদের কাছে টানতে কাঠখড় পোড়ানো শুরু করেছে রাজনইতিক দলগুলি।

[আরও পড়ুন: উত্তরে প্রকৃতির দুই রূপ, হাঁসফাঁস গরমে পুড়ছে সমতল, তুষারের চাদরে ঢেকেছে সিকিম]

মহিলা ভোটারদের আলাদা করে টার্গেট করার এই প্রবণতা মূলত এই শতাব্দীতেই শুরু। তবে সেটা অন্য মাত্রা পেয়েছে মোদি (Narendra Modi) জমানায়। প্রধানমন্ত্রী মোদির বেটি বাঁচাও-বেটি পড়াও কর্মসূচি থেকে শুরু করে উজ্বলা যোজনা, তিন তালাক থেকে শুরু করে হিজাব বিতর্ক। সবটাই মূলত মহিলাদের টার্গেট করে করা। বস্তুত মোদি জমানায় যে ‘লাভার্থী’দের নিয়ে এত হইচই, সেই লাভার্থীদের একটা বড় অংশ এই মহিলারাই। এই মহিলারাই মোদির স্বতন্ত্র ভোটব্যাঙ্ক। এরাজ্যের ক্ষেত্রেও তেমন পুরুষ ভোটারদের থেকে মহিলাদের আলাদা করতে পেরেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের মতো প্রকল্প এরাজ্যেও মহিলাদের স্বতন্ত্র ভোটব্যাঙ্ক হিসাবে তুলে ধরেছে। এর সামাজিক সুবিধাও রয়েছে। মহিলারা আত্মনির্ভরতার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। কন্যাশ্রীর মতো প্রকল্প আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে স্বীকৃত।

জাতীয় স্তর হোক বা রাজ্যস্তর, শাসক বিরোধী সব শিবির এখন বুঝে গিয়েছে, মহিলারা আর কারও মুখাপেক্ষী নন। তাঁরা স্বাধীন এবং স্বতন্ত্র। দেশের মহিলারা ভোটার হিসাবে নিজেদের স্বকীয়তা প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন। যারা তাঁদের কথা বলবে, তাঁদের কথা ভাববে, শুধু তাঁরাই সমর্থন পাবে। আর সেকারণেই ২০২৪ লোকসভা (Lok Sabha 2024) নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের ফোকাসে মহিলারা। সব দল চাইছে নারী মন পেতে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ