সন্দীপ চক্রবর্তী,পুরী: পুরীর মন্দিরে প্রভু জগন্নাথের দর্শনের বিষয়টিও এবার নির্বাচনী ইস্যু হয়ে গেল। পান্ডাদের অত্যাচার, ভক্তদের প্রতি লাঞ্ছনা ও তাঁদের দুর্ভোগে ফেলার জন্য ওড়িশার শাসকদল বিজেডিকে দায়ী করল বিরোধী বিজেপি ও কংগ্রেস। এর কারণ, পুরী মন্দির পরিচালনা করতে যে কমিটি গড়া হয়েছে তার প্রধান হলেন জেলাশাসক। কার্যত এই জেলাশাসক ও সরকারি কর্মীদের মাধ্যমেই নবীন পট্টনায়কের সরকার মন্দির নিয়ন্ত্রণ করে।
[আরও পড়ুন-ভোটের মুখে ছত্তিশগড়ে ভয়াবহ মাও হামলা, নিহত বিজেপি বিধায়ক-সহ ৬]
দু’বছর আগে প্রভু জগন্নাথ দেবের নবকলেবরের পর থেকে মন্দিরের একের পর এক বিষয়ে সরকারের হস্তক্ষেপে ক্ষোভ বাড়ছে। বিজেপির বক্তব্য, রাজ্য সরকার মন্দির ও ভক্তদের সুবিধার ব্যাপারে আরও সতর্ক হলে বা নজর দিলে দেশ-বিদেশ থেকে আগত পুণ্যার্থীদের এত দুর্ভোগের শিকার হতে হত না। নির্বাচনী প্রচারে বিরোধীদের আরও অভিযোগ, প্রায়ই সুপ্রিম কোর্ট বা কটক হাইকোর্ট মন্দিরের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করলেও মন্দিরের পান্ডা, সেবায়েতরা তা গুরুত্ব না দিয়ে দৌরাত্ম্য বজায় রেখেছে। অথচ বিজেডি সরকার এই অনাচার রুখতে ব্যর্থ হচ্ছে।
[আরও পড়ুন- বিজেপি কখনও ১৫ লাখ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়নি, দাবি রাজনাথের]
সারা বছরই বাংলা থেকে বহু মানুষ পুরীতে জগন্নাথ দর্শন ও পুজো দিতে গিয়ে পান্ডারাজের শিকার হন। বিপুল টাকার বিনিময় ছাড়া সহজে পুজো দেওয়া সম্ভব হয় না বলে মন্দির কমিটির বিরুদ্ধে আঙুল তুলছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। সেবায়েতদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ও আদালতের রায়ের বিরোধিতার জন্য একাধিক দিন মন্দিরে সময়মতো প্রভুর ভোগ রান্না হয়নি। এমন ঘটনাকেও রাজনৈতিক হাতিয়ার করে বিজেডি সরকারের বিরুদ্ধে গলা চড়াচ্ছেন পুরীর বিজেপি প্রার্থী।
[আরও পড়ুন- রাহুল বা মমতা নয়, বিরোধীদের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এই নেতাকেই চাইছেন দেবেগৌড়া]
মন্দিরের পাশে চা-খাজার দোকানে রাজনীতির আলোচনায় অনেকেই ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন সেবায়েতদের বিরুদ্ধে। খাতায় কলমে ১২ হাজার মতো সেবায়েত। চায়ের দোকানে রাজু নায়েক ও শিবপ্রসাদ মিশ্র স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, সেবায়েতরা সবাই রাজনীতি করেন। সবাই নেতাকে ধরে রেখেছেন। আর তার জন্য বদনাম হচ্ছে জগন্নাথ মন্দিরের। এর ফলে তাঁদের ক্ষোভ জমেছে নবীন পট্টনায়ক সরকারের উপরেও। তবে বিজেডির মুখ্যমন্ত্রী নবীনের কাজের প্রশংসায় পঞ্চমুখও কেউ কেউ। তাহলে রাগ কেন? শিবপ্রসাদের জবাব, মন্দির ঘিরে কেন এত কড়াকড়ি করেছে সরকার? কেন প্রভুর নবকলেবর উৎসব আগাম জানিয়ে দেওয়া হল? আদালত যাই রায় দিক, রাজ্যের সরকার কেন প্রতিবাদ করবে না? প্রভু জগন্নাথকে কোনওভাবে বিচ্যুত করাকে মেনে নিচ্ছে না পুরীর মানুষ।
[আরও পড়ুন- সরকার গঠনে নগণ্য হয়েও গণতন্ত্রের উৎসবে উৎসাহী অসম-চিনা সম্প্রদায়]
সম্প্রতি পুরীর বিজেপি প্রার্থী সম্বিত পাত্র ভোট প্রচারে জগন্নাথের রেপ্লিকা ব্যবহার করেছিলেন। এতে বেদম খেপেছে কিছু মানুষ। প্রভুকে নিয়ে এভাবে রাজনীতি করায় সম্বিত পাত্রের বিরুদ্ধে সামনেই প্রতিবাদ দেখান তাঁরা। এরপর অবশ্য কোনও দল প্রচারের জন্য মন্দিরের ত্রিসীমানায় পা দেননি।